মলিন আজান শুনে জেগে ওঠে পোলাটার ভাতারখাগি মা, শরীর সয় না আর, ভরা অভাবের মাস এখন কার্তিক। সবার হাড়িতে টান। সাত গ্রাম ঘুরে তবু মেলে নাকো ভিখ- ক্ষীনকন্ঠ মুয়াজ্জিন, দুবেলা জোটে না তারো।অভাবের সীমা
গাঙের ভাঙন হয়ে বেড়ে চলে জমিহারা কৃষকের মতো। গঞ্জে বাতাসে ওড়ে শাদা কালো মনোরম ভিনদেশী নোট, সহ্যের বলদ দুটি খোঁড়ায় সে-ভারে ন্যুব্জ, সয় না সে-চোট। জীবনের হাড়ে মাংশে বাড়ে এক কালো রোগ, কালো এক ক্ষত।
কেন এ-বিহান আসে? খুপড়ির অন্ধকারে কেন আসে ভোর? ঘুম তো মরন, সেই মরনের মধ্যে থাকি, টাটায় না খিদে, অন্ধকার, সেই ভালো, অন্ধকারে বেঁচে-থাকা সেই তো সুবিধে। সকলি আন্ধার যার একটু সলোকে কিবা কাটে তার ঘোর!
থাকুক আন্ধার রাত তামাম দুনিয়া ঘিরে, না হোক সকাল। উদোম গতরখানা কী বস্ত্রে লুকোই দিনে, কিসের আড়ালে? কী দিয়ে জুড়োই জ্বালা, নিভাই জঠর? জীবনের শূন্য ডালে কী কোরে ফুটাই পাতা? চারিদিক ঘিরে আসে সর্বনাশা কাল।
মুয়াজ্জিন কাকে ডাকে? কার হয়ে সাক্ষী দেয় না-বোঝা ভাষায়? কিছুই বোঝে না সে যে, ম্লান কন্ঠে ডাকে শুধু আল্লাহ মহান, পাঁজরের হাড়ে তার শব্দহীন বেজে ওঠে ক্ষুধার আজান- রাত্রি শেষ। পাখি ডাকে। আরেক আঁধার তবু পৃথিবী ভাসায়।