শুনেছি তোমাদের বারান্দায় নাকি হেমন্ত এসেছে,
শীতের পর বসন্তও বুঝি এসেছিলো।
মুহুর্মুহু কুহু ডাক, শুকানো পাতায় জড়ানো রাস্তার শাল,
নারীর শিশির ছোয়ার খামখেয়ালি ঢঙ—এসব দেখে তোমরা বেশ ভেবে নিয়েছিলে,
ভেবে নিয়েছিলে তোমরা ভীষণ সুখেই আছো;
ঈশ্বর বুঝি তোমাদেরকেই এসব উৎসর্গ করেছেন,
তোমাদের চোখের পুড়ে যাওয়া পুলক দেখে বিস্মিত হয়ে ভাবি
আফ্রোদিতি এই বুঝি জ্বলে পুড়ে কিউপিডকে পাঠালো…তোমাদের প্রেমে পড়তে কোনো ক্ষ্যাপা দানবকে।
ভেবে নিয়েছিলে
তোমাদের চোখের তিরতির করে বেড়ে ওঠা অঙ্গারমণি,ওষ্ঠের আপ্তশ্রুতি,ভিজে ভিজে কাজল—এসব দিয়ে তোমরা প্রেমিক/প্রেমিকাকে মুগ্ধ করতে পেরেছো।
অথচ কি নৃশংস দেখো—
কোকিলের বুকের উষ্ণ পালকের তলে নৃত্য করা মাংসপিণ্ড,
বুকের ভেতর কোথায় বেধে দেয়া শৃঙ্গ হতে জর্জরিত হয়ে ভেসে আসা লালারস,
প্রত্যাখ্যাত পাতার মর্মর মর্মর রিক্ত প্রাণের লুপ্ত,
সুপ্ত রক্তস্রোত যেমন কবিতার মতো কিংবা শিশিরও
যে সেদিন ঢলে পড়েছিলো
চোখের পাপড়ির ডগা বেয়ে,উর্ধ্বস্রোতে;
যেন ঐ দক্ষিণের সমুদ্রেরই জলস্রোত।
ঈশ্বর তোমাদের কখনোই বুঝতে দেয় নি!
এনলিলের ঝড় তোমাদের হৃদয় উড়িয়ে নিয়ে গেছে কুকুরের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত পচা খাদ্যের নিকট।
টের পাও নি
শুভ্রকেশী বারান্দায় আজো আলো জ্বলে,সূর্যের আলোর বেণী চোখ পাকায়—মশাল যেরকম আঙুল খুলে দেখিয়ে দেয় বিকেলে
তোমাদের মধ্যে অবহেলিত কেউ বসে নেই চৌকির ওপর।
অবহেলিত কেউ না থাকলে অবহেলা টের পাওয়া যায়?
তোমরাই ভালো জানো।
তোমাদের করুণ আর্তনাদের খোঁচায় আমার ঠোট
ফেটে নেমে আসে বরফের ধ্বস,অনবরত।
যেন ফেটে যাওয়া তরমুজের ধার ঘেষে মৃদু মৃদু রক্তের গড়াগড়ি আমায় শোভা দিয়ে যায়,অনবরত।
তোমাদের এই করুণ আর্তনাদের বিকৃতি আমায় ঠেলে দেয় অনবরত
যাতে গিয়ে আমি বলি ঈশ্বরের নিকট,
প্রার্থনায় ডাকি তোমাদের যেন মুক্তি দেয়।
অথচ ফেরেশতাদের সাথে দীর্ঘ বৈঠক এর অন্তে হিম ভোরবেলায়,
মুহুর্মুহু মিনতি করবার পরও আমাকে ফিরিয়ে দিলো তারা,
যেমনিভাবে আমার কবিতা প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলো একদিন তোমাদের দ্বারা।