নির্বাক মানুষের পরিচয়ে পরিচিত আজ রূপম নামের ছেলেটি,
প্রেমের অরণ্য গড়ে উঠেছিলো সেখানে শুধু নিশিতাকে ঘিরে,
রূপম তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগের মেধাবী ছাত্র,
শিক্ষকদের হৃদয়ে রূপমের স্থান ছিলো নিরেট সোনার মতন,
অনেকেই ভেবেছিলেন রূপম ডিপার্টমেন্ট এর রেকর্ড ভেঙে দিবে,
স্বর্ণাক্ষরে খচিত রবে তার নাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রসায়ন বিভাগে,
কিন্তু জীবন রসায়নের বিক্রিয়া তাকে কোথায় নিবে তা ছিলো অজানা,
নিশিতা অপরূপা অনন্যা এক পৃথিবীরূপে রূপমের সম্মুখে উপস্থিত,
রূপম তখন তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আর নিশিতা ইংরেজি প্রথম বর্ষ,
প্রথম দেখাই তার জীবনে এক পরিবর্তনের সূচি রচনা করেছিলো,
মেধাবী রূপমকে নিশিতাও ভালোবেসেছিলো রূপমের মেধার কারণে,
যদিও রসায়নের ছাত্র তবুও ইংরেজি সাহিত্যে বেশ দক্ষ ছিলো রূপম,
নিশিতার প্রায় মাটিছোঁয়া মুক্তকেশে রূপম প্রেমের কবিতা আওড়াতো,
বলিষ্ঠ ভরাটকণ্ঠে তুখোড় এক আবৃত্তিকার বসত করতো হৃদয়ে,
যার পরিচয় গুপ্ত ছিলো পৃথিবীর কাছে শুধু নিশিতাই ছিলো শ্রোতা,
বেশ মায়াবী হরিণের মতো রূপমের হৃদয় অরণ্যে ঘুরে বেড়াতো নিশিতা,
রূপম যেন মৃত্তিকাভূমিতে প্রেমের অজস্র সুগন্ধি বাগান তৈরি করেছিলো,
ততোদিনে তাদের প্রেমের বয়স তিন পেরিয়ে চারের দিকেই অগ্রসর,
ওদিকে সেশনজট রূপমকে কিছুটা পিছিয়ে দিলেও আনন্দের দিন আসছে,
বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেছে আগামী রবিবার ফলাফল,
নিশিতার সাথে দেখা হওয়ামাত্রই জানালো তার ফলাফলের ব্যাপারে,
অধীর আগ্রহে রবিবারের অপেক্ষা আর শিক্ষকতার স্বপ্নবিভোর রূপম,
নিশিতাকে জানালো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার শিক্ষকতার স্বপ্নকথা,
রীতিমতো সেই সোনালী দিনের আগমন রূপমের জীবন অধ্যায়ে,
নীল পাঞ্জাবী সাদা পাজামায় রূপমকে দারুণ দেখাচ্ছিলো সেদিন,
উজ্জ্বল চেহারার রুপম হাসিমাখা মুখে সূর্যসেন হল থেকে বেরিয়েছে,
রাস্তারমুখে উঠে হঠাৎ ভীড় দেখে বুঝে নেয় রোড এক্সিডেন্ট হয়েছে,
মর্মান্তিক অবস্থায় রক্তাক্ত আহত মানুষটিকে এম্বুলেন্সে তোলা হচ্ছে,
ততক্ষণে রাস্তা পেরিয়ে রূপম চলে এসেছে সেই এম্বুলেন্সের সামনে,
আকাশ ভেঙে পড়লো তার মাথায় স্ট্রেচারে উঠানো মানুষটিকে দেখে,
অশ্রুসিক্ত নয়নে উঠে পড়লো এম্বুলেন্সে যাওয়া হলো না বিশ্ববিদ্যালয়,
হাসপাতালে নেবার দু’ঘন্টা পর ডাক্তার বলে দিলো,”আই এম সরি”!!
স্বপ্নভাঙা রূপমের আর রেজাল্ট জানা হয়নি চিরদিনের মতো,
অনাথ ছিলো রূপম নিশিতা দুজনেই এই বাস্তব দুনিয়ার কঠিন গ্রহে,
যাকে নিয়ে সাজানো পৃথিবী সেই নিশিতা মেয়েটি আর নেই,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম রসায়নের রূপম নামটি দুখী,
চিরদিনের মতো হারিয়ে যাওয়া রূপম নিশিতার স্মৃতি নিয়েই নিখোঁজ,
অবশেষে রূপমকে খুঁজে পাওয়া গেলো প্রায় পাঁচ বছর পর,
তার আবাস স্থলের নাম পাগলা গারদ যেখানে রূপম নির্বাক এক মানুষ,
শুধু অশ্রুধারা বয়ে যায় সেই স্বপ্নের মায়াবী আর হাসিমাখা মুখেতে।
2019-12-28