শুধু একদিন
———– প্রতাপ মণ্ডল

তুমি বড়ো বাস্তববাদী, আর আমি হলাম কল্পনাপ্রবণ
তুমি দ্যাখো ঘর-গৃহস্থালী, আমি দেখি ভাঙাচোরা মন।

আমি দেখি মনের ক্ষত, চোখ যায় নীল সামিয়ানায়
তুমি তখন হিসেবে ব্যস্ত, কত খরচ হলো! কত আয়।

জানি হিসেবটা জরুরী, তবু একদিন প্রেমিকা সাজো
এতটা সময়ে প্রেমিকা খুঁজে, প্রেমিকা পাইনি আজও।

তোমাকে নিয়ে বসতে চাই নদীর ধারে, শুধু একদিন…
ভালোবাসার কথা হবে, হিসেব করো না যেন সেদিন।

তোমাকে ছুঁয়ে বসবো, ইচ্ছে হলে কোলে রাখবো মাথা
যদি শুনতে চাও তবে শোনাবো, তোমার না পড়া কবিতা।

একদিন প্রেমিকা সাজো! জীবনটা যে বড়ো একঘেয়ে…
ভেবেছিলাম, একটা গোটা রাত জাগবো তোমাকে নিয়ে।

তুমি যে ঘুমিয়ে পড়ো, আর আমি রাত জাগি প্রায় একা
রাতের রূপটা, আর হয়নি আমাদের একসাথে দেখা।

সকালে তুমি ব্যস্ত হয়ে পড়ো, আমিও মগ্ন থাকি ভাবনায়
দুপুরেও সেই আমি একা, বলো! এভাবে কি থাকা যায়?

আমার জন্য কখনো তো সাজতে পারো! প্রেমিকাই সাজো,
শুধু একদিন। এতটা সময়ে আমি প্রেমিকা পাইনি আজও।সম্পূর্ণ

মুচকি হেসে
—— প্রতাপ মণ্ডল

এইতো সেদিন, স্পষ্ট এখনও
কাঁসির আওয়াজ, কাই মামা
বেচতো পিতল-কাঁসার বাসন
মাথায় নিয়ে বাঁশের ধামা…..।

বাক্স কাঁচের কাঁধে ঝোলানো
থাকতো তাতে সোনপাপড়ি,
ঘন্টা বাজিয়ে হাঁকতো জোরে
কি এমন আর আহামরি….!

“ফুটো ফাটা লোহার জিনিস”
উনুন মাথায় চলতো হেঁকে,
“শিল কাটাবে মা বোনেরা?”
সেদিনও তো বলতো ডেকে!

বাক্স বন্দী বায়স্কোপ টা
কলের গানে জীবন পেতো,
বুড়ো থেকে কচি কাঁচা
অমোঘ টানে ছুটে যেতো।

তালের ভেঁপু, রঙিন ফুল
আসতো তারা দুপুর বেলা,
গ্যাস বেলুনের গাড়ি নিয়ে
আসতো কত ফেরিওয়ালা!

কাঁধে ব্যাগ, হাতে ঝোলা
থাকতো তাতে তাঁতের শাড়ি,
হেঁকে যেতো পাড়ায় পাড়ায়
“কে নেবো গো শান্তিপুরি?”

গুড় বাদাম আর চ্যাপ্টা ছোলা
কারেন্ট নুন ও থাকতো ঠ্যালায়,
গরম কালের দুপুরবেলায়–
আইসক্রিম আর কুলপিমালাই।

মুখে দিলেই মিলিয়ে যেতো
গোলাপী রঙ বুড়ির চুল,
হাতে নিয়ে বেলের মালা
বাড়ি বাড়ি বেচতো ফুল।

ঝুড়ির ভিতর মাটির পুতুল
বাঁশিওয়ালার বাঁশের বাঁশি,
ছোট্ট বেহালায় করুন সুর
কচি কাঁচার ফুটতো হাসি।

হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙে যায়
ডাকছে যেন ফেরিওয়ালা..!
মুচকি হেসে শুয়ে পড়ি
হারিয়ে গেছে ছোট্টবেলা।

সম্পূর্ণ

। কথার জালে।

একটা ঘর দিও কবি, মাটির ঘর হলেও চলবে….
একটা ছোট্ট উঠোন থাকবে, আর একটা দোলনা
আমি দোল খেতে খেতে তোমার কবিতা শুনবো
দেবে একটা ঘর? ও কবি, একবার বলো না…

একটা বিকেল দিও, নদীর ধারে পাশাপাশি হাঁটবো।
একটা কোনো বুনোফুল, পরিয়ে দিও আমার চুলে,
সূর্যাস্ত পেরিয়ে যখন গোধূলি নামবে, আকাশ রঙিন
ও কবি, একটু কথা বলো নাগো, মন খুলে……

একটা শীতের সকাল দিও, কুয়াশা রেখো না যেন!
মখমলি ঘাসের ডগায়, শিশিরবিন্দু রেখে দিও….
শিশিরকণায় ভিজিয়ে পা, হেঁটে যাবো অনেকটা
ও কবি, তুমি তো বাধা দেবে! হাত ধরে টেনে নিও।

চাইনা কোনো বসন্তের বিকেল, শিমুল পলাশ থাক
কৃষ্ণচূড়ার আগুনে আমি, আর চাই নাগো পুড়তে…
একটা হেমন্তের মাঠ দিও কবি, সোনালী ফসল
ভাঙা মনে একটা সাঁকো, পারি যেন মন জুড়তে।

একটা শরৎ আকাশ দিও, আর দিও কিছু কাশফুল
তুমি একটু সময় দেবে তো কবি, শরৎ সকালে…!
আমি এবার যাই, চৈত্র আসছে খুব বেগে ধেয়ে
ও কবি, দোহাই তোমায়! বেঁধো আর কথার জালে।

𝓟𝓻𝓪𝓽𝓪𝓹 𝓜𝓸𝓷𝓭𝓪𝓵সম্পূর্ণ

আশায় আশায়
——— প্রতাপ মণ্ডল

জানিনা গো, কেমন করে মলম দেবো তোমার ক্ষতে..!
তবে কি জানো! আমরা সবাই বেঁচে আছি কোনোমতে
পোড়ে যখন বুকের ছাতি, মনে মনে খুব চ্যাঁচাই
নইলে ধরি বেসুরে গান, একটু যদি শান্তি পাই..!
অধরা যখন সুখ পাখিটা , আমরা তাকেই চাই পেতে।

যতই বলি কষ্ট আমার, কষ্ট কিন্তু সবার আছে
কেউবা আবার কষ্ট সয়েই, হাসিমুখে কেমন বাঁচে!
বাঁচার রসদ আশাটুকু, আসে যদি সুখের দিন..!
সাদাকালো স্বপ্নগুলো হয়তো হবে আবার রঙিন
দুঃখ হলো শেষ সম্বল, সবার কাছেই রাখা আছে।

কি আর বলি তোমায় বলো! সান্ত্বনা দিই কেমন করে!
দুঃখগুলো পাওনা ভেবে, ওদের রাখি জাপটে ধরে…
ভাবছো হয়তো কথার কথা! সত্যি কিন্তু এটাই জেনো
মনের মধ্যে প্রশ্ন আসবে, সুখ থাকতে দুঃখ কেনো?
সুখটা যখন জাপটে ধরি, আছড়ে পড়ে মাটির পরে।

অল্প সময় সুখ আসে, দুঃখ কাছে থেকেই যায়…
নাই ভাবলাম সুখের কথা, দুঃখ কিন্তু বাঁচতে শেখায়
তাই বলে কি সুখ পাবো না! থামাও দেখি কান্না
খুব কেঁদেছো সারাজীবন, বলছি তো আর না।
ঘুরছে চাকা এটা জেনো, তাইতো বাঁচি আশায় আশায়।

নাই ভাবলাম সুখের কথা, দুঃখ কিন্তু বাঁচতে শেখায়।সম্পূর্ণ

মৌনী বাবা
—— প্রতাপ মণ্ডল

সাবধানে আজ ফেলছি পা, বুঝে শুনেই বলছি কথা
কাল হয়েছে এক প্রস্থ, গিন্নির আজ গরম মাথা…
ঘুম ভেঙেছে বেশ সকালে,বাইরে তখন অঝোর বৃষ্টি,
গিন্নী কেমন থম মেরে, আজ ঠিক হবেই অনাসৃষ্টি!
ভাঙাবো ঘুম? ভাবছি আমি,গায়ের পরে আলতো হাত
চিল চ্যাঁচানো অমনি শুরু, ভাঙলো বুঝি ঘরের ছাদ..!
আদর করে কাছে টেনে, একটা হাত মুখের পরে….
জোর একটা ধাক্কা দিয়ে, গিন্নী আমার গেলো সরে।
“ভালোবাসি তোমায়, ও গিন্নী, এসো নাগো একটু কাছে!
বাসলে ভালো ঝগড়াঝাঁটি, ওটা জানো নিয়ম আছে..!”
আগুনে যেন পড়লো ঘি! উঠলো জ্বলে দাউ দাউ…
দাঁত খিঁচিয়ে বললো আমায়,”অন্য কাউকে বিলিয়ে দাও।”
আপনারা যাঁরা পাঠক পাঠিকা, বলুন দেখি, কেমন কথা?
বাসলে ভালো ঝগড়া হবেনা? বুকে এখন দারুণ ব্যথা।
আজকে নাকি রান্না বন্ধ! সকাল সকাল রণহুঙ্কার,
বলেছি সব রাগের মাথায়, এটাও তো বোঝা দরকার!
দিনটা আজ খতরা খুব, সাজতে হবে মৌনী বাবা,
বেফাঁস যদি বলেই ফেলি, বাঘিনী ঠিক মারবে থাবা!

কাজ নেই আর কথা বলে, দূরেই থাকি, ওরে বাবা….!সম্পূর্ণ

ফাগুন বিকেল
——– প্রতাপ মণ্ডল

এইতো ফাল্গুনী সকাল, তোমার সাথে দেখা হবে কাল
কত উন্মাদনায় কেটেছে দিন, বুনেছি কত কল্পনাজাল!
শীতের বিকেল পেরিয়ে আর একবার দিতে চাই উঁকি
এবার হয়তো বসন্ত আমাকে দেবে না আর ফাঁকি…!
মুষড়ে পড়িনি জানো! এখনো রেখেছি ধরে নৌকার হাল।

অনেক সয়েছি ঝড়-ঝঞ্ঝা, শত তুফানেও পড়িনি ভেঙে
বসন্ত আসে প্রতিবার, সব বসন্তে কি আর মন রাঙে..!
বর্ষা আসে, শরৎ আসে, আসে কতবার কালবৈশাখী
আমি আনমনে কবিতায়…..কত বসন্তের কথা লিখি!
তবু রাঙাতে পারিনি মন, জোয়ার আসেনি মরা গাঙে।

কত পলাশ ঝরে পড়ে যায় রোজ, কত কৃষ্ণচূড়া ফোটে
এ মনে লাগেনি রঙ, ফাগুনের দিনগুলো একলাই কাটে,
শুধু একবার, শেষবার ফাগুনের রঙে মনটা চাই রাঙাতে
যদি হয় হোক, হোকনা কিছুক্ষণ, চাইছি একটু রঙিন হতে
তুমি আসবে তো কাল! দেখো, বসন্ত এসেছে পথে ঘাটে।

একটা ফাগুন বিকেল, একটা পলাশ নাহয় তোমার চুলে!
ক্ষতি কি! গোধূলির অস্তরাগে দু’টো মন এক হয়ে গেলে..!
এ ফাগুন ক্ষণিক, আমি জানি তুমিও ফিরবে ঘরে ঠিক…
তবু পাশাপাশি কিছুক্ষণ, তারপর হোকনা সময়ের সমাধি।
রেখো না মনে একটা বিকেল, কোনো বাহানায় যেও ভুলে।

একটা ফাগুন বিকেল, একটা পলাশ নাহয় তোমার চুলে!সম্পূর্ণ

ভাবনার অন্তরালে
———- প্রতাপ মণ্ডল

এক-একদিন চুপ করে থাকতে বড়ো ভালো লাগে
মনের সাথে মনের গোপন অভিসার, কত অন্তর্ঘাত
স্মৃতির পাতায় ডুব, কত জয়-পরাজয়….
ভাবনার অন্তরালে ভাবনারা এসে মাথা তুলে দাঁড়ায়।
ওরা আমায় হাতছানি দিয়ে ডাকে। উপেক্ষা করি সাধ্য কোথায়!
কবেকার সেই ফেলে আসা শৈশব, শৈশব আর কৈশরের সন্ধিক্ষণ
যখন সবে ভাবতে শিখেছে মন, কাউকে চায় একজন!
মাটি ভেজা সোদা গন্ধ, হঠাৎ বাতাসে ফুলের সৌরভ
তারপর, কোনো কিশোরীকে হঠাৎ ভালো লেগে যায় !
নদীর ধারে সাদা কাশফুল, ঘোলাটে জল —
দিগন্ত যেখানে মাটি ছুঁয়েছে, মনে হয় এক ছুট্টে চলে যাই!
সবুজ ধান, উড়ন্ত বকের সারি, জলপিপির ডুব
আমার মনে ওরা ছায়াছবির মতো ভাসে, তখন ইচ্ছে করে খুব;
আমি ওদের আর একবার হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিই….
কিন্তু হায়! হাত বাড়িয়ে ছুঁতে গেলেই ওরা মিলিয়ে যায়…
কৈশোর থেকে যৌবনে পা, সবকিছু কেমন যেন রঙিন
উদাসী বাতাস, বেল ফুলের গন্ধ, হঠাৎ বৃষ্টি রিমঝিম
আজ পড়ন্ত বেলায় ফেলে এসেছি সেইসব দিন….
চাঁদের আলো যখন ভিজিয়ে দেয় ধরিত্রীকে,
আমি তখন একলা ছাদে, পিছন ফিরে যেতে বড়ো সাধ জাগে;
মনের সাথে মনের গোপন অভিসার, কত অন্তর্ঘাত–
এক-একদিন চুপ করে থাকতে বড়ো ভালো লাগে…..সম্পূর্ণ

কখনো জানতে
—— প্রতাপ মণ্ডল

তুমি অপ্সরা নও, নও কোনো নামজাদা কবি
কি জানি…! তবু কেন ভালো লাগে এতো!
শুধু একপলক দেখেছি তোমার মায়াবী ছবি
মনে হয় সবটা বিলিয়ে দিই, ভালোবাসা যত।

পাথরের চোখ নয়, তুমি নও কোনো পাষাণী
তোমার দৃষ্টিতে ঝরে পড়ে অজস্র বেদনা,
জানি, তোমায় পাবো না আমি কোনোদিনই
তবু পূর্ণ হোক, তোমার যত মনোস্কামনা।

জানিনা তোমার ঠিকানা, কিইবা তোমার নাম
তবু মনে হয়, তুমি আমার কতদিনের চেনা!
তোমার ছবিটা যে, আমার দু’চোখের আরাম
তুমি ছাড়া আমি একমুহূর্তও থাকতে পারিনা।

কত কথা বলি দু’জনে…! বাধা নেই কোনো
তোমার কপালের টিপটা কি দারুণ মানানসই,
শুধু দু’চোখের যত জল, সব আছে লুকোনো
তুমি কি জানো? আমি তোমার কেউ হই…!

যদি দেখা হয়ে যায়, হঠাৎ ভিড়ের মাঝে
জানি, তুমি পারবেনা আমায় তখন চিনতে,
তোমার ঠোঁটের করুন হাসিটা বুকে বড় বাজে
কতটা ভালোবাসি, তুমি যদি কখনো জানতে!সম্পূর্ণ

হেমন্তের মাঠে
——- প্রতাপ মণ্ডল

তুমি ছিলে না বলে হেমন্ত আসেনি, শিশির পড়ে নি ঘাসে
তুমি ছিলে না বলে শীতের দাপট, রুক্ষতা ছিলো বাতাসে
চলো হেঁটে যাই অনেকটা পথ দু’পায়ে শিশির মেখে
সব ভালোবাসা তোমার জন্যই দিয়েছিলাম রেখে
তোমাকে পাবো নিজের করে ভাবিনি, এই হেমন্তের শেষে।

তোমার জীবনেও শীতের স্থায়িত্ব ছিলো, এখন মধুমাস
না বলেই জীবনে রঙ ধরে! কখনো থেকে যায় বৈশাখ।
মাঠে মাঠে ধান কাটা শুরু, নবান্নের ধুম
কালও আসতো না জানো! দুচোখে ঘুম
হেমন্তের সোনা রোদ, ঝলমলে ওই দেখো নীলাকাশ।

আর ভাতঘুম দিওনা, বড্ড তাড়াতাড়ি সন্ধ্যে আসে নেমে
পাশাপাশি বসে গল্প হোক, এতদিন জীবনটা ছিলো থেমে
তোমার জন্য গোলাপ আনবো, লাল টকটকে
সব লাল ঝরে গেছে তোমার জীবন থেকে
দু’জনে জাগবো কিছুটা রাত, তারপর চলে যাবো ঘুমে।

আমরা হাঁটবো হেমন্তের মাঠে, আলপথে, ফড়িংয়ের পিছু
শৈশব কৈশোর, যৌবন থেকে ধার করে আনবো জীবনী কিছু
শাড়ির আঁচল এলোমেলো করুক দুস্টু বাতাস
দু-বাহুতে ধরা দিয়ে ঘন হোক তোমার নিঃশ্বাস
আমরা থাকবো ওমে, শীতের কাছে করবোনা মাথা নিচু।

আমরা হাঁটবো হেমন্তের মাঠে, আলপথে, ফড়িংয়ের পিছু পিছু।সম্পূর্ণ

প্রহর গুনি
—– প্রতাপ মণ্ডল

হেঁটে হেঁটে যাই, হাঁটে কিশোর, যুবক
এরপর ক্লান্তি, সাঁঝবেলা নামে,
জানিনা রাত্রিটা হবে কত ভয়ানক…!
রাতটা ফুরোবে না এক ঘুমে।

কত ভাবনায় মন অস্থির, তোলপাড়
বইতে শুরু করেছে শীতের বাতাস,
খসখসে চামড়া ভেদ করে ছোঁয় জার
মাঝে মাঝে হাঁ করে নিই শ্বাস।

সময় অভাবী, কার কাছে করি দাবি!
একটু বসে যাও আমার পাশে,
কেউ নেই দূরে কাছে, একলা আমি
একটা পোড়া গন্ধ নাকে আসে।

ভীড় নেই আর, নেই কোনো কোলাহল
কান পেতে শুনি কারো পদধ্বনি,
বড় পিপাসা, কেউ দাওনা একটু জল
আমি একলাই তার প্রহর গুনি।
সম্পূর্ণ

ক্ষমা করে দিও
——— প্রতাপ মণ্ডল

আমিতো কবি নই, তবু আজ কিছু লিখতে চাই….
হে বিদ্রোহী কবি, নতশিরে তোমায় প্রণাম জানাই।
বিদ্রোহ আজও হয়, কলমে কাগজে
জাতিভেদ আজও আছে সবার মগজে
আসলে লাটাইটা ওদের হাতে, আমরা তো ঘুড়ি
ওরা যখন যেমন ওড়ায়, আমরা তেমনই উড়ি।

সাম্যের কথা মুখে বলে শুধু, আসলে বিভেদ বড়
বাঁশেরা পলকা হয়, কঞ্চিরা অনেক বেশী দঢ়
সেকেলে ধ্যান-ধারণা এখনো সবার মনে
লড়াইটা সেইযুগ থেকে চলছে গোপনে
বেশী বুঝলে বা বোঝালে প্রাণটা যেতে পারে অকালে
দাঁড়িতে টিকিতে এখনো দেখা হয় রোজ প্রভাত কালে।

হে কবি, কাকে দিয়ে গেছো তোমার বুকের আগুন?
বর্ষায় পাড় ভাঙে খরায় ফুটিফাটা মাঠ, কোথায় ফাগুন!
তবে কি আগুন ছিলো তোমার কলমে?
আমাকে থাকতে দাও না তোমার ওমে!
ভেঙে দিতে চাই কলমে, যতো আছে বিভেদের সীমারেখা
আজও কাগজে কলমে না হয় বিদ্রোহ হোক লেখা…!

গণ্ডীর বাইরে পারিনি যেতে, আওড়াই শেখানো বুলি
পদানত আজও সেই ক্ষমতার কাছে, শিরোস্ত্রণ খুলি।
ক্ষমা করে দিও আমাদের যত ভুল
এখনো ফোটে একই বৃন্তে দু’টি ফুল
জানিনা কাদের স্বার্থে চলে এতো বিভাজন রোজ….!
ফিরে এসে দেখো, এখনো করি আমরা তোমার খোঁজ।সম্পূর্ণ

চাই একটু নীরবতা
——– প্রতাপ মণ্ডল

কবিতা আসে, জোর করে লেখা যায় না কবিতা…

মাঝে মাঝে যখন আমার কাছে আসে না কবিতা,
তখন আমার অফুরন্ত সময়! ঘর গোছাই, বিছানা।
মাঝে মাঝে যখন আমার কাছে কবিতা আসে না,
আমি হিসেব করি এই জীবনের কত দেনা-পাওনা।

কুমড়োর মাচার ডাল-পালা গুলো ঠিক করে বাঁধি
গোলাপ গাছের শুকনো ডালগুলো ছেঁটে বাদ দিই
নির্জন কালো রাতে আকাশ পানে চেয়ে চেয়ে দেখি
দু-একফোঁটা চোখের জল সঙ্গোপনে মুছে নিই…..

মাঝে মাঝে যখন আমার কাছে কবিতা আসে না,
আমি স্মৃতির সরণি বেয়ে চলে যাই সুদূর অতীতে।
আমার শৈশবের সাথে কথা বলি, তার হাতটা ধরি
আমরা দু’জনে হাঁটি, মাটির সরান ধরে একসাথে।

কখনো আমার ঘরের জানলার পাশটিতে গিয়ে বসি
জানলার বাইরে কত সবুজ! একটা নীল আকাশ —
সবুজ পাতার ফাঁকে, দু-একটা নাম না জানা পাখি
আমার তখন কোনো কাজ থাকেনা, শুধুই অবকাশ।

ভাবি পাহাড়ে যাবো, নয়তো কোনো অরণ্যে যাপন
নির্জনতার মাঝে খুঁজে নেবো কবিতার জন্য কথা!
এই শহরটায় বড় কোলাহল, প্রাচীন ইঁটে গোপন ব্যথা
আমি এতো কোলাহল চাই না, চাই একটু নীরবতা।

কবিতা আসে, জোর করে লেখা যায় না কবিতা……সম্পূর্ণ