১.
একদিন পাখি হব
একদিন আমি পাখি হব
যাবো চাঁদের দেশে,
মা’কে খোকন জড়িয়ে ধরে
বলছে মৃদু হেসে!
জগৎটাকে দেখব আমি
ঘুরব আপন মনে,
মেঘলাকাশে চাঁদের পাশে
থাকব প্রতিক্ষণে।
কেমন করে সুঁতো কাটে
ওই না চাঁদের বুড়ি,
সে সব কথা জানব আমি
সারাটা দিন ঘুরি!
অবশেষে ঘুরব আমি
ফুলপরীদের সাথে,
কেমন করে দিবারাতি
আনন্দেতে মাতে!
মা’গো তুমি ভয় পেয়ো না
আসব ফিরে বাড়ি,
মনের আশা পূর্ণ করে
খুবই তাড়াতাড়ি।
২.
বুড়ি ভূতের ঝি
বাঁশ বাগানে বসত করে
বুড়ি ভূতের ছা,
চাঁদনী রাতে দেখা দিলে
চমকে ওঠে গা!
হরেক রকম সুরে ওরা
নিত্য করে গান,
বাদ্যযন্ত্রের কলতানে
খোকন পাতে কান।
উচ্চস্বরে বলে ওঠে
বুড়ি ভূতের ঝি,
আমরা হলাম হাজার লাখো
করবে মোদের কি?
ভূতপ্রেতেরা গল্প করে
ভাঙবে যাদের ঘাড়,
সামনে গেলে একটি লোকও
পার পাবে না আর।
এমন কথা শুনে খোকন
দিলো মধুর ঘুম,
মা জননী স্নেহবশে
গালে দিলো চুম!
৩.
সিংহ মশাই
সিংহ মশাই সিংহ মশাই আপনি বড় কসাই;
জঙ্গল পুড়ে ছাই হয়েছে নতুন রাজা বসাই।
যিনি হবেন দলপতি,
ভালো তাঁরই মতিগতি।
এবার সরে দাঁড়ান দেখি তারে আমরা আনি;
রাজা হবে বিজ্ঞ বিড়াল সবার চেয়ে জ্ঞানী!
বিড়াল কারো প্রাণ কারে না কাঁটা পেলেই খুশি;
একটু দুধের জন্য রোজই সেও যাবে তুষি।
সিংহ সবার প্রাণটা কারে;
গায়ের জোরে বারেবারে।
রাত্রি জেগে বিজ্ঞ বিড়াল দেখে রাখবে সবই;
যতক্ষণ ওই পুব আকাশে না উঠিবে রবি।
শাসক যদি শোষণ করে পূর্বের দিনের মতো,
আঘাত দিয়ে গায়ের মাঝে করে দেয় গো ক্ষত।
তবে কে চায় সিংহের শাসন;
হোক না তারই বজ্রভাষণ!
আমজনতা বিপথগামী বিচার দেবে কারে;
রাজ্যটারে গায়ের জোরে করে তারে-নারে।
৪.
বাবার ছায়া
বটবৃক্ষ হয়ে বাবা
ছায়া দিলে কত,
এই দুনিয়ায় কার বা আদর
তোমার স্নেহের মতো!
মানুষ আমার হতেই হবে
দিতে শত পণ,
করতে হবে লেখাপড়া
দিতে হবে মন।
আঙ্গুল ধরে হাঁটতে নিতে
পড়ে গেলেই কাঁধে,
সন্তানেরই সুখের তোমার
অন্তর আশা বাঁধে।
তোমার ঘামের গন্ধ আজো
সুবাসিত ধূপ,
তোমার বলা গল্পছড়া
শুনতাম হয়ে চুপ।
৫.
আমার ছেলেবেলা
শফিকুল মুহাম্মদ ইসলাম
ডাংগুলি আর গোল্লাছুটে
খুশির মাতন ছেড়ে।
ভরদুপুরে পাখির ছানা
আনতাম মিলে পেড়ে।
বাউণ্ডুলে স্বভাবখানা
থাকত নিজের মাঝে;
বন-বাদাড়ে খোলামাঠে
ঘুরতাম সকাল-সাঁঝে।
স্কুল ফাঁকিটা দিতাম প্রায়ই
পেট ব্যাথারই ছলে,
একটু পরেই খেলাধুলায়
বটবৃক্ষেরতলে।
সন্ধ্যা বেলায় বাড়ি ফিরে
শুনতাম কথকতা,
সেই দিনগুলো কোথায় গেলো
মুক্তির স্বাধীনতা।
৬.
হীরক রাজার দেশে
সোনামণি ঘুমের আগে
শুনে শুধু গল্প,
ভূতপ্রেতের আর চাঁদের বুড়ির
করে নানা কল্প!
হীরক রাজার দেশে ছিলো
সোনাদানা ভরা,
ভূতপ্রেতেরা বেঁধে বাসা
জমায় আসর ওরা!
চাঁদের বুড়ি মিষ্টি হেসে
দুষ্টুমিতে বলে,
আজকে ভূতে ভাঙবে যে ঘাড়
হরেক রকম ছলে!
হীরক রাজা রাগের বশে
ভূতকে দিলো তাড়া,
ভূতের সর্দার রেগে গিয়ে
বললো রাজা দাঁড়া?
৭.
খোকন সোনা
ঘাস ফড়িংয়ের দেশে চলো
আমায় নিয়ে তুমি,
আকাশ থেকে দেখব আমি
সাগর মরুভূমি।
খোকন সোনা গাল ফুলিয়ে
বাবার সাথে আড়ি,
প্রতিদিনই দেরি করে
কেন ফিরে বাড়ি?
ইচ্ছে করলে যায় না দেখা
আমার বাবার মুখ,
একটুখানি দূরে গেলে
হারিয়ে যায় সুখ।
কেউ করে না বাবার মতো
আমায় একটু আদর,
দুষ্টুমিতে মেতে থাকলে
বলে সবাই বাদর।
ঘুম পাড়ানোর গান শুনিয়ে
কেউ পাড়ায় না ঘুম,
বাবার মতো আদর করে
দেয় না আমায় চুম।
৮.
চাষার ছেলে
বাংলার চাষা দেশের আশা
করে তারা চাষ,
অন্ন যোগাড় করছে সবার
খেটে বারোমাস।
রোদ বৃষ্টিতে তার দৃষ্টিতে
কৌতুহলী মন,
কষ্ট শেষে যাবে হেসে
এই তো চাষার পণ।
নিত্য দেখি কত সে-কী
কষ্টে খেটে খায়,
রোদে পুড়ে তবু সুরে
পল্লীগীতি গায়।
তখন জানি চোখে পানি
চলে আসে ভাই,
যখন দেখি সবি মেকি
চাষার মূল্য নাই।
৯.
ব্যাঙের গৌরব
এই গাঁও আমার সেই গাঁও আমার
আমি মহারাজা,
কার বা এমন সাধ্য আছে
আমায় দেবে সাজা।
ব্যাঙের এমন কথা শুনে
সাপে ধরলো আড়ি,
আস্ত গিলে খাবে এবার
ফিরবে যখন বাড়ি।
সঙ্গী-সাথী নিয়ে চলে
ব্যাঙের কীসের ভয়’টা
অপেক্ষাতে সাপ বাবাজি
বাজবে কখন নয়’টা।
সাপটা হঠাৎ পিছ থেকে
ব্যাঙ বাবারে ধরে,
গাপুস গুপুস পেটে ভিতর
দিলো চালান করে।
১০
ঘাস ফড়িংয়ের দেশে
খুকুমণি সোনার খনি
ইচ্ছেডানা গায়ে,
তিড়িং বিড়িং নাচে ফড়িং
নূপুর পরে পায়ে।
তাই না দেখে শরীর মেখে
ঘাস ফড়িংয়ের দেশে,
দুষ্টুমিতে তার সংগীতে
যাবে কেবল হেসে!
সারাটা দিন মুখটা রঙিন
উড়বে পাখা মেলে,
বাতাস ছিড়ি মরুগিরি
যাবে পিছন ফেলে।
খুকির বায়না নিয়ে আয় না
দেখতে মুখের হাসি,
ছন্নছাড়া পাগলপারা
স্বপ্ন রাশিরাশি।
১১.
আমি মহারাজা রে
বোকার রাজ্যে বাস করি তাই
আমি বড় চালাক রে,
বউ পেটানো স্বভাব আমার
বললে কিছু তালাক রে।
শিয়াল মণ্ডিত ধূর্ত খুবই
শক্তিতে সে জিরো রে,
ব্যাঘ্র মামা বুদ্ধিবিহীন
গর্জনে তাই হিরো রে।
গরু মরলে শকুন যেমন
ওঁৎপেতে ভাই থাকে রে,
টাকার গন্ধ তেমন করে
আমায় পিছু ডাকে রে।
রক্তহীনা চক্ষু আমার
নাই মমতার বালাই রে,
ঘুষের অর্থে বাড়ি গাড়ি
এখন কোথায় পালাই রে।
দম্ভ ছিল চিরদিনই
আমি মহারাজা রে,
নিয়মনীতি উল্টে গিয়ে
দিল আমায় সাজা রে।
১২.
বিজ্ঞ বিড়াল
বিজ্ঞ বিড়াল বলছে কথা
দিচ্ছো কেন ঝাঁটা?
তোমরা খাবে মাছে ভাতে
আমার শুধু কাঁটা!
আমার কি আর তোমার মতো
মাঠে ফসল ফলে,
জীর্ণশীর্ণ বস্ত্র পরে
থাকি গাছের তলে।
পাহারা দেই ঘুমাও যখন
নিশিরাতের কালে,
যে তোমারে আঘাত করে
থাপ্পড় মারি গালে।
আমার এমন কঠোর শ্রমে
সুখি হলে তুমি,
প্রতিবছর জমি কিনে
চাষ করালে ভূমি।
তবু আমি ক্ষুধার জ্বালায়
যাবো কেন মরে?
বিবেক চক্ষু খোলে তুমি
দেখো লক্ষ্য করে।
১৩
টিয়াপাখি
প্রতিক্ষণে বলবে কথা
এমন আশা করে,
টিয়াপাখি পুষছে খুকি
বছর দুয়েক ধরে।
এটা খাওয়ায় ওটা খাওয়ায়
নিত্য দুধে ভাতে,
গাল ফুলিয়ে রাখে খুকি
কেউ ধরতে তার হাতে।
সেদিন হঠাৎ শুনতে পেলাম
বলছে কথা টিয়া,
খুকি ছিল তারই পাশে
হাতের পরে নিয়া।
খুশির জোয়ার উঠলো ভেসে
খুকির প্রাণে- মনে,
পাখির মতো থাকলে ডানা
ওড়ে যেতো বনে।
১৪.
আম কুড়াতে সুখ
বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ মধুমাসে
আম কাঁঠালের উৎসব আসে
বাংলার ঘরে ঘরে,
গাছে গাছে ফলের মেলা
পাখপাখালির নৃত্য খেলা
ঘ্রাণে আকুল করে।
ঝড়-বৃষ্টিতে আম কুড়াতে
ছেলে বুড়ো সবাই মাতে
পাগলপারা মনটা,
স্কুলে বসে ভাবনা শত
আম কুড়াতে সুখ যে কত
বাজবে কখন ঘণ্টা!
চারদিকে তাই ওই সুবাসে
ফড়িং নাচে বিজন ঘাসে
ইচ্ছেডানা মেলে,
বৈশাখ এলে মনে পড়ে
ঝড়-তুফানে কেমন করে
কুঠির নিয়ে খেলে।
আম কাঁঠাল আর কালো জামে
স্বজনপ্রীতি আর কি থামে
বিলিয়ে দিতে ভাগটা,
জামাই আদর নানা ফলে
উদর ভরায় ছলেবলে
কমবে নাকি রাগটা।
১৫.
অনাহারী
অন্ন তুলে দাও না আজি
অনাহারীর মুখে,
নিত্য তোমার বিলাসিতা
গরীব মরে দুখে।
এতিম মিসকিন অবহেলায়
ঘুরে পথে পথে,
মানব সেবায় হও আগুয়ান
তুমি দিশারথে।
প্রতিবেশীর খোঁজ খবর নাও
কেমন আছে তারা,
অনাহারে অর্ধাহারে
কতই দিশেহারা।
দিনে দিনে গড়ে তুমি
কালো টাকার পাহাড়,
চিন্তা নাই যে একদিন তুমি
জবাব দিবে তাহার।
দুই দিনের এই দুনিয়াতে
করে শত রঙ্গ,
সকলকিছু পাল্টে গিয়ে
খেলা হবে ভঙ্গ।
১৬.
ঈদ মানে ভাই
ঈদ মানে ভাই আনন্দেতে
উৎসবমুখর সবই
ঈদ মানে ভাই অপেক্ষাতে
ভোর বিহানের রবি।
ঈদ মানে ভাই নতুন জুতো
নতুন জামা গায়,
ঈদ মানে ভাই কোর্মা পোলাও
খোকা-খুকি খায়।
ঈদ মানে ভাই ঈদগাহেতে
নামাজ পড়তে যাই,
ঈদ মানে ভাই সবাই সমান
হিংসা-বিদ্বেষ নাই।
ঈদ মানে ভাই মহানন্দ
পাই যে ফিরে সুখ,
শহর থেকে ছুটে এসে
দেখলে মায়ের মুখ।
১৭.
ঈদের চাঁদ উঠেছে
আজকে ঈদের চাঁদ উঠেছে
আকাশেরই গায়,
সেই খুশিতে খোকা-খুকি
নাচন তোলে যায়।
পরবে তারা নতুন জামা
উৎসবমুখর সবই,
রাত পোহালে উঠবে যবে
পুব আকাশে রবি!
ফুল পাখি তাই বলে উঠে
এলো খুশির বান,
খোকা-খুকির গাইছে যখন
ঈদের নতুন গান।
রাতটা এত দীর্ঘ কেন
সকাল কখন হবে,
সেই চেতনায় তাদের চোখে
ঘুমটা নাহি রবে।
১৮.
শিক্ষার আলো
শিক্ষা হলো চোখের আলো
চোখ ছাড়া তো অন্ধ,
মূর্খ লোকের বিবেক থাকে
সকল সময় বন্ধ।
তোমরা যদি শিক্ষিত হও
দেশ করিবে আলো,
দূর হবে সব অজ্ঞতা আর
যত আঁধার কালো।
প্রতিবাদে প্রতিরোধে
হবে দেশের শক্তি,
দেশমাতৃকার তরে থাকবে
তোমার সকল ভক্তি।
নিখিল ভুবন গড়বে তোমরা
শিক্ষার আলো দিয়ে,
প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করে
সত্যের মশাল নিয়ে।
গুরুজনকে শ্রদ্ধাবোধে
দিবে শত মূল্য,
এই জীবনে তার মতো কেউ
নেই যে সমতূল্য।
১৯
খুকির বায়না
বৈশাখ এলে খুকি বলে
মন ভোলানো কথা,
দাও না টাকা পকেট ফাঁকা
তুমি যথাযথা।
বেশ করেছি পণ ধরেছি
যাবই এবার মেলা,
কিনব ঘুড়ি হাতের চুড়ি
দেখব নানান খেলা।
তবলা ঢোলে মাতন তোলে
নাচবে ওরা সেজে,
বাঁশের বাঁশি সর্বনাশী
নূপুর যাবে বেজে।
নাগরদোলায় মনটা ভোলায়
সুখটা পাবো শত,
বাউল গানে ছন্দ আনে
ব্যাকুল করার মত।
২০.
বৈশাখ এলো
বৈশাখ এলে মনে পড়ে
কদম তলার মেলা,
আউল বাউল গানের সুরে
করে দারুণ খেলা।
নাগরদোলায় চড়তে আজো
ইচ্ছে করে খুব,
মানব না আর কোনো বাধা
দিবই তাতে ডুব।
মাটির পুতুর হাত পাখা আর
নিব কিনে ঘুড়ি,
হরেকরকম কিনব আরো
খুশির নাইকো জুড়ি।
একতারা আর দুতারাতে
পাই যে ফিরে সুখ।
বৈশাখ এলেই বাংলা মায়ের
চিরচেনা মুখ।
২১.
বৈশাখ মানে
বৈশাখ মানে নববর্ষ
ঝড় বৃষ্টির দিন,
বৈশাখ মানে হালখাতাতে
শুধাবে সব ঋণ।
বৈশাখ মানে নতুন ধানে
কৃষক হাসবে হাসি,
বৈশাখ মানে কদম তলায়
বাজবে বাঁশের বাঁশি।
বৈশাখ মানে খুকির বায়না
যাবে হেঁটে মেলা,
বৈশাখ মানে পুতুল নাচের
দেখবে কত খেলা।
বৈশাখ মানে বৃষ্টির জলে
থাকবে ভিজা গা,
বৈশাখ মানে খুশির জোয়ার
উৎসব মুখর গাঁ।
২২.
আলোর দিশারি
বইয়ের পাতার গন্ধ যেন
এই পৃথিবীর সেরা,
তারই মাঝে জ্ঞানের আলো
সত্য দিয়ে ঘেরা।
বই পড়ে যে শিক্ষা নিলো
এই দুনিয়ার মানুষ
স্যাটেলাইটে বিশ্ব মুঠোয়
ওড়ে রঙিন ফানুস!
যত জ্ঞানী দার্শনিক আজ
শিক্ষা বইয়ের থেকে,
সেই জ্ঞানেরই দীপ্ত প্রদীপ
গেছেন তাঁরা রেখে।
কথামালার ফুলঝুরিতে
মধুর বাণী আছে,
তবে কেন বই না পড়ে
থাকছো তুমি পাছে?
পৃথিবীর সব শিক্ষা-দীক্ষা
শুধু বইয়ের মাঝে,
নিত্য তুমি বই পড়ে তাই
বুদ্ধি লাগাও কাজে।
২৩.
বাংলার স্বাধীনতা
স্বাধীনতার জন্য দিলো
লাখো মানুষ প্রাণ,
কী মহিমা কী চেতনায়
দেশের রাখলো মান।
বীর বাঙালি গর্জে উঠে
অস্ত্র ধরে হাতে,
বুকের তাজা রক্ত দিয়ে
সূর্য আনে প্রাতে।
বাংলা মায়ের আর্তনাদে
আজও কাঁপে বুকটা,
তাঁরই খোকা শহীদ হলো
দেখতে পায়নি মুখটা।
লাল সবুজের অবয়বে
পেলাম মুক্তির কেতন,
সেই পতাকা আগলে রাখি
ফিরে আসে চেতন।
২৪
মুক্তির স্বাধীনতা
স্বাধীনতা আমার কাছে
সবার চেয়ে সেরা,
স্বাধীনতা আমার বোনের
অবাধ চলাফেরা।
স্বাধীনতা মায়ের মুখে
উচ্ছ্বাসিত হাসি,
স্বাধীনতা আমার পিতার
স্বপ্ন রাশিরাশি।
স্বাধীনতা আমার কৃষক
মজুর শান্তির ছায়ে,
স্বাধীনতা আমার মাঝি
পাল তুলে তার নায়ে।
স্বাধীনতা আমার স্বদেশ
ভূমির মুক্তিসেনা,
স্বাধীনতা আমার তিরিশ
লক্ষ প্রাণে কেনা।
২৫.
শিশুর ছড়া
সন্ধ্যা হলে বাবার কথায়
পাটি পেতে বসি,
শিশুর ছড়া বলতো তিনি
উঠতো যখন শশী।
অবাক হয়ে থাকতাম চেয়ে
আমি বাবার মুখে,
এমন মধুর গল্প ছড়া
বলতো কতো সুখে।
আকাশ ভরা কতো তারা
চাঁদে দিতো আলো,
সেসব কথা মনে হলে
আজও লাগে ভালো!
তিনি ছিলেন সেরা শিক্ষক
জীবন চলার পথে,
মানুষ গড়ার কারিগর আর
পুণ্যে দিশারথে।
আজও চোখে ভেসে উঠে
বাবার মুখের হাসি,
দরদ ভরা কন্ঠ দিয়ে
বলতেন রাশিরাশি।
২৬.
পৌষের শীতে
এই প্রকৃতি সাজলো দেখো
কী অপরূপ সাজে,
রাতবিরাতে শিশির বিন্দু
পড়ে ভাঁজে ভাঁজে!
বনবনানী মুখরিত
পাখপাখালির নৃত্যে,
বুড়ো নানা হুঁক্কাটানে
উদাস করা চিত্তে।
কুয়াশাতে ঢেকে আছে
গন্ধ বিধুর ধুপটি,
পৌষের শীতে কে দেখেছো
এমন মধুর রূপটি!
ভোর বিহানে দূর্বাঘাসে
উৎসব মুখর সবই,
খেজুর গাছের হাঁড়িতে রস
গ্রাম বাংলার ছবি।
২৭.
মায়ের বুলি
একুশ আমায় শিক্ষা দিলো
রাখতে ভাষার মান,
বুকের তাজা রক্ত দিয়ে
দিতে প্রিয় প্রাণ।
বাংলা হবে রাষ্ট্রভাষা
মায়ের বুলির মতো,
রফিক শফিক সালাম বরকত
প্রাণ দিলো তাই কতো।
ফেব্রুয়ারির একুশ এলে
শহীদ স্মৃতির পাতা মেলে
গাই তাদেরই গান,
কৃষ্ণচূড়ার শাখে দেখি
রক্তটা লাল হয় যে সে কি
অসীম তাঁদের দান।
বাংলা আমার মায়ের ভাষা
শান্তি সুধার কতো আশা
তৃপ্তি আনে মুখে
প্রভাতফেরির মিছিল চলে
ভাষার প্রেমে আকাশ তলে
অন্তর ভরে সুখে।
একুশ মানে লড়াই করার
শক্তি আনে প্রাণে,
অধিকারের আন্দোলনে
মুক্তির জয়গানে।
২৮.
নতুন বইয়ের গন্ধ
নতুন বছর নতুন বইয়ে
কি আনন্দ মনে,
নতুন ক্লাসে নতুন সাথী
মিলবে তাদের সনে!
নতুন বইয়ের পাতার গন্ধ
এই পৃথিবীর সেরা,
নতুন বইয়ে মনটা বসে
হরেক স্বপ্ন ঘেরা।
নতুন শিক্ষক নতুনভাবে
দেবে হাতের লেখা,
সেই লেখাতে নতুন করে
নানান কিছু শেখা।
নতুন ছড়া নতুন গল্প
বইয়ের মাঝে পড়ে,
শিক্ষা -দীক্ষা নেবে তোমরা
মনটা উঠবে ভরে।
তোমরা যদি শিক্ষিত হও
কল্যাণ হবে দেশে,
আলোকিত সমাজ গড়ে
সুখি রবে শেষে।
২৯.
নববর্ষের শপথ
নতুন বছর এলো ফিরে
একটি বছর ঘুরে,
অঙ্গিকার হোক দুর্নীতি সব
ফেলে দেবো ছুঁড়ে।
রোগ শোকে আর দুঃখ ব্যথায়
আসে বিশের বিশ্ব,
তার’ই মাঝে দুর্নীতিতে
করলো মোদের নিঃস্ব।
লাশের মিছিল করে বিশ্ব
সকল দেশে দেশে,
এমন একটি কষ্টের বছর
কাটলো অবশেষে।
কর্মবিহীন কতো মানুষ
ঘুরছে পথে পথে,
মানব সেবায় ক’জনেই বা
আসছে দিশারথে।
এসো সবাই এই বছরে
নতুন শপথ করি,
হাজার দুঃখ ব্যথা এলেও
কেউ যাবো না ঝরি।
৩০.
ভোর বিহানে
বারবার যেন আসি ফিরে
বাংলার মৃদু শীতে,
যেথায় ভোরের সূর্য নাচে
তার আপন সংগীতে!
শিশির ভেজা দূর্বাঘাসে
নগ্ন পায়ে হেঁটে,
ভোর বিহানে পাখির রবে
যেতো প্রহর কেটে।
অগ্রহায়ণের উৎসবে ফের
পড়ে যেতো সাড়া,
চকিত সেই প্রেমিকার ন্যায়
দৃষ্টি নজর কাড়া!
কুয়াশাতে চারিদিকে
চিরচেনা রূপটি,
খেজুর গাছের রসের হাঁড়ি
খেয়ে যেন চুপটি।
৩১.
হেমন্তের ছোঁয়া
হেমন্তেরই ছোঁয়া পেয়ে
বদলে গেছে রূপ,
প্রকৃতি তার পরেছে হার
হয়েছে নিশ্চুপ!
নানান পাখি আসছে আবার
বাংলাদেশের পর,
মহানন্দে থাকবে তারা
বাঁধবে সুখের ঘর
ভোরের সূর্য ওঠে আসে
নবান্নেরই মাঝ,
শিশির ভেজা দূর্বাঘাসে
কি অপরূপ সাজ!
৩২.
শীতের হাওয়া
শীতের হাওয়া বইছে মৃদু
বাংলার আকাশ তলে,
পিঠেপুলি খাবো আবার
মা বানাবে বলে।
শীতের সকাল শ্যামল বাংলার
চিরচেনা সেই রূপ,
কুয়াশার ওই চাদর দিয়ে
প্রকৃতি রয় যে চুপ।
মায়ের হাতের পিঠে খেতে
মনটা আকুল করে,
মিটিমিটি সূর্যের তাপে
বসে পাটির পরে।
মা জননী মহা খুশি
আমন ধানের গন্ধে,
মাঠে মাঠে ফলেছে ধান
শিশির ভেজা ছন্দে।
খেজুর গুঁড়ের পিঠেপুলি
মা দেবেন যে আনি,
শীতের পিঠে খেয়ে আমার
উদর ভরবে জানি।
৩৩.
ব্যাঙের সর্দি
বোয়াল মাছটি বলো এসে
ডাকতে হবে বদ্যি,
তাড়াতাড়ি সবাই চলো
ব্যাঙের ভীষণ সর্দি!
ব্যাঙের ছানা সর্দিজ্বরে
করছে অনেক কষ্ট,
জ্বরের ঘোরে বারেবারে
মাথা নাকি নষ্ট!
তাই না দেখে ট্যাংরা পুঁটি
আনন্দেতে হাসে!
ব্যাঙের ছানা রাগে তখন
মুখ ব্যাংচিয়ে কাশে।
হাতুড়ে এক বদ্যি এলো
ওষুধ পথ্য নিয়ে,
শিয়াল মশাই ভাবছে বসে
কাল যে আমার বিয়ে।
ঝোঁপের ধারে খালের পাড়ে
গাছের নানান পাতা,
তারই নিচে ছিলো ব্যাঙের
ছোট্ট একটা ছাতা।
বৃষ্টি পড়ে ছানার পরে
কষ্ট করে কত,
বুড়ো ব্যাঙটি কোথায় গেলো
লজ্জায় মাথা নত।
৩৪.
ইচ্ছ করে
খোকন সোনা ভাবছে বসে
প্রজাপতির মতো,
ডানামেলে ওড়ে যাবে
ইচ্ছে করে শত!
শরতের ওই শুভ্র হাওয়া
লাগবে তারই গায়ে;
ক্লান্ত সময় বিশ্রাম নিবে
কাশবনেরই ছায়ে।
দেখবে বসে মেঘলাকাশে
সাদা মেঘের ভেলা,
সারা আকাশ জুড়ে ওরা
করছে শুধু খেলা!
পাখি হয়ে ওড়বে খোকন
কতই ইচ্ছে করে,
তাই না দেখে দুষ্টু বুড়ি
খুশিতে যায় মরে।
৩৫.
পাখির কলরব
শফিকুল মুহাম্মদ ইসলাম
ঊষা প্রাতে বাড়ির পিছে
ডাকে নানান পাখি,
এমন মধুর সুরে নিত্য
খুলে আমার আঁখি!
পাখপাখালির কিচিরমিচির
আমার সবুজ দেশে,
ভোর বেলাতে বের হয় পাখি
ফিরে বেলা শেষে!
পুকুর পাড়ে বিলের ধারে
হরেক পাখির মেলা,
মাছরাঙাটি ডুবে জলে
সাদা বকের খেলা!
দোয়েল টিয়া ময়না নাচে
আমার বাড়ির পাশে;
বুলবুলিটি মিষ্টি হেসে
দুষ্টুমিতে কাশে!
শীতের সময় বাংলাদেশে
আসে নানান পাখি,
মুগ্ধ হয়ে তাদের পানে
আমি চেয়ে থাকি!
৩৬.
নীলাকাশে মেঘে ভেসে
আমার যেতে ইচ্ছে করে
নীলাকাশে মেঘের তরে
দূর অজানায় ভেসে,
মেঘের ভেলায় খেলব খেলা
মরুগিরি করে হেলা
আসব ফিরে শেষে।
মহাসাগর দেখব আমি
থাকব না’কো আজকে থামি
আকাশ বাতাস পুরে,
জগৎটাকে দেখব আজি
ধরে আমার জীবন বাজি
সকল কিছু ঘুরে।
আকাশ থেকে দেখব মানুষ
উড়ায় যারা রঙিন ফানুস
আসতে মেঘের ভেলায়,
উড়ছে তারা কেমন করে
বৃষ্টি বাদল বায়ূর পরে
জীবন নিয়ে হেলায়।
বিশ্ববাসী দেখবে খেলা
জীবন নিয়ে কত হেলা
আমার আপন কাজে,
মঙ্গলগ্রহে গড়ে ঘাঁটি
দেখব তাহার আপন মাটি
নভোচারী সাজে।
৩৭
বৃষ্টি এলো
বৃষ্টি এলো টিনের চালে
শ্রাবণ দিনের কোলে,
বৃষ্টি এলো তরুলতায়
মনানন্দে দোলে।
বৃষ্টি এলো বাগ বাগিচায়
শিউলি ফুলের গন্ধে,
বৃষ্টি এলো খোকার ছাতায়
দৃষ্টি ভেজা ছন্দে!
বৃষ্টি এলো নদীর বুকে
আসবে নাকি ঢল,
বৃষ্টি এলো খেলার মাঠে
কার চোখেতে জল?
বৃষ্টি এলো পাড়াগাঁয়ে
শীতল করতে মন,
বৃষ্টি এলো বাতায়নে
উচ্ছ্বাস সারাক্ষণ!
৩৮.
এই দেশেরই ছেলে
এই দেশেরই ছেলে আমি
সাদাসিধে মন,
একদিন আমি মানুষ হব
করি শত পণ।
ন্যায়নীতি আর মূল্যবোধে
অন্তর করবো খাঁটি,
ধনি-গরিব সবাই মানুষ
এক সাথে তাই হাঁটি।
সৃষ্টির জীবকে বাসবো ভালো
পুণ্য হবে ঢের,
তা না হলে মরার পরে
পাবো জানি টের।
নেই ভেদাভেদ হিন্দু- মুসলিম
আছে যত ধর্ম,
মানুষইতো সৃষ্টির সেরা
ভালোটাই হোক কর্ম।
৩৯.
শ্যামলিমা ছবি
শফিকুল মুহাম্মদ ইসলাম
ওই দেখা যায় শ্যামলিমা
বাংলা মায়ের রূপ,
ওই দেখায় যায় পুকুরপাড়ে
মাছরাঙাটি চুপ।
ওই দেখা যায় সবুজ ঘাসে
ফোটছে কত ফুল,
ওই দেখা যায় কিশোরি তার
শুকায় এলোচুল!
ওই হেঁটে যায় পথিক বাউল
শুনি বাঁশির সুর;
ওই দেখা যায় রাখাল ছেলে
যাচ্ছে বহুদূর।
ওই দেখা যায় কিচিরমিচির
বাবুই পাখির ঝাঁক;
ওই শোনা যায় মধ্যরাতে
শিয়ালেরই হাঁক!
৪০.
বড় যদি হতে চাও
শফিকুল মুহাম্মদ ইসলাম
বড় যদি হতে চাও
মানুষের মতো;
লেখাপড়া শিখো তবে
সুখি হবে শত।
গরিবের তরে তুমি
হও আগুয়ান;
এতে তব কোনোদিন
ফুরাবে না মান।
মানুষ হলে দোষ কী
অমানুষ থেকে?
মিছে নয় সত সাজা
মনে কাদা রেখে।
সকলের তরে নম্র
হও সারাক্ষণ;
সুখে রেখে সুখি রবে
করো এই পণ।
______________
কবি পরিচিতি:
শফিকুল মুহাম্মদ ইসলাম, পিতা: মোঃ আব্দুল হামিদ, মাতা: মোছাঃ রাহেলা খাতুন। তিনি ১৯৯১ সালের ৮ ই মার্চ নেত্রকোনা জেলার, কলমাকান্দা থানার অন্তরগত গ্রাম বাউশামে সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কবি, শফিকুল মুহাম্মদ ইসলাম সুশিক্ষিত ব্যক্তি এবং অনলাইন ও অফলাইন সাহিত্যের একজন সুপরিচিত মুখ। কবিতায় তিনি নিবেদিত প্রাণ, বাংলা সাহিত্যের প্রায় সকল শাখায়ই তিনি লেখালেখি করছেন। তাঁর দুটি উপন্যাস, পাঁচটি একক কাব্যগ্রন্থ ও বেশ কয়েকটি যৌথকাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। আরো কয়েকটি উপন্যাস ও কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের অপেক্ষায় আছে। তিনি নিয়মিত দেশের আঞ্চলিক পত্রিকাসহ দেশ বিদেশের জাতীয় পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করছেন এবং দেশের প্রায় সকল জাতীয় পত্রিকাতেই তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে। “রূপসী বাংলার কাব্য” তাঁর সম্পাদনায় ২০২১ সালের বইমেলাতে প্রকাশিত হয়েছে। আরো কয়েক যৌথকাব্যগ্রন্থের সম্পাদনার কাজ চলমান। বর্তমানে তিনি দেশের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। রূপসী বাংলার কবি ও সাহিত্য একাডেমি, ঢাকা এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সম্পাদক এবং (দৈনিক দিকের বার্তা) নিউজ পোর্টালের সম্পাদক ও প্রকাশক। কবি, শফিকুল মুহাম্মদ ইসলাম, ছন্দোবদ্ধ কবিতা লিখে একজন ছান্দোসিক হিসাবে বেশ খ্যাতি ও পরিচিতি লাভ করেছেন। একাধারে তিনি লেখক, কবি, ছড়াকার, গবেষক, কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট, গীতিকার ও সুরকার।। ২০১০ সাল থেকে বাংলা সাহিত্যে তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে। গুণী এই ব্যক্তির জন্য বাংলা সাহিত্যে আমরা উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি।
প্রকাশিত বইসমূহ:
১. প্রেমানলে পুড়ে হৃদয় (কাব্যগ্রন্থ)২০১০
২. আমার প্রিয়ার আজ যে প্রিয়
উপন্যাস ২০১২
৩. পল্লী মায়ের ক্রোড়ে (কাব্যগ্রন্থ) ২০১৪
৪. অনিন্দ্য সুন্দরী (উপন্যাস) ২০১৭
৫.আমার ছেলেবেলা (কাব্যগ্রন্থ) ২০২০
৬. রূপসী বাংলার কাব্য (যৌথ) ২০২১
৭. স্বপ্নের সোপান (কাব্যগ্রন্থ) ২০২২
৮. হাওর পাড়ের কাব্য (যৌথ) ২০২২
৯. প্রেমের যাতনা (কাব্যগ্রন্থ) ২০২২
১০. হৃদ্যতার আলো (যৌথ) ২০২২
১১. শব্দের ফেরিঘাট (যৌথ) ২০২২
১২. বিবেকের দংশন- অমর একশে বইমেলা – ২০২৩.