বাংলা কবিতা, জন্ম-মৃত্যু সম্পর্কে কবিতা, কবি করুণানিধান মুখোপাধ্যায় - কবিতা অঞ্চল
কবিতাজন্ম-মৃত্যু সম্পর্কে
কবিকরুণানিধান মুখোপাধ্যায়, হাংরি প্রজন্ম
কাব্যগ্রন্থজেব্রা নং ২
বিষয়রাজনৈতিক
সম্পৃক্ততাহাংরি আন্দোলন
4/5 - (2 votes)

আজ ভোরে ৬.৪৫ মি. আমার একমাত্র ছেলে আরক মারা গেলো । ব্রংকোনিমোনিয়া । আমি একা ওকে নিয়ে চলে গেলাম নদীর ওপারে । ওপারে বালিয়াড়িতে ।
বসে বসে অনেক কিছু ভাবলাম । তারপর ওর গায়ের সঙ্গে ভারি পাথর বঁধে মাঝগঙ্গায় ফেলে দিলাম । পাথর খঁজতে প্রাব দুঘণ্টা লেগে গেলো ।
বাড়ি ফিরে এসেছি । আমার বৌ ভীষণ কাঁদছে । মানুষের সেন্টিমেন্ট নষ্ট করার মতো আমার কাছে কিছুই নেই ।
আজ দুপুরে অফুরন্ত সময় ছিল ।
আমার জন্ম কাশীতে । বাবা তখন আই.এন.এ.তে নেতাজির গ্রুপে । তারপর পঁচিশ বছর যখন, বাবা আমায় নিয়ে যান রেংগুনে ।
আই.এন.এ. ছেড়ে দিয়ে বাবা পুলিশে চাকরি নেন । রেংগুনে একনাগাড়ে প্রায় ১০ বছর । তারপর সাইরেন, ব্ল্যাক-আউট,
সংবাদপত্রের হেডলাইন, হাসপাতাল । জাহাজে চেপে বর্মা থেকে সোজা খিদিরপুর ।
খিদিরপুর থেকে আবার কাশী ।
জানতে পারলাম বাবা কোনো বার্মিজ মেয়েকে বিয়ে করেছেন । সেই থেকে
সমাজের বিরুদ্ধে, সংস্কৃতির বিরুদ্ধে, নিজের বিরুদ্ধে
লড়াই । লেখা-পড়া হল না । ক্লাস টেনে-এ পৌঁছে বাবার টাকা
বন্ধ হবে গেল । তখন থেকেই আমি নেমে গেলাম ।
হেল্প! হেল্প!! হেল্প!!!
ছোটবেলায় আঁকার ঝঁক ছিল । ক্লাসে ফার্স্টবয় ছিলাম । ছবি আঁকতে গিয়ে
সব তালগোল পাকিয়ে গেল । কাশীতে একটা ঘর ভাড়া করে নিজের স্টুডিয়ো করলাম ।
ছবি দেখে লোকে পাগল বলতে লাগলো । বাড়ির লোকে মা বোন সকলেই পাগল বলে
বাড়ি থেকে বের করে দিলো । আমিই বাড়ির বড় ছেলে ছিলাম ।
ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের কাছে গিয়ে একটা কায়স্থ মেয়ে বিয়ে করলাম ।
অব্রাহমন বলে বাড়িতে ঢুকতে পাই না ।
কেউ নেই । কেউ নেই ।

Share
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments