কবিতার নাম — শীতল রাতের উষ্ণতায়
কলমে — দেবাশিস চৌধুরী
তারিখ –25/03/2023
একদিন আমরা সবাই হাসতাম একসাথে,সবাই
রাখতাম পরস্পরকে দেওয়া কথাগুলো, বন্যায়
জানি না আজ, আজ কোথা হতে এসেছে কোন
মায়াবী আলো, শুধু আপনার সুখের সুখী গৃহকোন
বসছি শুধু ভালো।
ফুলকে বলিনি কোনো কথা কোনো ইঙ্গিত-ইশারায়।
ফুল হয়তো তাই এখনো রেখেছে ধরে আপনার ভাষায়
আপনার সৌন্দর্য। হয়তো তাই এখনও পাথরের আঘাতে,
এখনও পাইনি কোনো ব্যাথা এই পদে পদে ব্যাথা-দেওয়া
ব্যাথাতুর পৃথিবীর।
জঙ্গলে আর যাবো না ফিরে, কেননা ঐ জঙ্গল হতে
চলে এসেছি আমরা বহু বহু দিন আগে। একটা পাশবিক
পৃথিবীকে ওখানে বানাতে পারিনি মানবিক, ছেড়েছি জঙ্গল।
আমরা তো চাইনি এখানে আমাদের ঝরুক চোখের জল
অর্ধেক পৃথিবীর কারণে অর্ধেক পৃথিবীর।
আমরা গড়িনি পৃথিবী আজ কাল পরশুর, তাই নিস্তব্ধ দুপুর
নিজের স্তব্ধতা ভেঙে নিজের আওয়াজে হয়নি খানখান
আজও কখনো একবার। দূর সমুদ্রে জোয়ারে উঠে যে গর্জন, সেখানে কোন বিদ্রোহী হাওয়া বইছে কিভাবে, জানি না ধরন
তার আমি বা কেউ আজও।
তবুও কিছু স্বপ্ন বেঁচে আছে স্বপ্ন-সোনালী এই পৃথিবীর পরে।
একদিন,একদিন সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে,মানুষ মানুষের প্রতি
ফের হবে মানবিক,সেই বসন্তে ফুটবে আবার সেই সব ফুল,
একবার ঝরে গিয়ে যারা ফুটতে চাইনি আর,বা ফোটেনি
আজও যারা এখনো একবারও,তারা সবাই ফুটবে, উৎসব হবে
আবার বহুদিন পরে,সেইসব উৎসব নতুন করে,জঙ্গল হতে
বেরিয়ে যে উৎসব করেছিল সবাই মিলেমিশে একসাথে–
পাশবিক নয়,একটা মানবিক জীবন কাটাব শপথে।
এত স্বপ্ন,আর তা বাস্তবায়িত হওয়ারও এত সম্ভাবনা,
তবুও স্তিমিত হয়ে আসে সাহসী হৃদয়ের সব সাহস, দুর্মর
পৃথিবী চোখের সামনে মরে আসে। শুনতে পাই ভেসে আসে,
পৃথিবীর বুকে ব্রহ্মাণ্ড হতে তার অকাল বিদায়ের অকাল গান।
না, আর কোনো অরণ্যের মর্মর বা নদীর কলকল জলকলতান
আর কোনো কবিতাতে জোগায় না আবেগ; কবিতাবিতান
বলো কবিরা তবে লিখবে কিভাবে?
কবিরা কবিতা লিখবেই কোনোভাবে, ফুল যেভাবেই হোক
ফুটবেই ফুটবে। ভিন্ন ভিন্ন পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন দুঃখরাশি,শোক
ডুবিয়ে রাখবে ভিন্ন ভিন্ন পৃথিবীকে চিরদিন চিরকাল।
স্বপ্নে শুধু দেখেছি আঁধার, রাত্রি;দেখিনি আলোর সকাল।
তবুও আশা রাখি,আশার মানুষ আমি;খাঁটি আশার-ভরসার
পৃথিবীকে ভালোবাসি খাঁটি ভালোবাসার। কখনো হিংসার
কোনো গানকে দিইনি অন্তরে এক মুহুর্ত, এক পল ঠাঁই।
আজ শুধু নিজের কথা বলে যাই, নিজেকে শোকে সাজাই।
আমি প্রতিটি সত্যকে চেয়েছি প্রতিবার তার সেই সৌন্দর্যের
ভাষায়, যে সৌন্দর্য তার শ্রেষ্ঠতম। কিন্তু দেখেছি প্রতিবার
সৌন্দর্যহীন নিষ্ঠুর সত্যের নির্মম নাচানাচি আর সঙ্গিহীন
অনাথ একলা সৌন্দর্যের একার অসহায় বিলাপ,প্রলাপ
আর হাহাকার।
কোকিল কি জানে, কোকিল কি বোঝে, যে কোকিলের গানে
রাখবো বিশ্বাস। সে গাইছে আপনার গান অবুঝ আপনমনে।
তোমার আমার পৃথিবীর বীভৎস চেহারা চিনে না সে আজও।
এসো, চাই, নিজের গানে যেভাবে মেতে আছে, আজীবন যেন
ওইভাবে মেতে থাকে ও।
আমি ভাবি,ওইরকম অবুঝ কোনো গানে যদি আমিও হতাম
শামিল, ওই রকম সুরে যদি পারতাম সব ছেড়ে-ছুঁড়ে গাছের
ডালে চলে যেতে,তবে নির্বোধ পাতার ফাঁকে ফাঁকে হিংসামুখর
পৃথিবীতে গাইতাম আপনার নির্বোধ বেমানান উদাসীন গান।তখন আমার একার সুখের প্রতি হয়তো হিংসা হতো,প্রাণ
অসুখী সব এই অসুখী পৃথিবীর।যতই তুমি দাও গালাগালি
তখন,আমি শুধু চিনতাম আপনার ভোর, চিনতাম না গোধূলি,
যা শুধু মানুষের চেনা, যেখানে নেই সূর্যোদয়, সূর্যাস্তের শোকে
বহু স্বপ্নের বহু পচাগলা মৃতদেহ, যেখানে আজও কাউকে
দেখিনি আমি প্রাণ-ছোঁয়া হাসি প্রাণ ছুঁয়ে হাসতে।।