4/5 - (1 vote)

আমার পিতার কোনও ঘর ছিল না। মিথ্যে আকাশের নিচে
আমরা ক’জন ভাইবোন আমাদের নির্বিকার জননীর ক্ষয়িষ্ণু
উত্তাপ ভাগাভাগি করে কোনরকম লতিয়ে উঠেছিলাম।
আমাদের দুধে-দাঁত যখন পোকায় কেটেছিল, তখন শুভ্রকেশ কুঞ্জ ডাক্তারের
বর্ণিল জলের দ্রবণ আমাদের কোমল জিহ্বাকে এলোমেলো করে দিত।
আর ভ’রা চৈত্রের নদীতীরে সারা বিকেল ঘাসফড়িং-এর ডানা ভেঙ্গে ভেঙ্গে
শেষ হতো আমাদের নিদারুণ ছেলেখেলা।

পিতামহ তাঁর অপরূপা বেহুলাকে অকালে হারিয়ে বহুকাল রূপকথার ভাঙ্গা ঘোড়ায় তেপান্তর কাঁপিয়েছিলেন।
ভীষণ এক ঝ’রো ঝ’রো কুয়াশার রাতে পিতামহ তাঁর নিজের ঘোড়ায় চেপে
শেষবারের মতো হারিয়ে গেলেন– আর কোনদিন ফিরে এলেন না।

তারপর যেতে যেতে..যেতে..এইসব বিধ্বস্ত পৃথিবীতে আমরা কেউ কাউকে খুঁজে পেলাম না।
ভ’রা স্বপ্নের চরে আমাদের যে বোন– একদিন হারিয়ে গিয়েছিল, তার চোখের অসম্ভব নীলিমা
আজও বেজে ওঠে বুকের ভেতর। আমার লাজুক সহোদরটি
একদিন সকলের অগোচরে ডায়েরির প্রতিটি পাতায় লিখেছিলঃ
‘ইচ্ছে হয়,হাজার বছর বাঁচি!’– সে এখন কোথায় আমরা জানিনা।

সেই কবে মায়ের দুধের নহর হিঁজলের মৃত কাঠের মতো ভেসে গেছে সময়ের স্রোতে।
আমাদের পিতা, অনেক জীবনের ভারে নত– আজ তিনি, চৈতন্যের পারে নিঝুম হয়ে আছেন।

ঊনিশ’একাত্তরে মা তাঁর চিনেমাটির তৈজস আর পাপপুণ্য বিষয়ক মরু-নবীদের উৎকীর্ণ বাণীসমূহ
তিনহাত মাটির নিচে লুকিয়ে রেখেছিলেন গভীর গভীরতর মমতায়।
শিউলীফুল-কানপাশা ভিজিয়েছিলেন আবেগের জলে।
মানুষ হত্যার পর, সেখানে বিশুষ্ক রক্তের ফুল পড়েছিল শুধু।

একবার মঞ্জুরী তার নকশী রুমালে লিখেছিলঃ ‘ভুলনা আমায়।’ তারপর
সব ভুলে– সব পথ ভুলে– তলিয়ে গিয়েছিল কোনও এক শ্যামাঙ্গের বুকের ভেতর।
শুধু আমারই বুকের তলা আজও শঙ্খচিলের শিশুটির মতো
কেঁদে যায় নিঝুম দুপুরের রোদে।

guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments