কবিতাহোয়ান রামোন হিমেনেথ—এর কবিতা ২
কবিপুস্কর দাশগুপ্ত
4/5 - (1 vote)

১৬.

গাছের শীর্ষ ঘিরে
একটি উঁচু গাছের
শীর্ষ ঘিরে
উড়ছে আমার স্বপ্নগুলি সব।
স্বচ্ছ আলোর মুকুট-পরা
কপোত ওরা
উড়তে উড়তে ছড়িয়ে দিচ্ছে গান।
একটি গাছের শীর্ষ থেকে
কেমন যাওয়া-আসা।
আমায় এমন সোনার জালে জড়িয়ে ফেলে ওরা !
১৭. আলো আর জল
মাথার ওপরে আলো – স্বর্ণময়, কমলা, সবুজ –
কুহেলি মেঘের মাঝখানে ।
পত্রহীন হে বৃক্ষেরা,
জলের গভীরে মূল
শাখাগুলি ছড়ানো আলোয় !
নিচে, জল, — সবুজ, কমলা, স্বর্ণময় —
কুহেলি ধোঁয়ার মাঝখানে।
কুহেলি ধোঁয়ার মাঝে — কুহেলি মেঘের মাঝখানে
আলো আর জল — কীযে জাদু !—সহসা মিলায়।
১৮.
বিকেলের পথগুলো সব
একাকার হয়ে যায় রাতে।
সংগোপন ওপথ ধরেই
প্রেমিকা, তোমার কাছে যাবো।
ওপথে তোমার কাছে যাবো,
পর্বতের আলোর মতন,
সমুদ্রের হাওয়ার মতন,
কুসুমের গন্ধের মতন।
১৯.শীতের দৃশ্য: তুষার
কোথায় কোথায় আহা সব রঙ লুকিয়েছে তারা
কালো আর সাদা এই পরিম্লান দিনে ?
পাতাগুলি কালো ; জল, ছাইরঙ ; আকাশ ও মাটি
মৃত্যুর মতন এক শাদা আর কালো বিবর্ণতা ;
আর এই বিষণ্ণ শহর
শুধু এক পুরনো খোদাই-করা রোমান্টিক ছবি।
পথচারী মানুষেরা কালো ;
কালো, ঐ ভয়ার্ত পাখিটি
তীরের গতিতে যেবা উড়ে যায় বাগান পেরিয়ে ,
এমনকী স্তব্ধতাও বিবর্ণ , কঠিন।
সন্ধ্যা নামে। আকাশে
কোথাও কোনো কোমলতা নেই। আর এই সূর্যাস্তে এখন
নীলাভ হলুদ এক আলো, খুবই ম্লান
কিংবা ঠিক আলো নয়। দূরে গ্রাম
জংধরা লোহার তৈরী।
রাত্রি আসে। যেন
এক শবযাত্রা। সবকিছু শোকার্ত,
শীতল, কোথাও তারারা নেই, শাদা
আর কালো এই দিনের মতন : শাদা আর কালো।
২০. নব বসন্ত
রক্তিম জলের বুকে
একজোড়া রাজহাঁস পাশাপাশি কাটছে সাঁতার…
যন্ত্রণা সাঁতার কাটে শোণিতে আমার।
রক্তিম বাতাসে
পাশাপাশি একজোড়া গোলাপ ব্যাকুল…
যন্ত্রণা ব্যাকুল হল শোণিতে আমার।
রক্তিম আকাশে
পাশপাশি একজোড়া শ্যামাপাখি শিস দিয়ে ওঠে…
যন্ত্রণাও শিস দেয় শোণিতে আমার।
২১.
আমার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছো তুমি
অথচ আমিযে তোমার কথাই ভেবে
তোমাকেই যাই ভুলে।
২২. পরম গোলাপ
তুলে নাও ওকে ! তোল ওকে , ওই যে গোলাপ !
না না, ওতো সূর্য !
অগ্নির গোলাপ,
স্বর্ণের গোলাপ,
পরম গোলাপ !
না না, ওতো সূর্য !
দীপ্তির গোলাপ,
স্বপ্বের গোলাপ,
পরম গোলাপ।
না না, ওতো সূর্য !
তুলে নাও ওকে ! তোল ওকে , ওই যে গোলাপ !
২৩. দূরের সমুদ্র
ঝর্ণার গান ক্রমশ মিলিয়ে যায়।
পথগুলি সব জেগে ওঠে একে একে…
রূপোলি সাগর, ভোরের সাগর, তুমি
কিযে পবিত্র ঝাউয়ের বনের ফাঁকে !
দক্ষিণ হাওয়া, এলে তুমি ধ্বনিময়
রৌত্রের সাথে ? দৃষ্টি হারালো পথ…
দুপুরে সাগর, সোনালি সাগর, তুমি
কিযে উচ্ছল ঝাউবন পার হয়ে !
সবুজ পাখিটি বলছে অজানা কিছু…
হৃদয় আমার পথ ধরে চলে যায়…
বিকেলে সাগর, গোলাপী সাগর, তুমি
কিযে প্রশান্ত ঝাউয়ের বনের ফাঁকে !
২৪. প্রাক্-বসন্ত
নদীর বুকে বৃষ্টিধারা ঝরে…
সবুজ ঐ নদীর পারে
গন্ধময় নলের বন
বৃষ্টিপাতে কাঁপে…
কেমন এক আকুল ঘ্রাণ
শীতল পাপড়ির !
নদীর বুকে বৃষ্টিধারা ঝরে…
আমার এই নৌকাখানি
স্বপ্ন যেন, স্বপ্নে গড়া
আবছা পৃথিবীতে। ওগো সবুজ তীর
হালছাড়া হে নৌকা ওগো
শীতল অন্তর !
নদীর বুকে বৃষ্টিধারা ঝরে…
২৫. রাত্রি
আমার অশ্রুর ফোঁটা এবং তারকা
ছুঁলো পরস্পরে ; মুহূর্তেই
দুয়ে মিলে হয়ে গেলো একটি অশ্রুর ফোঁটা
দুয়ে মিলে হয়ে গেলো একটি তারকা।
আমিতো হলাম অন্ধ, এবং আকাশ
অন্ধ হলো প্রেমে।
যাকিছু — সমস্ত — হোল
তারকার মর্মব্যথা, অশ্রুর আলোক।

২৭.

ছোট্ট সবুজ মেয়ে
সবুজ মেয়েটি। তার
সবুজ দুচোখ, সবুজ চুলের বেণী।
তার বাগানের গোলাপের কুঁড়ি
সেতো লাল নয় সেতো শাদা নয় সবুজ সবুজ সেযে।
সে বেরিয়ে এলো সবুজ হাওয়ায় !
পৃথিবী সবুজ হল।
উজ্জ্বল তার রেশমী পোষাক
সেতো লাল নয় সেতো নীল নয় সবুজ সবুজ সেযে।
সে বেরিয়ে এলো সবুজ সাগরে !
আকাশ সবুজ হোল।
আমার জীবন বারবার তাকে
খুলে দেয় এক ছোট্ট সবুজ দ্বার।

২৮.

কবিতা ; শিশিরবিন্দু
প্রতিটি ঊযার, শিশু
প্রতিটি রাত্রির ; প্রথম ফুলের ঐ
কোমল সত্যের ঊর্ধ্বে
সতেজ, নির্মল সত্য অমল
দূরতম নক্ষত্রপুঞ্জের !
শিশির, কবিতা ;
প্রত্যূষের ফোঁটাগুলি স্বর্গ থেকে পৃথিবীর বুকে !।

Share
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments