এ-ই তো ছিলো কাঙ্ক্ষিত রাত। আমার মলাটে
লুকোনো নিয়তির তোপধ্বনি প্রস্ফুটনের রাত।
বুকের কোণে উবু
হয়ে বসে থাকে তোমার অমন ওষ্ঠের তলে মসৃণ বরফের রেখা আর
আমার বুক খুবলে খাচ্ছে সহসা হারিয়ে যাওয়া
একটি আঙ্গুলের প্রতারণা।
কলমের মুখ খুলতেই কবিতার তেজস্ক্রিয়তার
আস্বাদনে ক্ষয় হচ্ছে আমারও।
এ-ই তো ছিলো চির আকাঙ্ক্ষার রাত;কাঙ্ক্ষিত রাত।
সহসা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে আছি বনের শেষ সারির কুঠির বাড়িটির পুকুরপাড়ে।
আমার একটি আঙ্গুল গিলে খাচ্ছে আরেকটি আঙ্গুল।
একটি ভোর গিলে খাচ্ছে আরেকটি ভোর।
একটি সন্ধ্যা কলকলিয়ে হাসছে আমার চোখের ওপর।
একটি চোখ গিলে খাচ্ছে আরেকটি চোখ।
বছর কয়েক আগে,
ওপারে সুপুরি গাছটির তলাতেই খেলা হতো কত আজগুবি উৎসবে
আকাশের নীল মাফলালের তলায় দাঁড়িয়ে আছে আমার মণিবিহীন চোখ,
চলে যাবো বলে।
বটগাছটির থেকে দূরে
প্রত্যাখ্যাত সরণীর থেকে দূরে
তোমাদের বাড়ির গলি থেকে দূরে
বহুদিন আমি আসবো না।
এমন নিঃসঙ্গতা খুবই চেনাজানা
এই মাটি আরো আরো চেনা,এই বৃক্ষ; এইতো
আর খানিক সময়। হারিয়ে যাবো নদীর মুখরিত ভীড়ে।
কি এক নিঃসঙ্গতা জেগে ওঠে চেতনায় বারেবারে,
নীরবতাই সবথেকে বড় সঙ্গীত এ-ই বুঝি সত্য?
নাকি বিচ্ছেদ, নাকি রক্ত?
নির্দ্বিধায় গড়িয়ে চলে মশালের ঝালর অনবরত।
রাত্রির কোমল সত্য বুকে,কি এক নীরবতা খুজেছি আমি
নরকের ঠোটে।
বালিকা, কি জাগে এই মনে?
এমন মেঘ বৃষ্টির দিনে
আমারো বুকে ইচ্ছা জাগে লালনের মতো
নৃত্যের তালে দুলি। বাতাসে ফোলা আঙরাখায়।
এ জগৎ হতে আরেক জগতে
এ ছায়াপথ হতে আরেক ছায়াপথে।
অথচ আমার
কাগজের ওপর কলম
কলমের ওপর হাত
হাতের পরে বক্ষ।
এর পরেই ফিরে ফিরে আসে চেতনাগত মজ্জার আভাস।
আভাসে আভাসে খুজে দেখা যায় রক্তের বদলে
চলাচল করে বিকট শূণ্যতা।
বুঝে নিয়েছি আমি,
আর হবে না বেচে থাকা তোমাদের পৃথিবীতে,
আর নাড়াবো না কখনো এই স্বরতন্ত্রী—
কেপে উঠবে না কোনো মল্লিকা বিহীন কবির হৃদয়,
চিবুকঠোকা হিমখোপায়।
তোমার অর্ধনগ্ন পিঠের রজনীগন্ধা শাখামঞ্জরি
যেন কবিতার পালক;
নারী,আমি ছুই নি।
তোমার বুকের দোদুল্যমান মরুপথে আমার হাটার অভিপ্রায় ছিল না কখনো।
নারী,আমি পারিনি
তোমার অক্ষিগোলকে ছুটে গিয়েছি ধুমকেতুর মতো
—ছায়াপথ হতে ছায়াপথে
তোমার একটি আঙ্গুলের ফাকে—শীত কুহেলিকার রাতে,পুরে দিয়েছি আমার অমরাত্না—সমাধিস্থ করেছি কাফন পড়িয়ে।
তবু,
তবু একদিন চলে যাবো,
ক্ষত নিয়ে চলে যাবো পরপারে।
নারীর নগ্ন হৃদয়ের পরিপূর্ণতায় কবির স্থান নেই;
খোলস খুলতে খুলতে দেখেছি নারী-
কালো লিপিতে লেখা আছে প্রত্যাখ্যাত আমার নাম,
স্থান নেই।