ফ্লন এর ৩৪ নং হাইওয়ে এক্সিট, বেরিয়ে স্টকহোম এ যাচ্ছি আমি।
নভেম্বর এখানে শীত নামিয়ে আনে।
গতকাল ডাকবিভাগের ভুলে গতমাসের চিঠি হাতে পেয়েছি!
দ্যাশ থেকে আসা চিঠিগুলোর বুক থেকে আগে গন্ধ নিয়ে নেই আমি।
অজান্তেই নিজের; লিখতে লিখতে গন্ধ ছড়িয়ে যায় চিঠির প্রতি শব্দে।
২০১২,০২ নভেম্বর আজ,চিঠি পড়’তে পড়’তে স্নায়ু সিথিল হয়ে যায়।
উড়িয়ে দেই প্রথমবার প্রিয়তমা বাংলাদেশ তোমার চিঠিটা।
তোমায় ভালোবাসি বলে গ্লাস ভর্তি রক্তমদ আর এফ.এম রেডিও জুড়ে আমার ধুমপানের গল্প।
বুকজোড়া সরকারি মর্গ, চোখজোড়া শ্মশানঘাট, নিঃশ্বাসে রেলপথ আর-
সদ্যবিদায়ী ট্রেনে হাহাকাররত কুলিমজুরের ক্রমাগত হট্টগোল।
বুকের ঘাম হতে চাওয়া আমার চোখ জোড়া নদী;
ক্রমাগত বহতা যে নদী তা উন্নয়ন নামক কথায় রং মেখে মৃত্যুফাঁদ।
তখন তুমি,হ্যা,নার্সিসাস তুমি ব্যস্ত! আমি অসহায় করাতকলে কাটা পড়তে থাকি,
তখন পকেটে আমার শেষ মার্সেনারী কবিতা, ১৬টাকা মাত্র! নির্ধারিত মুল্য।
বুক পকেটে মৃতপ্রায় বসন্ত, ২১পয়সা! ব্যাক পকেটে জীবনমৃত পুর্নিমা রাত!
অথবা,তুমিহীনতার ফটোগ্রাফে সুইডিশ ক্রোনা সরিয়ে শুন্য মানিব্যাগ!
গাড়ি চলছে ১৩০ কিঃমিঃতে।
জানো ক্যানো উড়িয়েছি চিঠি তোমার?
আজ চিঠির বুকে তোমার অপছন্দের আমলকী গন্ধটা জানিয়ে দেয়,
কেউ একজন তৃতীয় পুরুষ ছুঁয়েছে এ চিঠি।
“কে ভেতরে?” পকেটের দরজায় একটা ছোটগপ্পো আর উপন্যাসের অনিবার্য কড়া নাড়া!
আমি হেটেই দরজা খুলি আর ফ্রিজের দিকে মুখ ঘুরিয়ে “নানারকম স্বপ্নের বেচে থাকা” অনুষ্ঠান আনন্দঘন উদ্বেগে,
অন্যকেউ ঢুকে পড়ার আগ পর্যন্ত দ্যাখতে থাকি।
দ্য ব্লু অতি রোমাঞ্চে,স্নায়ু সিথিলতায় অচেনা ঘরে হঠাৎ ঘুম।
মাথার ভারে তুলোধুনো বালিশ।
বিছানায় গড়াগড়ি মৃত্যুদর্শি একাকীত্বে রাত ফুরোলেই ভোর।
অথচ প্রিয় একমাত্র প্রেমিকা আমার,প্রিয় স্বদেশ তোমার বুকে হায়েনার বসত।
আগাছায় ভরে গ্যাছে বনভুমি। এই শোকার্ত অঞ্চলে কেবল গভীর হয় রাত,
৬ পেগ ভদকায় উড়াতে বিশ্বসংস্থার অনুমোদনহীন শীতকার আমি আমাকে টেনে হিচড়ে সরকারি বেশ্যালয়ে ঢুকাই।
শুয়োরের সাথে মোকাবেলাটা নাকি কিছুটা শুয়োর হয়েই করতে হয়।
তবে জেনে রাখো আজ থেকে আমলকী আর ভালোবাসায় তীব্র অরুচি আমার।
হৃদয়নগরে রিফিউজি অনাহারী অনাহুত শিশুর আর্তচীতকার আর কিশোরীর আরক্তনয়ন শুদ্ধ ফিনাইলে-
ধুয়ে মুছে কেবল রতীক্রিয়ার উচ্চ মার্গীয় আন্তর্জাতিক লোকজ বিশুদ্ধতম শব্দভার।
প্রিভিয়াস চ্যাপ্টারে প্রিভিলেজপ্রাপ্ত “তুমি”; নেক্সট চ্যাপ্টার জুড়ে অকাল প্রয়াত হেমন্তের ফসলহীন রুক্ষ বুক।
2020-03-04