বাংলা কবিতা, নারীমাংস ও আফিঙের ব্যবহারবিধি কবিতা, কবি কৌশিক মজুমদার শুভ - কবিতা অঞ্চল
কবিতানারীমাংস ও আফিঙের ব্যবহারবিধি
কবিকৌশিক মজুমদার শুভ
বিষয়রাজনৈতিক
উৎসর্গরাজনৈতিক স্পর্শকাতর ফুলেল হৃদয় ভাইদের উদ্দ্যেশ্যে
লিখার স্থানবয়রা, শ্মশানঘাট
লিখার সময়০৪ এপ্রিল, ২০১৮
4.7/5 - (4 votes)

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ রাজনৈতিক দলান্ধদের জন্য ক্ষতিকর ও পীড়াদায়ক

নক্ষত্র যেভাবে আমার মাংসে প্রবেশ করে, ঢোকে রক্তে- সেইভাবে প্রতিটা সকাল আসে প্রেমিকার লিপিস্টিক ঠোঁটের কিনারায় প্রবেশ করিয়ে রাজনৈতিক জিহ্‌বা; যেমনি প্রতিটা সকাল আসে নির্বিকার, পার্থিব শেষ আলো গিলে নিয়ে আমি আয়নায় দেখি- আমার নষ্ট আত্মার প্রতিকৃতি। আমার জীবন, আত্মা, আমার শরীরকে আমি নিয়েছি এ্যাক অকৃত্রিম সারল্যে- যেভাবে মাসিকের সময়ে আমি স্বাভাবিকভাবে প্রেমিকার বিছানা ছেড়ে হেঁটে যাই- ব্রোথেলের পথে।

‘নারী; একটি যন্ত্র ব্যবহারবিধি জানতে হয়’,
‘নারীমাংস, রেসিপি জেনেই রান্না করুন’।

যতক্ষণ ঝাপটে ধরে স্বাধীনতা, উত্থিত হয় পুরুষাঙ্গ- নেশার মত চায় হাড়, মাংস, চর্বির দলা; নিজের পাড়াকে মনে হয় বেন্দাবন– আর বৌদিরা যখন আত্মরক্ষার রাইফেল হাতে ধরে, জিহ্বায় চেটে দেয় থুথু দিয়ে।
আপনি বলতে পারেন, ‘আত্মরক্ষার জন্যে খুন করাও জায়েজ’।

-করুন!

আমি যখন ফরাসি মদ কিনি, সাথে আফিঙ কিংবা নারীমাংসের খোঁজে যাই পাড়ায় পাড়ায়- পৃথিবীটাকে আমার কাছে সমতল মনে হয়- যতদূরে দেখি কেবল ঝুপড়ী আর বারান্দায় শুকোয় গতরাতের বাসি অন্তর্বাস।
যখন পড়ি সাইট্রোনিক কবিতা, চিন্তাপ্রণালীতে আসে আমি একটি সার্বভৌম দেশের বাসিন্দা এবং কারো বাপের মতান্তরে স্বামীর শ্রাদ্ধবাসরে সশরীরে উপস্থিত থাকা আমার বাধ্যতা। সকল শক্তির উৎস আমার দন্ডায়মান রাইফেল; তাই আমি ছাড়ি না ঘোড়া, কিংবা চার বছরের শিশু, নেতার ছাদ থেকে পড়ে মরে যায় কামের ছেমড়ি। জীবিত যখন পৃথিবী, আমিও চড়ে যাবো সরব পৃথিবীযানে, চেপে ধরে কুঁজ, কামড়ে ছিঁড়ে খাবো মাংস- ইনসিজসর হোক বা ক্যানাইন; সব মাংস ছিঁড়ে খেতে হয় না।

নির্যাস, আঃ! নিঃর্যাস এসে ঝাপটে ধরে আমার পেট, আমি হাঁটি এবং ছুটি নক্ষত্রের তীরে- বালুকাবেলা; এ পৃথিবীতে। এই পৃথিবীর আগ্রাসী এমেরিকা যেখানে মাংসের দোকান নিয়ে হেঁটে চলে মানুষ। আমি দেখি, আর কল্পনা করি আমার পাড়াতো বোন, নেক্সট ডোর বউদি- মানুষকে মানুষ মনে হয় না বড় একটা, সবজির ক্ষেত ভেবে বসে পড়ি- কয়েকটা নষ্ট সাদা শশা দেখি,
দেখি পৃথিবীর গহ্বর থেকে উঠে আসে মৃতদের দীর্ঘঃশ্বাস।

‘কাকে ফেলে কাকে ধরি,কারে ধরে ছুঁড়ে ফেলি’

কাউকে খুন করতে গেলে দ্বিধা হয়, কোথায় হবে এর কবর? এত কবর হলে পৃথিবী তো একদিন গ্রাস করে ফেলবে মৃতেরা। পরিসংখ্যান কি বলে? পৃথিবীর জনসংখ্যা কত? -জীবিত এবং মৃত। মৃতেরাও তো আছে পৃথিবীর অনুদের তালিকায়, কিংবা আমি শিশু হয়ে ধরে আছি আমার প্র, প্র, প্র-পিতামহের মগজের কয়েকটা অনু আমার জননাঙ্গে।

আমি ক্যান্টিনে বসি, দেখি দেশটা এগোচ্ছে রাজনীতির ছায়া(সায়া) তলে। জনৈক বন্ধু বলেন, “যারা সমালোচনা করেন চলমান রাজনীতির, তারা বানচোত অথবা মাগীর দালাল”। ততক্ষণে আমি মেডিকেল কলেজের দেয়ালে দেয়ালে দেখি ফুলবিহীন ফুলেল শুভেচ্ছা এবং দেশটা এগোচ্ছে জেটপ্লেনের গতিতে।

কবিতার জোরে চলে ম্যাগাজিন, ম্যাগাজিনের জোরে রাইফেল, রাইফেলের বাটে আটকে থাকে স্বাধীনতা, রাইফেল দিয়ে ঠেকানো যায় মিছিল, জনসভা, তদুপরি জিহ্বার সঞ্চালন। এছাড়া রাইফেলের জোরেই কেটে নেয়া যায় সমালোচকের সৃষ্টিশীল (ঐ বন্ধুর মতে বানচোত) আঙুল। তবু নীল জিহ্বায় আটকে থাকে যে পাখির চোখ, আকাশের জীবন, পৃথিবীর ব্যর্থতা- আমি সেই জিহ্বায় চেটে নেই এইসব আঁধার এবং অপমান। আবার সিপ করে মুখ দিয়ে ভরে নিই আমার দোয়াত থেকে নীল কালি অথবা মুক্তমনার লাল রক্ত; শ্রমিকের নুনভরা ঘাম, বেশ্যার ঋতুস্রাবে; পাতা ভেজাই গ্যালন গ্যালন বীর্যে।

তুমি সগগে, চলে গ্যাছো ফাল্গুনী; দোজখে যাবে অনিন্দিতা। আমি কি করি- আমার তো দোযখেও জায়গা হবে না, যে আকাল প্রি-বুকিং আর লেনদেন ছাড়া জায়গা হচ্ছে না কোথাও। তবুও আমি যে বৌদির সাথে পরকিয়া করি তার স্বামীর প্রাইভেট ফার্মে চাকুরী নিতে, আমার লজ্জ্বা হয় না- বিনিময় এবং লেনদেনের উপরেই টিকে আছে গোটা পৃথিবী।
-“লেইটস গিভ ‘ন টেক”।

আমার বাপ যাই করুক আমার জন্যে রেখে যেতে পারেন নি কোনো সিল-ছাপ্পর, আমি বলব রাখেন নি, ইচ্ছে করেই রাখেননি। তাই ৩০% ই হোক আর সেন্টপারসেন্টই আমার কোনো মাথাব্যাথা নেই। আমার আছে অসংখ্য পরকিয়া প্রেম আর বৌদির সখ্যতা তাদের স্বামী বা নাগরের প্রাইভেট ফার্ম আমার পাকযন্ত্রে বোলাস হয়ে ঢুকবে। আমাকে ঘুমোতে হবে না ঢাকার ফুটপাতে পাঁচ টাকা দামের গতকালের পত্রিকা গায়ে দিয়ে, তাই আমি নাক ঘামাই না, মাথা ঘামাই না, শুধু জিভ ঘেমে ওঠে মাঝেমাঝে।

পত্রিকা, কাগজ, দৈনিক যেখানে পাঁচটাকায় বিক্রি রাজ্যের সব সাহিত্য, সব খবর; দেশে শুধু এই জিনিসটাই সস্তা। আর সস্তা বিটিভি নামক একটি টিভি চ্যানেল- ওয়াসার পানির মত ঘরে ঘরে এসে পড়ে- নষ্ট আত্মার টেলিভিশন। আমি দেখি সুশীল এক সংবাদপাঠিকা খবরে লুকিয়ে যাচ্ছেন বছরের পর বছর গিয়েও বিচার হয়নি এক সাংবাদিক দম্পতির খুনের, সাভার ট্যাজেডি থালায় পুঁজি করে গলায় মা-বাপের ছবি ঝুলিয়ে খয়রাত করে একমাত্র অবশিষ্ট সাত বছরের ছেলে।

-সমস্যা কি সবাই তো খয়রাত করছি! বেকার খয়রাত করছে চাকুরী, প্রবাসীর বউ খয়রাত করছে একটা রাত, কেউ শীতের রাতে খয়রাত করছে কম্বল, রাষ্ট্র মঙ্গলময় প্রতিবেশী গরুপ্রেমিকের কাছে খয়রাত করছে পানি।

এইসব যখন তখন একজন বলেছিলেন, “সবকিছু নষ্টদের অধিকারে চলে যাবে”। একজন মেতেছিলেন অবৈজ্ঞানিক জাতির দরজায় বিজ্ঞান প্রচারে; আমরা আজ তাদের দেখি না, উড়ে গেছেন আফিঙের ধোঁয়ার মত ।
আরে ব্যাটা!
আফিঙের ব্যবহারবিধিও জানতে হয়। জানতে হলে পড়তে হবে সংবিধান।
-কোথায় পাবেন!
স্বযত্নে রাখা আছে গণভবনের টয়লেটে, এখন শুধু ফ্ল্যাশ করা বাকি। তারপর আস্তেআস্তে আবার নাজিল হবে নয়া সংবিধান।

Share
guest
2 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
হাসান আল বান্না
29 days ago

সেরা!

নিমাই জানা
4 months ago

চূড়ান্ত লিখেছেন দাদা