বাংলা কবিতা, গোধূলিসন্ধির নৃত্য কবিতা, কবি জীবনানন্দ দাশ - কবিতা অঞ্চল
কবিতাগোধূলিসন্ধির নৃত্য
কবিজীবনানন্দ দাশ
কাব্যগ্রন্থসাতটি তারার তিমির
লিখার সময়১৯৪৮
4.7/5 - (3 votes)

দরদালানের ভিড়—পৃথিবীর শেষে
যেইখানে প’ড়ে আছে—শব্দহীন—ভাঙ্গা—
সেইখানে উঁচু উঁচু হরীতকী গাছের পিছনে
হেমন্তের বিকেলের সূর্য গোল—রাঙা—

চুপে চুপে ডুবে যায়— জ্যোৎস্নায়।
পিপুলের গাছে ব’সে পেঁচা শুধু একা
চেয়ে দ্যাখে; সোনার বলের মতো সূর্য আর
রূপার ডিবের মতো চাঁদের বিখ্যাত মুখ দেখা।

হরীতকী শাখাদের নিচে যেন হীরের স্ফুলিঙ্গ
আর স্ফটিকের মতো শাদা জলের উল্লাস;
নৃমুণ্ডের আবছায়া—নিস্তব্ধতা—
বাদামী পাতার ঘ্রাণ—মধুকুপী ঘাস।

কয়েকটি নারী যেন ঈশ্বরীর মতো;
পুরুষ তাদের: কৃতকর্ম নবীন;
খোঁপার ভিতরে চুলে: নরকের নবজাত মেঘ,
পায়ের ভঙ্গির নিচে হঙ্‌কঙের তৃণ।

সেখানে গোপন জল ম্লান হ’য়ে হীরে হয় ফের,
পাতাদের উৎসরণে কোন শব্দ নাই;
তবু তারা টের পায় কামানের স্থবির গর্জনে
বিনষ্ট হতেছে সাংহাই।

সেইখানে যুথচারী কয়েকটি নারী
ঘনিষ্ঠ চাঁদের নিচে চোখ আর চুলের সংকেতে
মেধাবিনী; দেশ আর বিদেশের পুরুষেরা
যুদ্ধ আর বাণিজ্যের রক্তে আর উঠিবে না মেতে

প্রগাঢ় চুম্বন ক্রমে টানিতেছে তাহাদের
তুলোর বালিশে মাথা রেখে আর মানবীয় ঘুমে
স্বাদ নেই; এই নিচু পৃথিবীর মাঠের তরঙ্গ দিয়ে
ওই চূর্ণ ভূখণ্ডের বাতাসে—বরুণে

ক্রুর পথ নিয়ে যায় হরীতকী বনে—জ্যোৎস্নায়।
যুদ্ধ আর বাণিজ্যের বেলোয়ারি রৌদ্রের দিন
শেষ হ’য়ে গেছে সব; বিনুনিতে নরকের নির্বাচন মেঘ,
পায়ের ভঙ্গির নিচে বৃশ্চিক—কর্কট—তুলা—মীন।

Share
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments