শোনা গেল আমরা নাকি মরে গিয়েছি-
প্রস্তরময় কবর, চিতাভশ্ম কিংবা ক্রসের মিছিলে আমরা মিশে গেছি মাটিতে,
উষ্ণ কিংবা শীতল মাটি, মায়ের স্পর্শের মত নরম কাদামাটি-
যে মাটিতে তপ্ত রদ্দুর জন্ম দেয় ধানের ভ্রুন.
ধুঁকে ধুঁকে মরে আমরা সেই ফসল তুলে দেই মহাজনের ঘরে,
সর্বনাশের মত নেমে আসা ঈশ্বরের অশ্রু ধুয়ে নিয়ে যায় আমাদের বসত-
ক্লিষ্ট মুখে তাকানো বধূর ক্ষয়ে যাওয়া চেহারা,
ক্ষুধার্ত মৃতপ্রায় সন্তানের কান্না মস্তিষ্কে নিয়ে আমরা ফিরে যাই জমিতে,
দৃঢ় হাতে ধরি আমাদেরই অস্থি দিয়ে তৈরি লাঙলের হাল-
পৃথিবী সুজলা হয়,
পৃথিবী সুফলা হয়,
কেবল আমাদের হাড় মিশে যায় মাটিতে,
কেবল আমাদের সন্তান খাদ্য হয় শকুনের,
কেবল ধর্ষিতা হয় আমাদের স্ত্রীরা-
শুধু ক্ষনিকে অতি দূর হতে ভেসে আসা ফিসফিসে শোনা যায়
আমরা নাকি মরে গিয়েছি ।
পর্দার আড়াল হতে তোমাদের সমাজের ঈশ্বরেরা সুরা পাত্রে চুমুক দিয়ে বলেন-
ওরা কারা?
মরে যাক যত জঞ্জালের দল,
পৃথিবী পবিত্র হোক।
খবরের কাগজ ভরে যায় উন্নয়নের গল্পে-
শুভ্র দেয়ালে লেপ্টে থাকে সিনেমার পোস্টার-
আর লাল নীল বাতিতে ছেয়ে যায় বিপণী বিতান।
শুধু রাস্তার পাশে জীর্ন বস্ত্রে পড়ে থাকা বুড়ি মা টা জানে
তার সন্তানের কথা-
যার পাথর কুঁদে বানানো দেহ ফসল তুলতো গুদামঘরে-
কিংবা সেই ভিখারী ছেলেটি,
যার বাবাও ছিলো মরে যাওয়া মানুষের দলে।
সব ঢাকা পরে যায়, সব মুছে যায়-
শুধু ক্ষনিকে অতি দূর হতে ভেসে আসা ফিসফিসে শোনা যায়
আমরা নাকি মরে গিয়েছি।
তবু আবার বর্ষা আসে,
মাতাল হাওয়ায় সাইরেনের মত বাজে আমাদের নবজন্মের কান্না।
হাড় মিশে যাওয়া মাটি থেকে জীবনের জয়গানে উত্থিত হয় হাজার রঙিন ফুল-
শুধু সেই ফুল জানে আমরা মরি নাই,
শুধু এই মাটি জানে আমরা মরি নাই,
হাজার বছর ধরে ঝড়ে পড়া বর্ষা জানে আমরা মরি নাই।
যুগে যুগে আমরা ফিরে আসি ক্ষুদিরাম, তিতুমীর কিংবা নুরুলদীন হয়ে,
শোনো সমাজের ঈশ্বরেরা,
আমরা আবার ফিরে আসব-
এই ভূমিতে আমাদের পবিত্র পা ফেলে শুদ্ধ করব পৃথিবীকে,
সেদিন তোমরা পালাবার পথ পাবে না।