কবিতারোদনরূপসী
কবিবুদ্ধদেব বসু
5/5 - (1 vote)

কে তুমি, সুন্দরী, যার বিন্দু-বিন্দু অশ্রু ঝ’রে ভেসে যায়
পদ্ম হ’য়ে নদীর সচ্ছল স্রোতে অবিরল ?
কোন প্লুত নীলিমায় লিপ্ত তুমি ? কোন পুণ্যজল
তোমার লাবণ্যসার আপনার তরঙ্গে মেশায় ?
রোদনরূপসী, তুমি কেন কাঁদো ? অশ্রু কেন পদ্ম হ’য়ে ফোটে ?
কেন তার হিরণ্ময়ী অভিমান দিগন্তেও হয় না বিলীন ?
কোন মন্ত্রে এই দিন অফুরান ? মহাকবি দেন নি উত্তর,
শুধু বলে গিয়েছেন দেবতারা তোমার অধীন ।

দুঃসাহস –-তবু বলি । মনে হয় কোনো -এক দূর জন্মান্তরে
তুমি ছিলে আমার একান্ত চেনা— অন্তরঙ্গ, অবিস্মরণীয় ।
সেদিন আমার কান্না তুমি কেঁদেছিলে ! আমিও জলের কলস্বরে
কান পেতে শুনেছি, কেমনে ধায় তোমার আজ্ঞায় মুগ্ধ পঞ্চভূত,
যুদ্ধ ভুলে , ছন্দের অঞ্জলি হটয়ে রূপ নেয় আকাশে আলোকে ।
অগাধ ঐশ্বর্য ছিল — তখন অমল এক বিশ্ব ছিল । সেদিন তোমার,

ছিল ঋতু, দ্যুলোক, সবিতা : তবু ছিল, আমাকে তোমার প্রয়োজন ।
মনে পড়ে সেই দূর স্বপ্নলোকে, আদিম ঊষার লগ্নে
আমি তা-ই তোমাকে দিয়েছিলাম, যা তোমার তখন ছিল না জানা —
যা ছিল না আলোর প্লাবনে কিংবা জলের হিল্লোলে —
অভাব-বিচ্ছেদবোধ-স্বপ্ন-স্মৃতি-হৃদয়স্পন্দন !
সেই থেকে নিখিলের রাজ্ঞী তুমি, ইন্দ্র হল অকস্মাৎ অসহায়,
স্বর্গের ছলনাপ্রান্তে সে-অশ্রুপুলক চলে অন্তহীন ;—
শুধু আমি মাঝে-মাঝে ভুলে যাই, খ’সে পড়ি যন্ত্রণার অন্ধকূপে,
শূলবিদ্ধ শূকরের মতো নড়ি, জীবনের অজ্ঞান চেষ্টায় ।

Share
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments