আমি এখানে কয়েকশত শতাব্দির বন্দি
সমস্ত মুগ্ধতা লুট করে একজন সম্পূর্ণা লীলা ম্যাডাম
কালো অবয়বে প্রগাঢ় কাজল লেপ্টে অন্ধকারে ঢেকে দিয়ে গেছে শিকের কুঠুরি।
ধূলোর স্তরে স্তরে বাধাগ্রস্থ আকাশ আর বিষণ্ণ কুমারিত্ব হরণ করে চৌকষ সে নারী শিল্পের সুষমায় পাঠ করে ছেলেবেলা-
তাঁর এবং আমার ছেলেবেলা
আমাদের ছেলেবেলা খোলা পরে আছে অভিমানী হোরোডোটাসের ইতিহাসের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায়
গ্যালিলিওর মতো হত্যার প্রকোষ্ঠে তবুও কিছু জাদুকরি এসেন্সে মিশে আমাদের প্রেম, রোমান্স, হিমায়িত বকুল অভিন্নতার মাঝেও আমরা কি দারুণ রকম ভিন্ন ।
লীলা, আপনি কি জানতেন আপনার মতো আমিও আসবো
আপনি কি বুঝতে পেরেছিলেন কুমারী পূজার ব্রতে আপনার মতো ভূল করবে অন্যকেউ
অজস্র মানসিক শ্রমে যেমন শাড়ি কিনেছেন দূর্মল্যে
এতটা মূল্য অন্য কেউ দিতে পারে ?
অন্ধকারে এমন জোসনা ফোটালেন, আমি অন্ধ হয়ে গেলাম অথচ ব্রত পার্বনে আমি ঠিকঠাক প্রিয় মুখ খুঁজে নিতে পারতাম।
ম্যাম, পারদের সামনে আকাশ ধরুন
জলের উপরের স্বচ্ছ্ব আকাশ কি ধরা যায়
অথবা আমার উদ্ধত অভিমান, আত্মগোপনের একান্ত প্রয়াশ বর্ণিল বাজারী আয়না কি পারে দেখাতে?
আমার উত্থান ও পতনের মধ্যরাত, পানশালার মাতাল প্রহর গুনে গুনে আপনি ক্লান্ত
সর্বস্ব খোয়ানোর কুহকিনী মায়ায় সিদ্ধ যে হৃদয় বারবার পুনর্বার তাকে কেনো হারাবার ভয় দেখানো!
পরাজিত আপনি আত্মগত অতীত নিয়ে
পরাজয়ের ঝুমঝুমি বাজানো বন্ধু করুন প্লিজ।
কয়েকটা চৈনিক সভ্যতা পতনের পরেও টিকে আছে চীন, প্রাচীনত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে হিমালয়
বিলুপ্ত বিশুদ্ধ আকাশ বিক্রি হবার পরেও ছেলেবেলার ঘুড়িটা এখনও আকাশের বারান্দাতেই উড়ে।
আমার এ্যালামেন্ডা, লিন্টিনা এখনও ফোটে
শিফন শাড়ির নিচে কাচুলির ফাঁসে স্থির স্তন
হাম্মুরাবি কোডের সমস্ত শিলালিপি পদ্মনাভের চক্রে অঙ্কিত তারপরেও বলছেন আমি মুক্ত
বন্ধনহীন, বল্গাহীন, অসীম আমার অহমের গতিপথ!
এখানে রেস্তোরার কয়েক শতাব্দির উনুনের তাপ
মুখরোচক বাণীবন্দনায় গুপ্তহত্যার মতো খাবার
রক্তপাতের ধারায় বোতল ঠেকিয়ে পথিকেরা বসে সিগ্রেটের সাথে সুপেয় আমাকে পান করবে।
মোল্লা-পুরুতের শ্লোকে ভেসে আসে বিলুপ্ত ইতিহাস
যখন আমাকে হত্যা করা হতো, পাঁজর খুলে গুনে গুনে ঠেসে দেয়া হতো পৌরাণিক পাথর।
সীসার আরকে সিল করা হতো আমার চোখ-
না দেখতে দেয়া হতো, না ভালবাসতে
বলতে দেয়া হয়নি কখনই, যা আপনি বলছেন নিশঙ্ক
ব্যাপ্তিহীন দেয়ালে দেয়ালে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে আমার জিহ্বা
বিজ্ঞাপনের মতো শরীর সেঁটে দিয়ে আহ্বান করেছে এখানে বসুন
না এখানে আপনার মতো কেউ দাঁড়ায়নি, অন্যরকম অমানুষের প্রেমহীন বীর্যে ক্লেদাক্ত হয়েছে ভূমি ।
আপনার মতো কেউ বলেনি শাড়িটা পাল্টাও
এতটা বিস্তৃত আকাশ খেয়ে যায়নি কেউ ।
লীলা, আপনি আমার ভাঙ্গন,আমার পিপাসার অমিয়
বিদ্রোহের বাধা, তৃপ্তির শেষ কথা
আমি তৃপ্ত হতে চাইনি, বিশ্বাস করুন আমি আপনার চোখে আমার কালিমা দেখতে চাইনি
চাইনি আমার হাত ধরে রাখুন, মাথায় আশীর্বাদ করুন
দ্রোহ চেয়েছি, দুর্দান্ত শক্তিতে ছুটতে চেয়েছি হেরোডোটাস থেকে হাজার হাজার অগ্রগামী ঘোড়ায়
টাইমমেশিয়ে অনাগত কালের প্রতিবন্ধকতায়
প্রতিটি মাইল স্টোনে পুঁতে দিয়ে ব্যক্তিগত এসেন্স শেষ স্টপেজে চেয়েছি একাই ওড়াবো সবুজ রুমাল ।
লীলা, মুগ্ধতার শেষ বিন্দু থেকে আমার আত্মগ্লানী
অহংয়ে বাধা না হোন আপনি, কয়েকশত শতাব্দি ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে অভুঙ্গুর কংক্রিটে গেঁধে রেখেছি হৃদয়
না থাকুক ভালোবাসা, অন্তত আপনি বাঁচুন
আমাকে ছাপিয়ে আমার মতো কেউ আমাকে বাঁচাক চাইনা বরং কবিতা পড়ুন -আপনার ছেলেবেলা
আমার ও আমাদের ছেলেবেলা।
আমি কাঁদছি বিগলিত নদীর স্রোতে
লড়াইয়ের লাভায় ঢেকে দিচ্ছি প্রায়ন্ধকার কুঠুরির দ্বার
ছায়া থেকে সরে যান প্লিজ
ছায়ার বিস্তারে আমার দ্বাদশ জন্মের হিমায়িত কান্না।
লীলা, আপনি থেমে যান
থামুন ।