আজো মনে পড়ে সারাদিনের কাজের সমাপ্তিতে তোমায় চিঠি লিখতে বসতাম,
লেখা শুরুর পূর্ব পর্যন্ত হৃদয়ের কথাগুলো কাগজেকলমে ছাপার জন্য যুদ্ধ করতো,
তখন ছিলাম বিশ বছর বয়সী টগবগে তরুণ প্রেমিক আর তুমি কিশোরী প্রেমিকা,
ছাত্রজীবনের পাশাপাশি টিউশন আর ক্রিকেট খেলেও বেশ আয়-উপার্জন ছিলো,
সন্ধ্যায় বন্ধুদের নিয়ে চুটিয়ে আড্ডা নজরুল এভিনিউ রোডে মৌ হোটেলে,
গরম চা,পুরী,আলুরচপ কখনো হোটেল মালিক নিজ খুশিতে সেমাই খাওয়াতেন,
স্থায়ী আড্ডাস্থল স্থায়ী আড্ডাবাজ কাস্টমার তাই ভালোবাসাযুক্ত খাবার,
যাইহোক আমি তখন ব্যাচেলর প্রেমিক মানে একটি রুম নিয়ে একাই থাকতাম,
এতসব ফালতু কাজ সেরে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাবো ঠিক তখনি হৃদয়ে আন্দোলন,
তোমাকে চিঠি লিখা হয়নি তাই প্রতিবাদী স্মারকলিপি নিয়ে হৃদয়ের বৈঠক শুরু,
অবশেষে হৃদয় উদ্যানে প্রস্ফুটিত কথাকলি কাগজে ছাপানোর কাজে ব্যস্ত কলমখানি,
আমি ছিলাম তোমার প্রেমের দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিক আর তুমি পাঠক,
অক্ষরের শব্দজাদু দিয়ে তোমায় হৃদয় কুটিরে রাখতাম যেন কেউ ছিনিয়ে না নেয়!!
প্রেমের রাতজাগা চিঠিতে মনের কথাগুলো লিখতে লিখতে হারিয়ে গেছি তোমার মাঝে,
সারাক্ষণ তুমি তুমি শুধু তুমি তোমার মিষ্টিমুখের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠতো দু’চোখে,
তখনো কবি পরিচয়ের তকমাটা অর্জন করিনি কেবল প্রেমাঙ্কুর বপন করেছি,
আউয়াল ভাইয়ের ঠিকানা ছিলো প্রেমের পোস্ট অফিস যেখানে চিঠি পৌঁছে যেতো,
বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ঐ আমলে অনেকটা ঢিমেতাল অবস্থার প্রতীক ছিলো,
দু’দিনের মধ্যে প্রাপক চিঠি পাবার নিয়ম অথচ তিন-চার দিন পরেও চিঠি পৌঁছুতো,
দেশ তখনো আধুনিকতার ছোঁয়ার বাইরে চিঠির আদানপ্রদান-ই ছিল প্রধান শক্তি,
তবে আধুনিক জগতের চেয়ে পুরাতন জগতের প্রেম-ভালোবাসা ছিলো মজবুত,
নিরেট সম্পর্কের গাঢ় বন্ধন ছিলো ভালোলাগা মানুষটির প্রতি অমোঘ টান ছিলো,
আজ সততার অভাব অনুভূত হয় নতুন যুগের আলোকসজ্জায় সজ্জিত পৃথিবীতে,
আধুনিকত্ব অনেকটাই কেড়ে নিয়েছে ভালোবাসার ধ্রুপদ সংগীতের সরলতা,
আচ্ছা বাদ দাও তো ওসব কথা, নিজেদের কথা না বলে অন্যকথা বলে কি লাভ বলো!
2020-05-18