তিনি হাঁটতেন ধীরে,
কিন্তু ছায়া পড়ত অনেকদূর—
যেন সময়কে ছাপিয়ে যাওয়ার এক চিরন্তন ইচ্ছা।
তার কাঁধে ছিলো সংসারের ভার,
আর চোখে— স্বপ্নের ধানক্ষেত।
ভোর হলে যেতেন মাঠে,
সাথে থাকত শুধু নীরবতা আর মাটির গন্ধ।
মুঠোভরা ক্লান্তি নিয়ে ফিরতেন সন্ধ্যায়,
তবু হাসতেন—
যেন কিছুই হয়নি,
যেন পৃথিবী তার চাহনিতেই জেগে উঠবে।
আমরা যেদিন পড়তে শিখলাম,
তিনি কলম কিনে দিলেন—
নিজে নতুন শার্ট না কিনেই।
আমরা যেদিন বললাম “ভবিষ্যত”,
তিনি চুপচাপ কুয়াশায় হারিয়ে গেলেন,
কেননা তার ভবিষ্যত মানেই ছিল—
আমাদের আলো।
পিতা কখনো কাঁদেন না,
কিন্তু একবার দেখেছিলাম,
মায়ের অসুস্থতায় তার চোখে জল জমেছিল—
পেছন ফিরে, দেয়ালের দিকে তাকিয়ে।
পিতা কখনো বলেন না “ভালোবাসি”,
তবু তার প্রতিটি নীরবতা ছিল এক একটি প্রেমপত্র,
তার প্রত্যেক ঘাম ছিল আশীর্বাদের ছাপ।
আজ সে পিতাই—
কুয়াশার মতো হারিয়ে গেছেন সময়ের পেছনে।
তার হাঁটার ছন্দ নেই উঠোনে,
তার ভাত তুলে রাখার প্রয়োজন পড়ে না।
তবু আমি এখনো খুঁজি,
পুরোনো সোয়েটারে লেগে থাকা তার গায়ের গন্ধ।
পিতা,
তুমি আছো প্রতিটি নিঃশ্বাসে,
একটা ছায়া হয়ে,
যা সূর্যের থেকেও দীর্ঘ,
আর রাতের থেকেও গভীর।