Review This Poem

আমি এক সৈনিক
*****************
সুজিত কুমার ভৌমিক

আমি এক সৈনিক
আমারও অনেক স্বপ্ন ছিলো,
এই পৃথিবীর সুন্দর মুখখানা
দেখার বাসনা ও মোর ছিল।

চাকরি পেয়েছি মাত্র মাস পাঁচেক।
সবেমাত্র সাকারের স্বাদ পেয়েছি যতেক।
চাকরি পেতে বাবার হয়েছিলো অনেক দেনা,
প্রতিদিন ছিলো পাওনাদারের
অনেক আনাগোনা।
প্রথম মসের বেতন চল্লিশ হাজার।
বেতন পেয়েই তুলে আনলাম পুরো বাজার।।

প্রথম চাকরী ইন্দোচিন বর্ডার,
নবনব শক্তি নিয়ে যুদ্ধ করলাম হার্ডার।
চোখের সামনে দেখলাম কতো না রক্ত।
তরতাজা প্রাণ চলে যাচ্ছে,
মায়ের কোল পরিত্যক্ত।

যেদিন আমাদের ক্যাম্পের উপর হামলা হলো,
বুঝতে পারলাম এবার,
মৃত্যু যুদ্ধ শুরু হলো।

উপর মহল বলে দিয়েছে,
বীরের মতো লড়তে,
বীরের মতো মরলে তবে,
ডাকবে শহিদ সম্মানেতে।।

বন্দুকটা তুলে নিলাম
ষোলই জুন রাতে,
বীরের মতো উচ্চ শীরে,
চোয়াল শক্ত দাঁতে।।

গুলি চালালাম লক্ষ করে,
বিরোধীদের ক্যাম্পে,
হঠাৎ আমি উল্টে গেলাম,
এক অতি লম্ফে।
বুঝতে পারি গুলি লেগেছে,
আমাট বিশ্বস্হ বুকে,
যে বুকেতে মায়ের স্নেহ,
মায়ের মমত্ব ছিলো এতদিন ঢুকে।।

তাজা তাজা রক্তগুলো গলগল করে,
ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে এলো,
কোন পরোয়া না করে।

আসতে আসতে লুটিয়ে পড়ি,
ব্যাঙ্কারের গায়ে।
চোখগুলো সব বন্ধ হয়ে
এল অক্ষি কোটরাগত হয়ে।

কিছুক্ষণ ভাবতে থাকি
মায়ের কোলের ধরনী-
“দোল দোল দুলুনী
রাঙ্গা মাথায় চিরুনী…”

আমি চলে গেলাম না ফেরার দেশে।
আমার দেহ নিয়ে আসা হলো অবশেষে।
কয়েকটি গান স্যালুট,জাতীয় সংগীত,
তারপর সব বিস্মৃতি, সব হয়ে গেল অতীত।

যেদিন আমার কফিনটা এলো,
তারাপুরের সেই সবুজ ঘেরা গ্রামে।
দেখলাম সবাই ঠিকঠাক আছে,
শুধু আমি নেই ধরাধামে।

পাথর চোখ দিয়ে দেখলাম–
মায়ের আর্তনাদ —
“কচিরে! তুই যে ছিলি যে মোদের
একমাত্র বাঁচার স্বাদ”।

আমার বাবা,ধপ্ করে বসে পড়ল,
সামনের দাওয়ার কাছে।
বাবার সাথে এই দাওয়াতে,
কাজ করেছি সকাল থেকে সাঁঝে।

কলাপাতার মতো কাঁপতে লাগলো
বাবার ঠোঁটটা।
বোবার মতো অনেক কষ্টে,
বলতে লাগল–
” বেটা– আমার বেটা–”

আজ আমার পরিচয়,
আমি এক সৈনিক।
তবে শহিদ…
বলছে প্রাত্যহিক দৈনিক।।

guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments