এখানে আকাশ রক্তের মত লাল,
ভুখা লোক সব হেঁটে চলে ওই, কাঁধে তোলা মহাকাল,
নবনীতা এখনো জেগে আছো ?
রক্তিম আসমান থেকে নেমে আসা সফেদ বৃষ্টি এখনো তোমায় বিষণ্ন করে?
বারান্দায় খাঁচায় থাকা পাখিরা এখনো তোমাকে গান শোনায়?
তোমার ডায়েরীতে কি তবু জমা হয় আরো ভালোবাসার গল্প?
সে গল্প আজ থাক, অন্য গল্প শোনো!
যে গল্পে রাস্তার ধারে সদ্য জন্মানো শিশুটিকে ফেলে মা চলে যায়,
যে গল্পে এক বৃদ্ধ পিতা নিজের কাধে তার অনাহারে মরা শিশুর লাশ বয়,
যে গল্পে কোন মাতার আদরের কন্যা শিয়াল শকুনের খাদ্য হয়,
যার মৃতদেহ পড়ে থাকে নর্দমার জঞ্জালে,
যে গল্পে মৃত মানুষের লাশের স্তুপে জমা হয় আরও লাশ,
নারী, শিশু, বৃদ্ধ কত নাম না জানা রহিম, করিম, জয়নব, হরিদাশের শব,
যে চোখগুলো একসময় স্বপ্ন দেখত গোলাভরা ধানের,
দুর্ভিক্ষের হাহাকার নিয়ে স্থির সেই চোখগুলো তাকিয়ে থাকে তপ্ত নীল আকাশের দিকে!
তারপর তমশাময় কোন এক রাত্রিতে লাশের স্তুপে হামলে পড়ে শিয়ালের দল,
লালায়িত দাত, আর তাদের লাল চোখের মাঝে লাশগুলো দেখে তোমাদের সমাজের আসল রূপ!
সেখানে কি ওরা তোমাকে দেখতে পায় নবনীতা?
বাসি লাশগুলো শিয়ালের আনন্দভোজের শব্দ তোমার কানে পৌছায় না,
আনহারে মরা শিশুটির মাতার ক্রন্দন তুমি শুনতে পাও না,
ধর্ষিতা কিশোরীর কাতর আর্তনাদ –
ভুখা মানুষের চিৎকার, জনতার স্লোগান কিংবা গুলির শব্দ-
তোমার গানের সুরে সবকিছু ঢাকা পড়ে যায়।
তবু বয়সের ভারে ঝুঁকে পড়া মাঝি করিম আলীর অশক্ত হাত এখনও বৈঠা বায়,
সহসা সভ্যতার বিষবাষ্পে হিরোশিমার বিষ্ফোরন থেকে উঠে আসা দানবের হুংকারে তার হাত এখনও কাঁপে না,
বৃদ্ধ কন্ঠে বজ্রনিনাদ “হুশিয়ার মাঝি, ভয় নাই”
সেই ডাকে ঘুম ভাঙে তোমার,
ঘুমের রেশ কেটে যাওয়া আয়ত নয়ন দুটি মুছে
শোবার ঘরের জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে তুমি বল
” কি হলো?”
উত্তর আসে না!
তবু এই নীলাভ আকাশ, সফেদ বেডরূম আর পাখিদের গান নিয়ে তুমি ভালো থেকো নবনীতা।
আমি মিশে যাব ঐ ভুখা মানুষের দলে,
হাঁটব সূর্যদয়ের পথে, কাধেঁ তুলে নেবো মহাকাল!