এক.
সব সময় মানুষ হেঁটে যায় না, কখনো কখনো শরীর হেঁটে যায়
কখনো কখনো শরীর হেঁটে যায় না, শুধু অঙ্গাবরণটি হেঁটে যায়
সব সময় ফুলের গন্ধ পাওয়া যায় না, কখনো কখনো আদিম
অরণ্যের সঙ্গে আদিম মানুষের মিলনের গন্ধও পাওয়া যায়।
ইলেকট্রিক শক দেওয়ার নামে একটা চিকিৎসা প্রণালি আছে
প্রতি সেকেন্ডে পৃথিবীতে তিরিশ কোটি মানুষকে সেই প্রণালিতে
শক দেয়া হয়। বলা হয় শক অন্তে তারা সকলেই শান্তিতে ঘুমোয়
ইলেকট্রিক শক দেওয়ার নামে একটা রাজনৈতিক পন্থা আছে
ঝযা শকথেরাপির নামে জগদ্বিখ্যাত এক কার্যকরী আরোগ্য পন্থাও।
দুই.
সময়টা মরা মানুষের চোখের মতো
উপমা হিসেবে মরা মানুষ গোলাপের চেয়ে ভালো
তখন বা এখন মুহূর্তটির মৃত্যু হয় টের পাই
প্রতিটি ছবির পাশে আমি এই কথা লিখে রাখি—
যেন কেউ ভুল করে না ভাবে; ভালোবাসার মৃত্যু হয় না
আমি গভীর রাতের স্টেশন মাস্টার হয়ে হাতে সবুজ লন্ঠন নিয়ে
শুয়ে থাকি প্ল্যাটফর্মে, কখনোই রেললাইনে নয়
শুয়ে থাকি আর ভাবি ট্রেনগুলো আসলে যায় না কোথাও
আসেও না কোথাও
এমন উৎকৃষ্ট ভাবনার ব্যাকরণ ভুলে আমি শুধু
চমৎকার এক শূন্যস্থানে ফিরে যেতে চাই।
তিন.
হস্তান্তরের আগে ও পরে আমি ছিলাম অথবা ছিলাম না
আমাকে লোহার শিকল দেখিও না
লোহার শিকল আদতে লোহার না-ও হতে পারে
তবু আমি ভয় পাই লোহা
আমি মোটেও বিপ্লবী নই, আম-মার্ক্সবাদীও নই
হস্তান্তরের পায়েস রান্নার আগেও ছিলাম না, পরেও না
পুকুরঘাটে বা রাজঘাটে রক্তের গন্ধে ঘুম আসে না আমার
শুধু পালিয়ে বেড়াই আমি
মাই লর্ড, আমি একজন পলায়নকারী মাত্র
নাগরিকত্বের কোনো দরকার নেইকো আমার
চালান করে দিতে পারেন আমাকে, কিন্তু ভুলেও
শিকল দেখাবেন না, কারণ প্রকৃত শিকল খুব ভয়ংকর
আমি ভারতীয় জাদুবিদ্যার ছাত্র, মনে রাখবেন স্যার!
চার.
তুমি তুমি করে অসংখ্য তোমার ভেতর দিয়ে যেতে যেতে
একসময় আমি আমার ভেতরে প্রবেশ করি আর
ডুবন্ত মানুষের মতো নাম খুঁজতে থাকি তোমার
আমি অশিক্ষিতের মতো শিক্ষিত হয়েছি
আমার চাকরি নেই, ক্ষমা করো আমাকে
আমার ধারণা নেই দুধসেবী মানুষেরা চিরকাল
বাছুরের অভিসম্পাত প্রাপ্ত হয়ে থাকে কি না।
পাঁচ.
আমাদের মারণাস্ত্রগুলোর নাম মহাভারত থেকে নেয়া
আমাদের শৌখিনতাগুলোর নাম মোঘল রাজদরবার থেকে নেয়া
আমাদের বিউটি পার্লারগুলোর নাম কালিদাসের মেঘদূত থেকে নেয়া
আমরা ধানক্ষেত থেকে কাব্যের নাম নিয়েছি
আমরা দুর্ভিক্ষ থেকে খুঁজে খুঁজে সংলাপ নিয়েছি উপন্যাসের
আমরা দাঙ্গার বাতাসে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করে করে
ঘুমিয়ে পড়ি চিরনিদ্রায়
স্নিগ্ধ বাতাস একমাত্র আমাদের সরিষার বিলেই আছে
তাই সেখানকার কাঁঠালগাছের মতো পুরুষ মানুষ
আশি বছরের কম বাঁচে না, নারীরাও তাই
আমার জন্ম এই সরিষা বিলের মিষ্টি জলে
কিন্ত আমার কথায় কোনো মিষ্টি নেই
মিষ্টি কথার জন্য এখন আমি
প্রেতের মতো বিলের বাতাসে ঘুরে বেড়াই।