কবিতাভাষিত
কবিজীবনানন্দ দাশ
কাব্যগ্রন্থসাতটি তারার তিমির
লিখার সময়১৯৪৮
4.5/5 - (2 votes)

আমার এ-জীবনের ভোরবেলা থেকে—
সে সব ভূখণ্ড ছিলো চিরদিন কন্ঠস্থ আমার ;
একদিন অবশেষে টের পাওয়া গেল
আমাদের দু–জনার মতো দাঁড়াবার

তিল ধারণের স্থান তাহাদের বুকে
আমাদের পরিচিত পৃথিবীতে নেই ;
একদিন দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের সাথে পথ ধ’রে
ফিরে এসে বাংলার পথে দাঁড়াতেই

দেখা গেল পথে আছে,— ভোরবেলা ছড়ায়ে রয়েছে—
দক্ষিণ, পশ্চিম, পূর্ব, উত্তরের দিক
একটি কৃষাণ এসে বার–বার আমাকে চেনায় ;
আমার হৃদয় তবু অস্বাভাবিক।

পরিচয় নেই তার,— পরিচিত হয় না কখনো ;
রবিফসলের দেশে রৌদ্রের ভিতরে
মনে হয় সুচেতনা, তোমারে হৃদয়ে
ভুল এসে সত্যকে অনুভব করে।

সময়ের নিরুৎসুক জিনিসের মতো—
আমার নিকট থেকে আজো বিংশ শতাব্দীতে তোমাকে ছাড়ায়ে
ডান পথ খুলে দিলো ব’লে মনে হ’ল,
যখন প্রচুরভাবে চ’লে গেছি বাঁয়ে।

এ–রকম কেন হ’য়ে গেল তবে সব
বুদ্ধের মৃত্যুর পরে কল্কি এসে দাঁড়াবার আগে।
একবার নির্দেশের ভুল হ’য়ে গেলে
আবার বিশুদ্ধ হতে কতোদিন লাগে?

সমস্ত সকালবেলা এই কথা ভেবে পথ চ’লে
যখন পথের রেখা নগরীতে— দুপুরের শেষে
আমাকে উঠায়ে দিয়ে মৈথুনকালের সব সাপেদের মতো
মিশে গেল পরস্পরের কায়ক্লেশে,

তাকাতেই উঁচু-নিচু দেয়ালের অন্তরঙ্গ দেশ দেখা গেল ;
কারু তরে সর্বদাই ভীত হয়ে আছে এক তিল ;—
এ-রকম মনে হ’লো বিদ্যুতের মতন সহসা;
সাগর—সাগর সেকি—অথবা কপিল?

এ-রকম অনুভব আমাকে ধারণ ক’রে চুপে
স্থির ক’রে রেখে গেল পথের কিনারে ;
আকাশ নিজের স্থানে নেই মনে হল ;
আকাশকুসুম তবু ফুটেছে পাপড়ি অনুসারে।

তবুও পৃথিবী নিজে অভিভুট ব’লে
ইহাদেরো নেই কোনো ত্রাণ :
সকলি মহৎ হতে চেয়ে শুধু সুবিধা হতেছে ;
সকলি সুবিধা হতে গিয়ে তবু প্রধূমায়মান।

বির্তক আমার মতো মানুষের তরে নয় তবু ;
আবেগ কি ক্রমেই আরেক তিল বিশোধিত হয়?
নিপ্পন ভীষণ লিপি লিখে দিলো সূর্যদেবীকে ;
সৌরকরময় চীন, রুশের হৃদয়।

Share
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments