5/5 - (1 vote)

আমি মানুষের ভীড়ে হাঁটতে হাঁটতে
খুঁজেছি একটি মানুষ-
যে জানে কাকে বা কাদের জানাতে হয় শুভকামনা!

আমাদের কর্পোরেট জীবনের কর্পোরেট সফলতার
আরেকটি মাইলফলক ছুঁয়া হয়ে গেলে
পশ্চিমা বিমানের ফ্লাইট হয়ে গেলে কনফার্ম
হাতে পেয়ে গেলে সরকারি চাকরির জয়েনিং লেটার
কিংবা পাওয়া হয়ে গেলে নিপীড়িত মানুষদের আরো বেশি
চুষে-শুষে-ছিঁড়ে খাওয়ার নাগরিক অধিকার!
আমরাই আমাদের ক্ষুদেবার্তা পাঠাই-
“বন্ধু, নতুন জীবনে শুভকামনা,
জীবনে আরো বড় হও বন্ধু।”

আমরা বোকার দল ভুলে কিম্বা এড়িয়ে যাই সচেতনভাবে
অথবা আমাদের বোধোদয় হয়নি এখনো-
আমাদের জানা এবং বোঝা উচিৎ, আমাদের সেই
সফল বন্ধুটিকে শুভকামনা কিম্বা ভর্ৎসনা জানানোতে
তার কিছুই যায় আসে না এখন আর!

আমি জীবনকে খুব কাছে থেকে দেখেছি
নিম্ন মানের মানুষের হাহাকার দেখেছি আমি
অথবা যাদের কোনো মানই নেই, নেই মর্যাদা
যারা কোনো শ্রেণীর ভেতরে পড়ে না, যারা বাসিন্দা
আলোহীন-অন্ধকার, সাদা-কালো একটা পৃথিবীর
যারা হয়তো কর্পোরেট শব্দের মানে বুঝে কিন্ত চেনে না
যারা অবচেতন মনে স্বপ্ন দেখে ফেলে-
কর্পোরেট দুনিয়ার রঙ্গিন আলোয়, বিষবাষ্পে
নিজেদের জর্জরিত করে ফেলবার-
যারা সক্ষম কিন্ত সহযোগিতা প্রয়োজন যাদের
যাদের প্রয়োজন একটি হাত, টেনে তুলবার
যাদের প্রয়োজন একটি ক্ষুদেবার্তা-
“শুভকামনা বন্ধু, জীবনে অনেক বড় হও।”

আমি মানুষের ভীড়ে হাঁটতে হাঁটতে
খুঁজেছি একটি মানুষ-
যে জানে শুভকামনা শব্দটির সদ্ব্যবহার!

আমি জীবনকে খুব কাছে থেকে দেখেছি
মানুষের উত্থান দেখেছি, দেখেছি জয়
বিজীতের হাসি আমি দেখেছি
আমি মানুষেরই পতন দেখেছি
হেরে যেতে দেখেছি, পরাজিতের
সলজ্জ করুণ মুখ দেখে ভর্ৎসনা করেছি আমি!

আমি মৃত্যুকে দেখেছি খুব কাছে থেকে
একটা লোক আস্ত একটা জনম কাটিয়ে দিল
অ-কাজে, কু-কাজে; বলা চলে নষ্ট জন্ম ছিল তার-
আমার বাহুডোরে মাথা রেখে গত হলো সে
মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তে কত শতবার তাঁর মুখে
উচ্চারিত হয়েছিল সেই সত্ত্বার নাম; যিনি চিরন্তন, এক-
তাই তো বলি, মানুষ হয়ে মানুষকে মন্দজ্ঞান করবার
অধিকার তোমাকে কে দিল, মানুষ?

আমি মানুষের ভীড়ে হাঁটতে হাঁটতে
খুঁজেছি একটি মানুষ-
যে মানুষকে নির্দ্বিধায় মানুষ বলে ডাকতে পারে!

আমি দেখেছি মানসিক ভারসাম্যহীন একজন নারীকে
তাঁর ঔরসজাত আত্মজাকে প্রহার করতে-
আরো কিছুদিন পর, বহুদিন পর দেখেছি তাঁকে
পিতৃপরিচয়হীন তাঁর আত্মজাকে ভীষণ আদরে
বাহুডোরে আগলে রাখতে, মুখে তুলে দিতে আধার!

আমি অতো মানুষের ভীড়ে হাঁটতে হাঁটতে
খুঁজেছি একটি মানুষ-
যার ধৃষ্টতা আছে ‘মা’ বলে ডাকবার
মানুষী বলে ডাকবার;
মানসিক ভারসাম্যহীন একজন নারীকে!

আমি এমন একজনকে খুঁজছি যে বুঝে না কোনো
নীতি, তন্ত্র-মন্ত্র কিছুই বুঝে না, বুঝে শুধু ক্ষুধা
সে এসে নিশ্চিত করবে ক্ষুধার অন্নের সমধিকার
ভাত, মাছ ও মাংসের সমধিকার___

আমি জীবনেরই পায়ের তলায় মাথা টুকে চেয়েছি একটি জীবন
একটি মনুষ্যজীবন, সুখী-স্বাচ্ছন্দ্য, মানবিক জীবন!

guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments