Review This Poem

আমি এখন আকাশে থাকি তারা হয়ে
এক সময় ছিলাম পৃথিবীতে মেয়ে হয়ে।
অকালে আমার আয়ু গেছে ফুরিয়ে
ভেবেছিলাম জীবনে অনেক বড়ো হয়ে মানুষের মতো মানুষ হয়ে বাঁচব সমাজে।
কিন্তু হয়নি সেই সাধ পূরণ
তার আগেই শেষ হয়ে গেল আমার জীবন।
পাড়ার লোকেরা বলতো, আমি নাকি খুব সুন্দর দেখতে।
আমার বাবা মায়ের কাছে হামেশাই এসে পাড়ার নানান লোকেরা বলতো,
মেয়ে তো বড়ো হচ্ছে
এবার বিয়ে দিয়ে দাও
অত পড়াশোনা শিখে কী হবে
সেই তো শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে খুন্তি নাড়বে…
ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমার মা তখন বলতো, ওর বাবার ইচ্ছা মেয়ে আগে লেখাপড়া শিখে ভালো চাকরি করুক তারপর বিয়ে করবে…
এত অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে লাভ নেই, আগে রোজগার করুক তারপর বিয়ের চিন্তা…ইত্যাদি ইত্যাদি।
বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারিনি আমি।
একদিন ফিরছিলাম সন্ধ্যা সাতটার পর বাড়ির পথে, মস্টারমশায়ের কাছ থেকে পড়ে।
আমার বয়স তখন ছিল তেইশ।
সেদিন ছিল অমাবস্যা
তার উপর শহরের পথ-ঘাট ছিল লোডশেডিং-এ ঢাকা।
আর দশ মিনিট হেঁটে গেলে বাড়ি পৌঁছে যেতাম,
কিন্তু না, ভাগ্যে আমার লেখা ছিল না এইভাবে বাড়ি পৌঁছাব।
বাড়ির পৌঁছানোর কিছু আগেই
হঠাৎ পাঁচজন পুরুষ আমার চারিদিক ঘিরে ফেলল।
ওদের তিনজন সিগারেট খাচ্ছিল
সেই আলোতেই কোনোরকমে বুঝেছিলাম ওরা ক’জন।
আমি ওদের মুখ ভালো করে দেখতে পাইনি।
আমার মুখ, হাত, পা নিমেষের মধ্যে বেঁধে ফেলল
আমি কিছু বুঝতে পারার আগেই।
আমার চোখ দুটো শুধু খোলা থাকল।
আমায় টেনে নিয়ে তুলল একটা গাড়িতে
আমি চিৎকার করার সুযোগ পর্যন্ত পাইনি।
ওদিকে রাত বাড়তে থাকে
আমার বাবা মায়ের চিন্তাও বাড়তে থাকে।
মেয়ে ফেরে না কেন? এমন নানান চিন্তা…।
বাবা ফোন করল মাস্টামশায়ের কাছে।
তিনি বললেন, আমি তো সেই সন্ধ্যা সাতটায় ছেড়ে দিয়েছি, আজ তো সেই সকাল থেকেই লোডশেডিং
তাই রাত আটটা অব্দি আর পড়াইনি, একা বাড়ি ফিরবে তো, তাই ছেড়ে দিয়েছিলাম, কেন ও এখনও যায়নি বাড়ি?
বাবা বললো, না।
দেখলাম, গাড়ি ছুটে চলল।
তাও অনেকক্ষণ গাড়ি চলার পর কোন একটা জায়গায় সেটা থামল, অত বুঝতে পারলাম না।
তারপর গাড়ির মধ্যেই ওরা একে একে আমাকে ধর্ষণ করল
তারপর ওদেরই মধ্যে কেউ একজন গলা টিপে আমায় মেরে ফেলল।
বাঁচার অনেক চেষ্টা করেছিলাম
কিন্তু পারিনি। ওদের গায়ে কী শক্তি যেন এক একজন মহিষাসুর!
তারপর অনেক গভীর রাতে আমাকে সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় ফেলে রেখে যায় ঐ পাঁচজন পুরুষ, ঠিক আমার বাড়ির সামনেই।
সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় পড়ে ছিলাম তাই
আমার গায়ে ছিল না কিছুই
এমনকি আমার পিঠের বইয়ের ব্যাগটাও পর্যন্ত কোথায় না জানি ফেলে দিয়েছে।
ভাগ্যে আমার লেখা ছিল এইভাবেই বাড়ি পৌঁছাব।
যখন বাড়ির সামনে পড়ে আছি তখনও লোডশেডিং চলছে।
পরদিন সকালে আমার মা দেখতে পেল আমাকে প্রথম।
তারপর কত কিছু হল —- থানা, পুলিশ, আদালত অথচ কেউই ধরা পড়ল না।
মাঝখান থেকে আমার কত সাধ, আশা সব শেষ হয়ে গেল।
এখন আমি আকাশ থেকে দেখি
আমার বয়সি অন্যান্য অনেক মেয়েদেরকে,
যারা কত পড়াশোনা করছে
যাদের বড়ো হওয়ার কত স্বপ্ন আছে।
ওদের দেখে আমার নিজের কথা মনে পড়ে খুব।
আমি ওদের আশীর্বাদ করি —
ওরা যেন সবাই নিজ নিজ লক্ষ্যে পৌঁছে যায়
এমন নরকের ময়লা সম পুরুষদের খপ্পরে যেন ওরা কোনোদিনও না পড়ে।

— অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী
১১/৮/২০২৪

guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments