কবিতাঃ জেলে
পংকজ পাল
জল নেই — কেবল স্মৃতি আছে,
বিলের বুকে সেদিন যেমন সূর্য ডুবত শান্তিতে,
আজ সেখানে ধুলো উড়ে,
খাল ভরাট করে কেউ লিখেছে —
“এখানে গড়ে উঠবে কৃষি প্রকল্প”।
সে এক জেলে, প্রজন্ম ধরে যাদের ঘরে
জীবনের মানে ছিল —
জাল ফেলা, মাছ ধরা, আর জলের ধ্বনি শুনে রাত পার করা।
কিন্তু এখন?
খালে জল নেই, পুকুরে মাছ নেই,
নদী দূষণে কালো হয়ে গেছে বুকে রাখা স্বপ্নেরা।
পাড়ার মোড়ে দোকানদার প্রশ্ন করে —
“তুই এখন কী করিস?”
সে উত্তর দেয় না, মাথা নিচু করে
খালি হাতে শুধু একটা পুরোনো জাল ঝুলিয়ে রাখে কাঁধে।
পুকুরের পাড় এখন লিজে,
শহরের লোকেরা মেশিন চালায়,
মাছ চাষ হয় ঔষধে আর রাসায়নিকে —
দেশি পুঁটি, টাকি, কৈ —
শুধু বইয়ের পাতায় থাকে।
জলের বদলে উঠে এসেছে ইট,
বিল কেটে হয়েছে জমি,
আর সে দাঁড়িয়ে থাকে ওই জমির ধারেই,
যেখানে একদিন সে ছেলেকে সাঁতার শিখিয়েছিল।
বউয়ের মুখ শুকিয়ে গেছে,
রান্নাঘরে হাঁড়ি বাজে না তিনদিন ধরে,
আর ছেলেটা বলে —
“বাবা, আমি বড় হলে মাছ ধরব না।”
সে চমকে ওঠে,
জীবনের যে পথ ধরে সে হেঁটেছে —
সেই পথে যেন আর কেউ না চলে,
তবে তার মতো মানুষেরা যাবে কোথায়?
তবু প্রতিদিন ভোরে ওঠে,
আকাশের রঙ দেখে বোঝে বৃষ্টি আসবে কি না,
জাল নিয়ে যায় —
যদিও জানে, জলে এখন মাছ নেই,
তবু শেষ আশা থাকে,
যদি কোনো পুঁটি ভুল করে ধরা দেয় জালে!