বাংলা কবিতা, ক্ষিধে কবিতা, কবি রাকিবুল হায়দার - কবিতা অঞ্চল
4.4/5 - (9 votes)

ঠিক সন্ধ্যেবেলা…

প্রথমত মানুষটার খুব ক্ষিধে পেয়েছিলো, দ্বিতীয়ত তার কাছে কোনো পয়সা ছিলো না,
তাই আর কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে সে হাত পেতে দাঁড়ালো লোকটার সামনে!
লোকটার সেদিন মেজাজটা যাচ্ছেতাই বিগড়ে ছিলো, তবু লোকটার পকেটে পয়সা ছিলো,
অথচ সে ফিরিয়ে দিলো মানুষটাকে, মানুষটা খুব লজ্জা পেলো, মরে যেতে ইচ্ছে হলো তার!
বাড়ি ফেরার অনেক্ষণ পর লোকটা যখন খাবার টেবিলে, থালায় সাজানো বাটি উপড়ে দেওয়া সাদা ভাত,
লোকটার তখন ক্ষুধার্ত মানুষটার কথা মনে পড়লো, লোকটার মন খারাপ হলো, থালা সরিয়ে উঠে পড়লো,
বিছানায় স্ত্রীর পাশে শুয়ে ঘুম আর এলো না আজ, বারবার লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে হলো তার!
লোকটার স্ত্রী পাশে শুয়ে ভাবছিলো, তরকারিটা পছন্দ হয়নি বোধহয়, নিজের উপর খুব রাগ হলো,
ফ্রিজে মাছ-মাংস সবই ছিলো, কি দরকার ছিলো আগ বাড়িয়ে আলুভাজি আর ডাল করবার,
সে জানে লোকটার এসবই পছন্দ, তবুও, আজ অন্যকিছু রাঁধলেই হতো, মাছ অথবা মাংস!
তার চোখ ভিজে এলো, বেসিনে চোখ ধুতে যাবার সময় মরে যেতে ইচ্ছে হলো তার!
বেশ একটা ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে ডাইনিং টেবিল থেকে পানি নিতে এসেছিলো ছেলেটা,
দেখলো মা ভেজা চোখ নিয়ে বেসিনের দিকে যাচ্ছে, তারমানে আজও ওদের ঝগড়া হয়েছে!
অথচ আজ সন্ধ্যেবেলায় একটা ক্ষুধার্ত মানুষকে পেট ভরে খাইয়ে দেবার পর মনে হয়েছিলো-
পৃথিবীটা সুন্দর! সব তাহলে মিথ্যে! এই অদ্ভুত জীবনে বেঁচে থাকার ইচ্ছেটা মরে গেলো তার!
ফোনের ওপাশ থেকে সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছিলো মেয়েটা, একা!
এপাশে ছেলেটা যেনো কিছুই শুনতে পাচ্ছিলো না, প্রেমিকার সব কথা মিথ্যে মনে হচ্ছিলো তার!

পরদিন সকালবেলা…
সিলিং থেকে ঝুলছিলো মেয়েটা, মেয়েটা ক্ষুধার্ত ছিলো, প্রচণ্ড ভালোবাসার ক্ষিধে,
যা না পেলে, পৃথিবীর সব মানুষের মরে যেতে ইচ্ছে করে!

guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments