কাঠের চেয়ারে বসে থাকতে থাকতে
মানুষও একদিন কাঠ হয়ে যায়।
তার পায়ের আঙুলগুলো
শিকড় হয়ে চাড়িয়ে যায় মেঝের ভেতর।
তার কোমর থেকে
সোঁদরি, গরান, গঁদের আঠা ঝরতে ঝরতে
একদিন তাকে পুরোপুরি এঁটে ধরে তক্তার সঙ্গে।
কুরকুরকুরকুর
ঘুনপোকা ঘুরতে থাকে তার আশির নখর,
কাঠের চেয়ারে বসে থাকতে থাকতে
একদিন পুরোপুরি কাঠ হয়ে যায় সে।
তখন
কেউ তাকে চড় মেরে চলে যায়।
সে রাগে না।
সমর্পণ নিয়ে নারী এসে কাছে দাঁড়ায়।
সে কেঁপে ওঠে না।
টালমাটাল পায়ে শিশু ছুটে আসে।
সে দু হাত বাড়িয়ে দেয় না।
একটার পর একটা কাঠ জুড়তে জুড়তে
সে এমন এক কাঠের চেয়ার এখন,
যার শরীরের সন্ধিতে সন্ধিতে শুধু
জং-ধরা পেরেকের গান
ঘুরঘুর ঘুনপোকার গান
একটানা করাত চেরাইয়ের গান।
যে হাতে একদিন সমুদ্র শাসন করত,
তা এখন চেয়ারের দুই হাতল।
যার দুই উরুতে একদিন
টগবগ করত একজোড়া বাদামী ঘোড়া
আজ আর ডান পা কেটে নিলে
বাঁ পা জানতে পারে না।
কাঠের অশ্রু নেই, স্বপ্ন নেই, নিদ্রা নেই, হাহাকার নেই ;
একটু কষ্ট করলেই
জানালায় দাঁড়িয়ে সে দেখতে পেত
ঢ্যাঙা কালো বেঁটে মাঝারি
উটের মত পরিশ্রমী
মানুষ মানুষ আর মানুষ।
কিন্তু কাঠের চেয়ারের এই হল মুশকিল
সে জানালা অবদি হেঁটে গিয়ে দাঁড়াতে পারে না।
শুধু
কাঠের ভেতর লোহার পেরেক আঁটা
তার দুটো চোখ
বাকি জীবনভর
ছোট চেয়ার থেকে মেজ চেয়ার
মেজ চেয়ার থেকে বড় চেয়ার
হওয়ার স্বপ্ন দেখতে থাকে।
কাঠের চেয়ার
কবি অমিতাভ দাশগুপ্ত
কাঠের চেয়ারে বসে থাকতে থাকতে
মানুষও একদিন কাঠ হয়ে যায়।
তার পায়ের আঙুলগুলো
শিকড় হয়ে চাড়িয়ে যায় মেঝের ভেতর।
তার কোমর থেকে
সোঁদরি, গরান, গঁদের আঠা ঝরতে ঝরতে
একদিন তাকে পুরোপুরি এঁটে ধরে তক্তার সঙ্গে।
কুরকুরকুরকুর
ঘুনপোকা ঘুরতে থাকে তার আশির নখর,
কাঠের চেয়ারে বসে থাকতে থাকতে
একদিন পুরোপুরি কাঠ হয়ে যায় সে।
তখন
কেউ তাকে চড় মেরে চলে যায়।
সে রাগে না।
সমর্পণ নিয়ে নারী এসে কাছে দাঁড়ায়।
সে কেঁপে ওঠে না।
টালমাটাল পায়ে শিশু ছুটে আসে।
সে দু হাত বাড়িয়ে দেয় না।
একটার পর একটা কাঠ জুড়তে জুড়তে
সে এমন এক কাঠের চেয়ার এখন,
যার শরীরের সন্ধিতে সন্ধিতে শুধু
জং-ধরা পেরেকের গান
ঘুরঘুর ঘুনপোকার গান
একটানা করাত চেরাইয়ের গান।
যে হাতে একদিন সমুদ্র শাসন করত,
তা এখন চেয়ারের দুই হাতল।
যার দুই উরুতে একদিন
টগবগ করত একজোড়া বাদামী ঘোড়া
আজ আর ডান পা কেটে নিলে
বাঁ পা জানতে পারে না।
কাঠের অশ্রু নেই, স্বপ্ন নেই, নিদ্রা নেই, হাহাকার নেই ;
একটু কষ্ট করলেই
জানালায় দাঁড়িয়ে সে দেখতে পেত
ঢ্যাঙা কালো বেঁটে মাঝারি
উটের মত পরিশ্রমী
মানুষ মানুষ আর মানুষ।
কিন্তু কাঠের চেয়ারের এই হল মুশকিল
সে জানালা অবদি হেঁটে গিয়ে দাঁড়াতে পারে না।
শুধু
কাঠের ভেতর লোহার পেরেক আঁটা
তার দুটো চোখ
বাকি জীবনভর
ছোট চেয়ার থেকে মেজ চেয়ার
মেজ চেয়ার থেকে বড় চেয়ার
হওয়ার স্বপ্ন দেখতে থাকে।