কবিতাহোয়ান রামোন হিমেনেথ—এর কবিতা
কবিপুস্কর দাশগুপ্ত
সম্পৃক্ততাঅনুবাদ,
4.5/5 - (2 votes)

১.

কেউতো ছিল না। জল।— কেউ নয় ?
জল তবে কেউ নয় ? — কেউ
নয়। আছে ফুল। — কেউ নয় ?
ফুল তবে কেউ নয় ? — কেউ নয়।
ছিল হাওয়া। — কেউ নয়?
কেউ নয় হাওয়া ? – কেউ
নয়। মুগ্ধমায়া। – কেউ নয় ?
মুগ্ধমায়া কেউ নয় তবে

২.

সঙ্গীত

সহসা, ঝর্ণার মতো
বিদীর্ণ বুকের থেকে
আবেগ-উচ্ছল ধারা ভেদ করে ছায়া —
একটি নারীর মতো
বারান্দার জানলাগুলি খুলবে যে দীর্ঘশ্বাস ফেলে, তেমনি
নগ্ন সে যে, নক্ষত্রপুঞ্জের দিকে চেয়ে থাকে
অকারণ মৃত্যুর ইচ্ছায়,
যেই মৃত্যু হবে তার উন্মাদনা, অনন্ত জীবন।
অথচ সে ফিরে আর আসেনা আবার,
—নারী কিংবা জল —
যদিও সে আমাদেরই গভীরে রয়েছে, উচ্ছ্বসিত,
সত্য ও অলীক
স্তব্ধ হতে পারে না, কখনো।

৩.

— দাঁড়াও, দাঁড়াও আলো
— আর আমি ছুটে যাই, উদগ্রীব, উন্মাদ —
দাঁড়াও, দাঁড়াও আলো !
— সে দাঁড়ায়, আর যেই আমি
ছুঁতে যাই সীমারেখা তার, অমনি সে আঁধার,
শীতল। —
দাঁড়াও, দাঁড়াও, আলো !
—আর আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়ি শিশুর মতন
একা একা কাঁদি, তাকে দেখিনা যখন;
দাঁড়াও… দাঁড়াও… আলো। —

৪.

আমি জানি কাণ্ড আমি
অনন্ত বৃক্ষের।
আমি জানি আমার রক্তের মধ্যে
বাঁচিয়ে রেখেছি আমি তারাদের।
প্রতিটি উজ্জ্বল স্বপ্ন
আমারই নিজস্ব পাখি…
আমি জানি মৃত্যুর কুঠার
আঘাতে লুটিয়ে দেবে আমাকে যখন
ভেঙে পড়বে আকাশ তখনি ।

৫.

ক্ষণিক

হারিয়ে ফেলছি, হারিয়ে ফেলছি, হারিয়ে ফেলছি তাকে !
… সেতো চলে গেল !
আর ক্ষণিকের সাথে
হারিয়ে ফেলেছি অনন্তকাল আমি ।

৬.

সঙ্গীত

শান্ত রাত
পবিত্র কোমল সুর, বৃষ্টিধারা তুমি
বাঁচিয়ে রেখেছো ঐ তারাদের
– যেন পদ্মগুলি এক অতল আধারে।

৭.

ভোর

ঠান্ডার শুরু: মোরগ ডাকছে।
বজ্র জ্যোত্স্না: শিশুটি কাঁদছে।
নির্জন পথ: কুকুর ছুটছে।
রাত্রি এখনো: মানুষ ভাবছে।

৮.

কুয়োয় নুড়ির মতো
পড়ে আছে আমার হৃদয়, ঠিক তার
নিচে আর ওপরে আকাশ।

৯.

মোগেরে ভোর
দেখা দেয় সঙ্গীহীন কালো ষাঁড়, উজ্জ্বল, সু্ন্দর,
শীতল সবুজ ভোরে, উঁচু নীল পর্বতচূড়ায়
ডেকে ওঠে দক্ষিণ – উত্তরে , প্রকাণ্ড মাথায় তার
ঠেলে দেয় ক্রমশ পেছনে
আকাশ, প্রাগাঢ় লাল, তখনো বিরাট কটি
তারকায় ঢাকা।
—আতঙ্কিত বিপুল নির্জন;
অন্তহীন নীরবতা সহসা ঘনায়।
ষাঁড় — ভগ্ন শিলাখণ্ড — ঢুকে পড়ে
পাতায় আবৃত গিরিপথে ।
সে ছাড়া থাকেনা কিছু,
চলে যায় ? সমন্ত আঁধার,
তখন বেরিয়ে আসে! শাদা আর গোলাপী সজ্জায় সাজা, ওই আলো।

১০.

স্তব্দ হলে গান
কী হয় সুরের;
যে-বাতাস থেমে যায় তার,
যে-আলোক নিভে যায়
তার ?
বল, মৃত্যু, নিস্তব্ধতা প্রশান্তি ও অন্ধকার ছাড়া
কীবা তুমি আর ?

১১.

শাদা মেঘ,
ভাঙা ডানা — কার ?
পৌঁছাতে সে পারেনি — কোথায় ?

১২.

ঘুম যেন সেতু
যোগাযোগ আজ আর আগামী কালের।
নীচে তার, স্বপ্নের মতন,
বয়ে যায় জলধারা, ভেসে যায় হৃদয় আমার।

১৩.

শুধু ঘন্টাধ্বনি আর পাখি এক শান্তিভ্ঙ্গ করে…
যেনবা দুজনে ওরা কথা বলে পশ্চিমের দিগন্ত- সীমায়
স্তব্ধতা সোনায় গড়া । বিকেল বেলাটা যেন স্ফটিকে নির্মিত ।
সহসা শুদ্ধতা এসে দোলায় সুস্নিগ্ধ বৃক্ষগুলি
সমস্ত পেরিয়ে এক স্বচ্ছধারা নদী স্বপ্ন দেখে,
আর সে ছড়িয়ে মুক্তো ছুটে যায় অসীমের দিকে …
নির্জনতা ! নির্জনতা ! সবকিছু উজ্জ্বল, নীরব…
শুধু ঘন্টাধ্বনি আর পাখি এক শান্তিভঙ্গ করে …
প্রেম বহু দূরবর্তী… শান্ত, উদাসীন,
হৃদয় সম্পূর্ণ মুক্ত; বিষণ্ণ বা উল্লসিত নয়;
তাকে আলোড়িত করে রঙ, হাওয়া, গন্ধ আর গান…
সে যেন সাঁতার কাটে চেতনায় অবারিত হ্রদে।
শুধু ঘন্টাধ্বনি আর পাখি এক শান্তি ভঙ্গ করে …
মনে হয় করতলে আমি অনন্তকে ধরে রাখতে পারি ।

১৪.

জন্মাবো আবার
শিলা হয়ে জন্মাবো আবার
আর তখনো তো আমি ভালোবাসব তোমাকেই , নারী।
হাওয়া হয়ে জন্মাবো আমার,
আর তখনো তো আমি ভালোবাসব তোমাকেই , নারী।
ঢেউ হয়ে জন্মাবো আবার,
আর তখনো তো আমি ভালোবোসব তোমাকেই , নারী।
শিখা হয়ে জন্মাবো আবার,
আর তখনো তো আমি ভালোবোসব তোমাকেই , নারী।
নর হয়ে জন্মাবো আবার,
আর তখনো তো আমি ভালোবাসব তোমাকেই , নারী।

১৫.

আমি নই আমি।
আমি সে, যে
আমার অলক্ষ্যে হাঁটে আমার পাশেই ,
যাকে আমি কখনোবা দেখতে চাই ,
যাকে আমি কখনোবা ভুলে যাই।
সে থাকে নীরব, শান্ত যে সময়ে আমি কথা বলি ;
সে বিনয়ে ক্ষমা করে যে সময়ে আমি ঘৃণা করি ;
সে যায় যেখানে আমি নেই ,
সে থাকবে দাঁড়িয়ে ঋজু মৃত্যু হবে যখন আমার।

Share
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments