বাংলা কবিতা, প্যান্ডেমিকের কবিতা- গার্মেন্টস কর্মীর জুতো। কবিতা, কবি সোয়েব মাহমুদ - কবিতা অঞ্চল
কবিতাপ্যান্ডেমিকের কবিতা- গার্মেন্টস কর্মীর জুতো।
কবিসোয়েব মাহমুদ
কাব্যগ্রন্থকবিতা অঞ্চল - ১
উৎসর্গগার্মেন্টস শ্রমিক যারা বারবার আগুনে পুড়ে, অধিকারহীন যাপিত জীবনে সচল রাখছে চুতিয়া দেশের ছেনাল অর্থনীতি
লিখার স্থানঢাকা
লিখার সময়বিশই জুন, দুইহাজার বিশ
3.3/5 - (3 votes)

রংপুরের মেয়ে, গার্মেন্টস কর্মী মৌসুমী আক্তার।
এটা গল্প নয়,
ঈদের পরদিন সবেমাত্র ঘুম থেকে উঠে আমি গল্প বলতে আসিনি,
আমি আপনাদের দৃষ্টি পৃথিবীর উন্নত,
শুয়োর প্রজননে গত দুইদশক শীর্ষ স্থান দখল করা
সোনার বাংলা,
চিকিৎসা খাতে সর্বোচ্চ সুবিধা দেয়া রাষ্ট্র,
গনতন্ত্রের মা খ্যাত গনতান্ত্রিক নিরোধের
রাষ্ট্র থেকে সরাতে
কোন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নিয়ে আসিনি।
আমি শুধু এসেছি এই দুপুরে রংপুরের মেয়ে মৌসুমী আক্তারের কথা বলতে।
সময় আছে ঈদ পরবর্তী করোনা ফেষ্টিভাল,
তুরস্কের প্রেসিডেন্টের তার একজন জনগনের প্রতি
কমিটমেন্ট তত্ত্ব ছেড়ে কথা শোনার?

আমি দশমিনিটের স্কুলে ইংরেজি শিখছি সদ্য তাই বাংলাটা ঠিক আসেনা।
শুনুন
রংপুরের মেয়ে মৌসুমী আক্তার
জ্বর জ্বর অনুভূতি নিয়ে বাড়ি ফিরছিলো ট্রাকের পেছনে,
গার্মেন্টসে ৪ মাসের বকেয়া বেতন পাওয়া যাবে
আশ্বাসে ফিরেছিলে কর্মক্ষেত্রে।
বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা, ঈদ সামনে –
গার্মেন্টসে কাজ চলছিলো
শুধু বেতন পাচ্ছিলো না –
সাবেক নগরপিতার স্ত্রী
হাপিশ করেছে সরকার সহ সরকারী প্রণোদনার ৫০০০ কোটি টাকা।

জ্বর বাড়ছিলো জ্বর থামছিলো না
গলা টিপে ধরছিলো,
লোকে বললো নমুনা পরীক্ষা করতে কিন্তু
সরকার মহাশয় সে সুযোগ দেয়নি সর্বস্তরে।
অগত্যা বাড়ি ফেরা
সরকার ব্যক্তিগত গাড়িতে বাড়ি ফেরার সুযোগ দিলেও
অপদার্থ মৌসুমী আক্তার ব্যক্তিগত গাড়ি কিনতে পারেনি,
ট্রাক হলো সম্বল,
বাড়ি ফিরবার পথে, ট্রাকের ভেতর জীবন
জীবনের ভেতর মৃত্যু – ট্রাক থামে,
তাজহাটে ট্রাক-ড্রাইভার রেখে যায় লাশ রাস্তায়-
পুলিশ অজ্ঞাতনামা লাশ হিসেবে রাখে হাসপাতালের মর্গে ।

একদিন পর স্থানীয় চেয়ারম্যান সহ বাবা আসে
বাবা স্তব্ধ –
চেয়ারম্যান আবার শ্রমিক নেতার লোক –
জনগন জোগার করে ঘোষণা দেয়
লাশ গ্রামে নেয়া যাবে না
পুড়িয়ে ফেলতে হবে এখনই –
রংপুরের মেয়ে মৌসুমী আক্তার টি আর পির
বাজারে দাগ ফেলেনা ,
চেয়ারম্যান এখানে ঈশ্বর থেকে ক্ষমতাবান
বাবা- নিরুপায় বাবা হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীকে দেয় ঘুষ
আশ্বাস পায় মেয়ে তার পাবে মাটি –
হঠাৎ খবর আসে দুইদিন পর একটা লাশ ভাসছে নদীতে ,
বাবা দৌড়ে যায় – রংপুরের মেয়ে মৌসুমী আক্তার ।

প্রগতিশীল চুতিয়াদের দেয়া সেলাই দিদিমনি ডাকনামের
মৌসুমী আক্তার ভাসছে নদীতে –
উদ্ধারকারী পুলিশের চোখে কান্নার দমক।
হাসপাতালের ডাক্তাররা নির্বাক নিস্তব্ধ
অথচ চেয়ারম্যান ঈশ্বর থেকে শক্তিশালী
বাবা পচে গলে যাওয়া রংপুরের মেয়ে
মৌসুমী আক্তারকে বুকে নিয়ে বসে আছে
৫০০০টাকা ঘুষ দিয়েও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে
মারা যাওয়া মেয়ে মাটি পায় নি মাটি।
একটা দূর্নীতিবাজ সরকারের তীব্র নিন্দা জানাতে প্রকৃতি বেছে নিলো
মৌসুমী আক্তার –
ট্রাকে লাশ, রাস্তায় –
তারপর অজ্ঞাত পরিচয়ে মর্গ হয়ে নদীতে
ও ভেসে যেতে পারতো –
বাবা কাঁদতো
মাঝেমধ্যে ঘুষ দেয়া কর্মচারীকে জিজ্ঞেস করতো
আমার মেয়েটার কবর কোথায় দেখাবেন?
অন্য কবর দেখিয়ে দিতো হয়তো –
নাহ প্রকৃতি সে সুযোগ দেয়নি।।

আমি রংপুরের মেয়ে মৌসুমী আক্তারের জন্য
সদ্য ঘুমভাঙা চোখে
কাঁদতেও পারছিনা –
আমি নির্বাক হয়ে আছি –
আমার গলা চেপে আসছে
এত এত উন্নয়ন আমি নিতে পারছিনা
আমি হয়ত পাগল হয়ে যাচ্ছি / অথচ সাহস পাচ্ছি না
একটু সাহস জন্মালে বুকের ভেতর
আমি প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির সামনে দাড়িয়ে
ধ্যাত উন্নত রাষ্ট্রের সৎ ধ্যাত্তেরিকা বাল,
প্রেসিডেন্ট তুমি কোথায়?
তোমার চোখের সামনে আমি আগুন লাগাতে লাগাতে নিজের শরীর
লিখতে চাই –
রংপুরের মেয়ে মৌসুমী আক্তার খালি পা’য়ে
শুয়ে আছে
একজোড়া জুতা হবে জুতা –

অধিকার একটা কালো গরুর মতন ভেঙে পরছে
সবুজ ঘাসের উপর।
একজোড়া জুতা হবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী –
জুতাজোড়া পেলে মৌসুমী আক্তার অন্তত
হেঁটে পার হবে এই অভিশপ্ত ভুমি!
পার হবে আপনাদের উন্নয়ন রুপকথার সাঁকো।

( শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চেয়ারম্যান এখনও রাজি নয় লাশ দাফনের অনুমতি দিতে)

Share
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments