কবিতাঅনুসূর্যের গান
কবিজীবনানন্দ দাশ
কাব্যগ্রন্থসাতটি তারার তিমির
লিখার সময়১৯৪৮
4.1/5 - (12 votes)

কোন এক বিপদের গভীর বিস্ময়
আমাদের ডাকে।
পিছে পিছে ঢের লোক আসে।
আমরা সবের সাথে ভিড়ে চাপা প’ড়ে–তবু–
বেঁচে নিতে গিয়ে
জেনে বা না জেনে ঢের জনতাকে পিষে–ভিড় ক’রে
করুণার ছোট-বড় উপকন্ঠে–সাহসিক নগরে বন্দরে
সর্বদাই কোনো এক সমুদ্রের দিকে
সাগরের প্রায়াণে চলেছি।
সে সমুদ্র–
জীবন বা মরণের;
হয়তো বা আশার দাহনে উদ্‌বেল
যারা বড়ো, মহীয়ান–কোনো-এক উৎকন্ঠার পথে
তুব স্থির হয়ে চলে গেছ;
একদিন নচিকেতা ব’লে মনে হয় তাহাদের;
একদিন আত্তিলার মতো তবু;
আজ তারা জনতার মতো।
জীবনের অবিরাম বিশৃঙ্খলা স্থির করে দিতে গিয়ে তবু
সময়ের অনিবার উদ্ভাবনা এসে
যে সব শিশুকে যুবা–প্রবীণ করেছে তারপর,
তাদের চোখের আলো
অনাদির উত্তারিধকার থেকে, নিরবচ্ছিন্ন কাজ ক’রে,
তাদের প্রায়ান্ধ চোখে আজ রাতে লেন্‌স্‌,
সচেয়ে দেখে চারি দিকে অগণন মৃতদের চক্ষের ফস্‌ফোরসেন্‌স্‌।
তাদের সম্মুখে আলো
দীনাত্মা তারার
জ্যোৎস্নার মতন।
জীবনের শুভ অর্থ ভালো করে জীবনধারণ
অনুভব ক’রে তবু তাহাদের কেউ কেউ আজ রাতে যদি
অই জীবনের সব নিঃশেষ সীমা
সমুজ্জ্বল, স্বাভাবিক হয়ে যাবে মনে ভেবে–
স্মরনীয অঙ্কে কথা বলে,
তা হলে সে কবিতা কালিমা
মনে হবে আজ?
আজকে সমাজ
সকলের কাছ থেকে চেয়েছে কি নিরন্তর
তিমিরবিদারী অনুসূর্যের কাজ।

Share
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments