Review This Poem

(উৎসর্গঃ এই মহামারি, এই কালের যাত্রা)

বন্দিনী সময় এখন আমাকে মুঠোবন্দি করে রেখেছে তার নিজস্ব করতলে।
দিনের পর দিন,রাতের পর রাত আমার এই করতল-লগ্ন-বাস।
আমার চারিদিকে ম ম করে মৃত্যুর অচিন সুবাস।

দুপুরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখি– ঝকঝকে সড়কের কাব্য,ধুলিশূন্য আকাশের উড়াল।
পাশের বাড়ির ছাদে শুকোতে দেয়া অপরিচিতার নীলাম্বরী কী সুন্দর উড়ছে–
যেন ডাকছে, আয় কাছে আয় – মেঘ-মিছিলের দোলায় দোলায়!

গলির ধারের ক্লেদজ-কর্কশ যৌবনগুলো ঝিম মেরে আছে কিছুদিন ধরে অতিমারির ঘা’য়ে!
সেখানে দাঁড়িয়ে,সন্ধ্যায়,গিটার হাতে গান গাইছেন ফ্রাঙ্ক সিনাত্রা,ডিলানেরা
নন্দনকাননে,মাধবীলতার ফুলে বৃষ্টির ঘুংঘুর বেজে ওঠার পর,
করোটি ভিজিয়ে দিয়ে নেচে উঠলেন সম্রাজ্ঞী কাদম্বরী– বহু যুগের অভিমান!

ঘরের সমস্ত আলো নিভে গেলে গীতবিতান জ্বলে ওঠে হাতের মুঠোয়– সময়ের মহুয়া-মুদ্রায়।
সেই চরাচর আগলে বসে থাকি– একা এক আত্মসর্বনাশ
সেই জলজ আলোয় পাঠ করি বিস্মৃতির ধুলোয় মোড়ানো ছিন্নপত্রাবলী,
হলদে জানালা খুলে দিয়ে রাত্রির প্রহরী হয়ে দাঁড়াই নিজেরই ছায়ার মুখোমুখি– মহাকাল।

সেই গ্রাম,ডাকাতিয়া নদী,সবুজ বালিকার দুলে ওঠা বেণীর আলপথ ছেড়ে এসে
অশ্লীল নগরে প্রবেশের পর,এই প্রথম আমরা অদৃশ্য ইঙ্গিতে থামলাম।

মৃত্যুর পর এই প্রথম কবরে শায়িতগণ মরণের স্বাদে কী-রকম বিভোর– স্তব্ধতায় মোড়ানো সময়ে!
সেখানে প্রাচীন নামহীন বৃক্ষের ডালে প্রগাঢ় শান্তিতে, সঘন সবুজে লুকিয়েছে কিছু ক্লান্তডানা–পরিযায়ী।
আর মাতৃছায়ার নিচে খাঁ সাহেবের সানাই রুগ্ন পৃথিবীকে সারিয়ে তুলছে তরঙ্গে তরঙ্গে…

ওমরের বাপের কণ্ঠে,যেন অতীত থেকে ভেসে-আসা ভোরের বিষণ্ণ আজানের পর,অনুভব করলাম–
উশৃঙ্খল কথা, ক্বফ ও রাষ্ট্র-প্রতিশ্রুতিহীন আমার নগরে ফিরে এসেছে ঝলমলে রৌদ্রদগ্ধ দিন।

guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments