এত সৌন্দর্য, এত আনন্দ, এত সুখ—
মাঝে মাঝে অসহনীয় বোঝার মতো মনে হয়
ইচ্ছে করে নিজেকে কাশবনের ছায়ায় আড়াল করে রাখি
যেখানে সত্ত্ব-রজঃ-তমঃ ও ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের কোনো
আশা-হতাশা-দুর্দশা, প্রেম-অপ্রেমের গল্প কিংবা কবিতা লেখা হয় না।
শুধু উলু ঘাসের আড়াল থেকে উঁকি দেয়
দুয়েকটা সবুজ ফড়িং— নির্ভয়ে রোমকূপে ডাক দিয়ে যায়;
আমি আঙুল ছুঁইয়ে দিই আঁধার বেলায়
সেই কবেকার এক তরুণীর ডাকে যেমন করে বাড়িয়েছিলাম হাত।
শরতের আলোড়নে পৃথিবীর মায়া বেড়ে যায়
হায়, মানুষের অন্তর তবু নারকেলের শরীর ভেদ করে জল ছুঁতে পারে না!
হেমন্তের কাঠফাটা রোদ্দুরের মতো তপ্ত মন নিয়ে ঘুরে বেড়ায়
কেবল শ্রাবণের মেঘমল্লার কভু জানা হয় না তাদের।
মাঝে-মাঝে এক্লা বাতারণের মতো ঘুরে বেড়াই আকাশ জুড়ে
নির্বিকার জলপিপির মতো স্থির হয়ে ভাবি,
এইসব ঠুনকো অনুভূতিদের চন্দন কাঠের মতো পিষে দিলে কেমন হয়!
কাঠের মতো তৈরি যার হৃদয়, রক্তের মতো লাল তার রঙ— ভেঙেচুরে চুরমার!
মানুষ শরতের ঝকঝকে নীল আকাশের মতো হতে পারে না,
কাশবনের বালুর মিছিলে তাদের কোনো ভূমিকা নেই।
যে চোখে জমে থাকে মোমের দেহের মতো রূপোলী তরল
সেই চোখে তারা ফিরে তাকায় না দ্বিতীয়বার।
প্রণাম মন্ত্রের ধ্বণি শোনা যায় যে কণ্ঠে, সেই কণ্ঠ পিছু ডাকে না কখনো।
যে হুড তোলা রিক্সাটা গলির শেষ মাথা ছাড়িয়ে চলে গেছে একবার,
সেই রিক্সার চাকা উল্টো ঘুরেনি কোনোদিন।
মানুষ মেঘের মতো ভেসে বেড়াতে জানে না,
মানুষ ঘাসফড়িংয়ের মতো সরলতা শেখেনি।
দেবশিশুর মতো হাসতে জানে না তারা।
মানুষ শুধুমাত্র ধরনীর তলে বাঁচতে আসে বহুকাল
তারা শেখে ‘অ’ এর অধ্যায়— অবজ্ঞা, অভিমান, অহংকার!
ক্রমশই হয়ে যায় গভীর এক উপত্যকাভূমি!
ইতিহাসের পাতায়-পাতায় লেখা হয়েছে,
জলপদ্মের মতো ভেসে বেড়ানো এই মানুষগুলোর কথা।
আমার হৃদয় নিংড়ানো অনুভূতিতে ইতিহাসের ছুঁয়াচে রোগ লেগে নেই
নেই কোনো ঘৃণা ও অভিযোগ; সবটাই ভালোবাসা
আর ভালোবাসায় অভিমান!
আমার জানা হয়ে গেছে, জীবন মানেই দুঃখ।
শারদ প্রভাতে সূর্যের কিরণে অবিচল আস্থার সুর ভেসে আসে
রাত্রির নক্ষত্রে আকাশ যতদূর ভেসে যায়—
আমার হাহাকার ততদূর পর্যন্ত প্রতিধ্বনিত হয়।
অসংখ্য অশ্রুধারা বুকের ভেতর বাসা বেঁধে আছে
মানুষ, আমি আর এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের লাল-নীল ধ্রুবতারা
মলয় হয়ে উড়ে চলে যাই অন্য কোনো পৃথিবীতে। তবু—
তর্জনী বাড়িয়ে দিই পৃথিবীর পানে,
অভ্যাস অথবা বদভ্যাসে।
2023-09-10