বাংলা কবিতা, মিছিল যেভাবে শুরু করতে হয় কবিতা, কবি রাকিবুল হায়দার - কবিতা অঞ্চল
3/5 - (2 votes)

ছেলেটা বললো, এভাবে চলতে পারে না, সবকিছু ভেঙ্গেচুরে যাচ্ছে,
তার এক হাতে চায়ের কাপ, অন্য হাতের মুঠো বন্ধ হয়ে আছে আক্রোশে,
উৎসুক জনতার মুখে প্রশ্নের প্রলেপ, বাকি অংশটুকু শোনার জন্য তারা কান পাতলো,
ছেলেটা বললো, যদি বলি যেটাকে ডানহাত ভাবছেন ওটা ডানহাত নয়,
সোজাসুজি বললে, আপনাদের শরীরে হাতের কোনো অস্তিত্ব নেই!
জনতার মুখায়াবয়বে স্বস্তি ফিরে এলো, তারা নিশ্চিত হলো ছেলেটির মাথা নেই!

ছেলেটা বললো, মিছিল চাই, প্রতিবাদ চাই, প্রতিটা হত্যার বিচার চাই,
স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চাই, ক্ষিধে পেলে খাবার চাই, নইলে মৃত্যু অনিবার্য!
জনতা এবার ছেলেটার দিক থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিলো, দুই-একজন সার্কাস দেখার লোভে তাকিয়ে থাকলো!
ছেলেটা বললো, একটা মিছিল চাই, অধিকার আদায়ের, নাগরিক অধিকার নিয়ে স্লোগান চাই!
একজন বললো, মশাই ভুলে যান, বিপ্লব আর এইদেশে হবে না, কি দিয়ে বিপ্লব করবেন,
ছেলেটা বললো, কেনো? কবিতা দিয়ে! এক হাজার কবি একসাথে মিছিলে দাঁড়াবে,
কবিতার ভেতর একের পর এক স্লোগান ঢুকিয়ে দেবে, মানুষের রক্তে উত্তেজনা আনবে,
মানুষ আবার তার অধিকারের জন্য লড়াই করতে শিখবে, মিছিলে ছিনিয়ে আনবে অধিকার,
পৃথিবীতে আর একমুঠো খাবারের জন্য আর কারও জীবন বিপন্ন হবেনা,
জিভে গরম ভাতের উত্তাপ নিয়ে মানুষ ঘুমোতে যাবে!
ঐ একজনই বললো, মিছিল? লোক পাবেন কোথায়? আর কবিদের কথা বলছেন?
কবিরাই এখন বিপ্লবকে অস্বীকার করে বলে, কবিতায় আর বিপ্লব হবেনা!
আর মিছিল নামলেও কারও কোনো প্রতিক্রিয়া হবেনা, সবকিছু আগের মতোই রয়ে যাবে!

ছেলেটা ফুটপাত ছেঁড়ে রাস্তায় গিয়ে দাঁড়ালো, হঠাৎ চায়ের কাপটা ছুঁড়ে মারলো সড়কের ঠিক মাঝখানটায়,
ভেঙ্গে চৌচির হয়ে গেলো, রাস্তায় ছড়িয়ে পড়লো টুকরো টুকরো কাঁচ,
রক্তের মতো আয়েশী ভঙ্গিতে গড়িয়ে পড়লো চায়ের বাকি অংশটুকু,
সশব্দে ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে পড়লো একের পর এক পুঁজিবাদী শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ি,
মানুষ হঠাৎ অস্থির হয়ে পড়লো, যে যেদিকে পারে ছুটোছুটি করতে শুরু করলো,
দূর থেকে বেজে উঠলো রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সাইরেন, ঘটনাস্থল লক্ষ্য করে যাত্রা শুরু করলো,
ছেলেটা খালিপায়ে রাস্তার মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ালো, পায়ের নিচে ভাঙ্গা কাঁচের টুকরো নিয়ে জনতার উদ্দেশ্য বলে উঠলো,
এই যে তাকিয়ে দেখুন, আমি একজন কবি, এই যে দেখুন সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মিছিল শুরু হলো,
আপনারা ভয় কাটাবার সকল মন্ত্র শিখেছেন কেবল, প্রতিবাদ করতে শেখেন নি,
মিছিলে যদি মানুষ ভাড়া করে আনতে হয়, তবে ওটা আর প্রতিবাদের মিছিল থাকেনা,
কেবল একজন মানুষ একটা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ালেই মিছিল শুরু হয়ে যায়,
কেবল একজন মেরুদণ্ডবাহক কবি দাঁড়ালেই মিছিল শুরু হয়,
তার স্লোগানের ভয়ে কেঁপে ওঠে রাষ্ট্রীয় সাইরেন, ছুটে আসে হুংকার!
যেদিন থেকে একজন কবির মতো ভয় পেতে ভুলে যাবেন,
সেদিন থেকে সকল অন্যায়ের কুশীলবরা আপনাকে, আপনাদেরকে, আমাদেরকে ভয় পেতে শুরু করবে!

guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments