আমরা যখন কথা কইতেছিলাম
তারাবির মতো ঘন ভাষায়
যখন চা চুমুক দিতেছিলাম মূলত নজর দিয়া
আগে আগে পরস্পরের ত্বকে;
কিংবা মনে হইতেছে অন্ধকার ঘরে আধঘন্টার
শরীরে সংগীত বাদ দিয়া,
কয়ে দেয়া দরকার ছিলো এইসব কথাবার্তা;
কিন্তু হায়! মনে পড়ে নাই
ভুল সময়ে কথা মনে পড়ে গেলে
কথারা আঘাত পাইয়া যায়, এই আঘাত মারাত্মক খুব।
ভুল সময়ে কথা মনে পড়ে গেলে
তারে উঠাইয়া পাঠাইয়া দিলেও সে তখন মুমূর্ষু।
এখন এইসব মুমূর্ষু অক্ষরের মালাদের সাথে আমার যাপন, য্যানো তারা কোরবানীর পশু ছিলো আমার
কেন তাদের করা হইলো না কোরবান!
এই অভিযোগ চোখে এইসব নরম অথচ মুমূর্ষু কথা
পৃথিবীর সমস্ত ভুইলা যাওয়া তুলসী পাতায় পানি ঢালে।
এখন মধ্যরাতের অক্ত যখন একেকদিন একেক ঘন্টায়
শুরু হয়ে নিয়মিত শেষ হইতেছে সব একই সময়ে
যেদিন আমি কুকুরের আগে বুইঝা ফেলতেছি
আততায়ী কে এই রাস্তায়!
লেকে ভাসা কোন মাছটা আত্রাই নদী মিস করতেছে
আর কোনদিক দিয়ে হারিয়ে যাইতেছে লাশ, গন্ধ কিংবা ডার্ক লিপস্টিক।
হ এইসব মধ্যরাতেই একটা খুশবু
নিয়মিতই বলা চলে তাড়না দিয়া ঘুইরা যাইতেছে,
হেলান দিলেই লাল হৃদ গেয়ে উঠতেছে ফার্সি গজল
প্রকৃতার্থে রাত কুকুরের কেউ নয়, সে কাকের সহোদরা
যে কাকেরা জানেনা পৃথিবীর ভাষা সুতরাং
তাদের জানা নাই রঙের নামও।
মাঝে মাঝে ভাবি কাকের সরলতা
তাদের কলোনি যাইয়া বইসা থাকি অদেরই সুরতে
রাত আমারে চিনা ফালায়, আমার মুনাফেক মুখ নিয়া ফেরত আসা লাগে।
আমার লাল হৃদ কালো হইয়া গ্যাছে ততক্ষণে
নীল ছায়া জ্যোৎস্নার আলোতে
আমরা কাছাকাছি তখন, কিছুটা গরীব আর ধনীর মতো।
হ হ হ এইসব মধ্যরাতেই একটা খুশবু
একটা শিউলী ফুলের খুশবু যেইটা
কুকুরের জেহেনে ধরে না কোনোকাল
আমারে তাড়না করে যায় নিয়মিতই
আমি তারে তাড়া করে যাই না কোথাও
মনে থাকার কথা,
পৃথিবীর সকল তমাল গাছ আমার মালিকানায়
আর একদিন জ্বরের দুপুরে হাওয়া আঁইকা
আমি লেখছিলাম নতুন লিপিতে তোমার নাম
পৃথিবীর সব শিউলী পত্রে।
তোমারে আর কোনো নামে ডাকিনা
মহাবিশ্বে ‘নাম’ এক এলিয়েন জিনিস।
যিনি ঈশ্বর তার কোনো নাম নাই মূলত;
শব্দেরও অবয়ব থাকে, ঈশ্বরের তা নাই।
মানুষ বাদ দিয়া কারও নামকরণের হ্যাপা নাই পৃথিবীতে
কারণ ছুরিটা মানুষেরই মারতে হয় মানুষরে
কাঁচের চুড়িও ভাঙে মানুষেরই ভোরবেলার পথে
মানুষেরই জানতে হয় জোনাকি আলোর তাল
কয় তাকবীরে পড়া লাগে কোন টাইমের নামাজ
কবির কাছে জাইনা নেয়া লাগে কবিতার তাফসীর।
যেইসব কথা মনে পড়ে নাই
আমরা যখন কথা কইতেছিলাম
তারাবির মতো ঘন ভাষায়
যখন ঝিনুক ফুরায়া গেছিলো সাগর তটে
যখন তোমারে শোয়াইয়া আমি মগজ ভইরা
কুড়াছিইলাম নবান্ন ফসল তিস্তা পাড়ে
যখন আমাদের মিলনে ছিলো লাল দুইটা হৃদ
আকাশমনি জীবন যখন দুজনেরই খিলখিল হাসতেছে
তুমি জানো তখন সমস্ত দাম্ভিকতা চাইপা রাইখা
কবিতা ছাড়া বোবা কেউ তোমায় ভালোবাসতেছে!
আহহা…
পৃথিবীর তমাল গাছগুলো আমার
শিউলী পত্রে তোমার নাম এখনও আছে
ঈশ্বরের কোনো নাম নাই আর
রাতের চক্রান্তে হৃদ কালো থেকে আরও
বিভৎস কালো হইয়া যাইতেছে এখন
আমি কিছু মুমূর্ষু অক্ষরের মালা নিয়া
বইসা আছি হাসপাতালের সিঁড়িতে,
মাঝে মাঝে তাড়না দিয়ে যায় খুশবু
ভাবি দৃষ্টির বাইরে প্রেমিকারা গ্যালে
প্রতিবার হারিয়ে যায় দুটো মৌসুমি ফল
হারিয়ে যায় দুটো মিলনের রঙ
অতীত কালের সুরতে কওয়া লাগে সব
কওয়া লাগে ধরাইয়া দেওয়া নাম, বারবার
দৃষ্টি সীমায় তুমি নাই এখন
তাও দ্যাখো শিউলী এখনও হারিয়ে যায়নি
যারে অ্যাড্রেস করা হয় নাই কোনো নাম দিয়া
অথচ তারে নিয়া যিকির চলে,
যারে ভালোবেসেছিল একজন প্রবল দাম্ভিক কবি
সে বিরাজমান থাকেই।
প্রেমের কোনো রুপ নাই, অবয়ব নাই।
ঈশ্বরের কোনো নাম নাই, অবয়ব নাই।