বাংলা কবিতা, আর্জেন্টিনা কবিতা, কবি সোয়েব মাহমুদ - কবিতা অঞ্চল
4.2/5 - (4 votes)

বুয়েন্স আয়ার্সের দেয়ালে লেখা” দারিদ্রতার কোনও ঈশ্বর নেই। ফুটবল হচ্ছে শোষিতের একমাত্র ঈশ্বর এবং তিনি একজন আর্জেন্টাইন।”

১৯৯৩ এর পর, বিধাতার ইচ্ছেতেই বন্ধ্যা নারী আর্জেন্টিনা নিয়ে লিখতে পারতাম অবলীলায়।অথবা বলা যায় সে গল্পটা ৮৬’র, যখন খোদ আর্জেন্টিনা দলের কোচ ,দেশের প্রেসিডেন্ট ইভেন ফুটবল বোঝে এমন কারো আশাবাদ ছিলো না এই দলটা দ্বিতীয় পর্বে যেতে পারে।

লিখতে পারতাম প্লেটস উপশহরের মাসিহার কথা, কিংবা লিখতে পারতাম ম্যারাডোনার দেশ নিয়ে। লিখতে পারতাম নব্বই এর কোয়ার্টার ফাইনালে যুগোশ্লাভিয়ার বিরুদ্ধে জেগে ওঠা গয়কোচিয়ার কথা।

লিখতে পারতাম সেমিফাইনালের অবিশ্বাস্য সেভের কথা কিংবা জার্মান ডাইভে ফুটবল ঈশ্বরের কান্নায় গোটা বাংলাদেশের স্বজন হারানো কান্নার কথাও।

লিখতে পারতাম বাবার কাধে চড়ে দ্যাখা ৯০’, বুরুচাগা, ম্যারাডোনা হয়ে ডুঙার পায়ের ফাক দিয়ে ৫৯ মিনিটের ক্যানিজিয়ার অবিশ্বাস্য রান থ্রু এবং গোলটার কথাও।

নাহ এসব কিছু বাদ দিয়ে লিখতে হচ্ছে একজন মানুষকে নিয়ে যাকে টানা হেচড়া করে রাস্তায় নামিয়ে দেয়ার পরেও সে একে যাচ্ছে ছবি। বলে যাচ্ছে ঈশ্বরের জুতো পায়ে দেয়ার অপরাধে ছেলেগুলোর একা হয়ে যাবার গল্প।

পৃথিবীর সবচেয়ে বাজে দল ,যারা জেতেনা বলে আরজেতেনা ট্রল হয়। যারা একের পর এক ব্যর্থতায় দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে যাচ্ছে পরাজিত হবার গ্লানি, গত ২৮ বছর, হ্যা মাঝে ঈশ্বরের জুতো পড়া মাসিহা ছেলেটা অলিম্পিক গোল্ড জিতেছে জিতেছে যুব বিশ্বকাপ, কিন্তু চাতক পাখির অপেক্ষা মিটছে না।

লিখতে হচ্ছে আমি কেন এইদল সাপোর্ট করি যারা জিতে নি, এ প্রশ্নের উত্তর, আসলে এর উত্তর জানা নাই, পৃথিবীর সবচেয়ে বাজে দল সাপোর্ট করা আমার বোধহয় এটাই নিয়তি বুঝলেন।

লিভারপুল সাপোর্ট করি বলে অপেক্ষা করতে হয়েছে ২৮ বছর ,ন্যাপোলি সাপোর্ট করি বলে অপেক্ষা করছি আর আর্জেন্টিনা -রক্তক্ষরণ এর যে অপেক্ষা সেটা জানি আরো বাড়বে, হয়ত জেতা হবে না এবারো ,হয়ত চিতকার করে কেঁদে ফেলবো 90,94,98 অথবা 2014 এরমতন।হয়তো বা না।বয়স হয়েছে তো তাই না।

সেই ম্যারাডোনার হাতে সাদাকালো ১৪ অথবা ১৬ ইঞ্চিতে বিশ্বকাপ আর ইতিহাস ভুলে না গেলে ৯৩তে শেষবার কাপ উচিয়ে দেখা আমরা চাইলেও তো জোরে কাঁদতে পারি না।

আজো জানি না, আসলেই জানি না এত এত অপেক্ষা করায় যে দলগুলো সে দলগুলোকেই কেনো ভালোবেসে ফেলি। কেনো বদলাতে পারি না ,স্ট্যাটিস্টিকালি সফল দলগুলোর হয়ে ভালোবাসা, হয়ত প্রেমিক বলে। হয়ত অপেক্ষার শেষে ভেজা চোখে হাসার মতন তীব্র অনুভূতি যার সাথে আপনাদের পরিচয় হয় নি তাই জানেন না আসলে কি যে আনন্দ হয়েছে সেক্সপিয়ারকে ভুলেও ফ্রয়েড পড়তে হয়নি বলে।

আসলে আমি পৃথিবীর সবচেয়ে বাজে দল আর্জেন্টিনা সাপোর্ট করি। আমি প্রেমিক তাই বলতে পারি না কেনো ভালোবাসি তার কারণ, শুধু অপেক্ষা করতে পারি অপমান আর গ্লানি সয়ে হাসতে পারি । শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি “ its worldcup final ,its higuen, just missed the open net , Shelley its a curse or…….

তবুও ভালোবাসি। প্রেমিকরা একটু বোকাই হয় জানেন তো।আর্জেন্টিনা লিভারপুল আর ভালোবাসায় আমি কখনো পরাস্ত হই নি জানেন?

হেরে যেতে যেতে অপেক্ষায় শিখেছি এ মার আমাদের খেতেই হবে , হয় একা গিয়ে প্রেমিকের মতন লড়ো না হয় লড়তে লড়তে মরে যাও তবুও হাসো।

পরাজিত প্রেমিক আর জয় নিয়ে হাসতে না পারা পরাস্ততায় কিন্তু অনেক তফাৎ এটা ওরা বুঝবে না, ওদের পেট ভরা, বমি করে ফেলবে একটু পর, ওদের নিয়ে ঠাট্টার হাসি হেসো না। ওদের পাশে দাড়াও দাড়িয়ে বলো আর্জেন্টিনা পৃথিবীর সবচেয়ে বাজে দল ,আপনাদের ট্রলে ওরা আরজেতেনা তবে জানেন পরাস্ত’ও হয় না, দপ করে জ্বলেই নিভে যায় না, বুকের খুব কাছে খুব পাশে জেগে থাকে, যেমন থাকে চে গুয়েভারা আর থাকে বারবার মার খেয়েও, পরজীবী পরভোজী বুদ্ধিবেশ্যা বুদ্ধিজীবিহীন নতুন দিন আসবেই স্বপ্ন দেখা কবিতার লাইন।

কি কিছু বুঝলেন! আর্জেন্টিনা পৃথিবীর সবচেয়ে বাজে দল, এবং আমি এই দলটাকেই কারনহীন ভালোবাসি।

সফলতাই মূল মন্ত্র হলে আমি তো চেতনার ফেরিওয়ালা হতাম , না হয় অনুবাদক হতাম, হতাম বিদেশী গল্প অবলম্বনে লেখা থ্রিলার লেখক, টেন মিনিটস ইশকুল নামক অথর্বতার বড় অংশ, না হয় হতাম ফুড ভ্লগার, আর না হলে ক্যামেরার ভিতর ক্যামেরা বসিয়ে আবোল তাবোল নাটক বানিয়ে হতাম পরিচালকপুরস্কারপ্রাপ্ত কিংবা হতাম লিষ্টিধারী সাপ, বুদ্ধিজীবী সাপ! কবিতা লিখতাম না বোকার মতন ,আর্জেন্টিনার মতন- অপেক্ষায় থাকতাম না নিশ্চিত পরাজয় জেনেও।

guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments