অতি জৈবনিক ক্ষেপণাস্ত্র ও অস্তর্থক বাদামী আপেলের কারখানা
নিমাই জানা
( ঠিক স্নায়ু যুদ্ধের আগের পরিস্থিতি , অসংখ্য নিউক্লিয় বিস্ফোরণের শব্দ , আগ্নেয় অগ্নুৎপাতের শব্দ , মানুষের বীভৎস চিৎকার , অস্ত্রের ঝলকানি
নষ্ট হয়ে যাওয়ার আগে মানুষের মাথাগুলো কেমন দরদাম করতে করতে লাল লাল যন্ত্রাংশ বিক্রি করবে এক একটা পলাশবনির হাটে । ক্ষয়প্রাপ্ত জঙ্গলের কোণে থাকা বীভৎস স্থাপত্যগুলোর গলা থেকে কালো কেঁচোর মতো মানুষেরা বেরিয়ে আসছে )
একটা তীব্র কণ্ঠস্বর ।। সবাই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকো । পোশাকগুলোও ঢিলেঢালা রেখো । ঘামের ভেতরেও একটা বুলেটের গন্ধ আছে কেউ কুমেরুর দিকে যাবে না হাতে গুছিয়ে ধরো একটা তীর , মাথার ভেতর থেকে কালো সাপগুলো এখনই টেনে বের করো , না না ওভাবে নয় ঠিক শাঁখ বাজানোর ভঙ্গিমাতে , হ্যাঁ এখনই এখনই আততায়ী বেরিয়ে আসবে তার জন্য রাস্তা প্রস্তুত করো কংক্রিট দিয়ে , হাসপাতালের চৌকাঠে থপ করে পড়ে গেল একটা নষ্ট ভ্রুণ তার শব্দ কে কে শুনতে পেয়েছো সবাই হাত তোল , ও আমি কে ? আমার পরিচয় দেওয়া হয় নি এতোক্ষণ আমি মেনোপোজ ! মেনোপোজ ! মেনোপোজ
ওই দেখুন দুজন প্রাচীন নর নারী আদিম ইভ কালো রাধা ব্রহ্মা ব্রহ্মী শিব কালী কেমন শঙ্খলাগা মুহূর্ত ধরে রেখে আগুন চিবোতে চিবোতে এই দিকে আসছে
( দুটো উল্টানো চেয়ারের ভেতরে দুটো ইজিপশিয়ান পিশাচের কথাবার্তা শুরু হয়েছে )
প্রথম স্থাপত্য ।। বেড সোর , পচে গলে যাচ্ছে ঘা, অ্যামোনিয়াম নদীর ভিতরেই আমার জন্ম অথচ মাথার উপরে বনবন করে ঘুরছে কিছু বাদুড়ের অপরিত্যক্ত ধোঁয়ার কুল কুণ্ডলিনী, কুয়াশাকে গতরাতে আমি যথা সম্ভব হত্যা করেছি । এখানে আমার ভিত্তি প্রস্তরের আগে সারা শরীরে কেউ পেরেক ঢুকতে ঢুকতে আমার গলা পর্যন্ত গেঁথে দিচ্ছিল, দুই হাতে চটকাচ্ছি পৃথিবীর নরম বিষুব , তরল অলংকার গুলো গলে গলে যাচ্ছে , বীভৎস আংটা ওয়ালা ক্যাপসুল কালারের লোহার মাস্তুল থেকে জাহাজের সমাধি পর্যন্ত , রোজ রাতে আমার চারপাশে প্রহরীরা দাঁড়িয়ে থাকে মৃত শরীরের থামের মতো , পচা দুর্গন্ধ ওঠা পায়ু দেশের একটা কুকুর সারারাত ঘেউ ঘেউ করে আমার গায়ে আঁকে বিজ্ঞাপনের তেল চোখ মার্কা একটা কিনফিনে বিজ্ঞাপনের সাপের কাগজ , থুতু দেয় পানের পিক ফেলে দিয়ে আমিও পরকীয়া আগুন বিক্রি করি , আমার তলপেটের নিচে শুধু পচা বীর্যপাতের গন্ধ শুঁকতে থাকি সারা ঘর ময় , একটু নিচু হয়ে দেখ, আমার রক্ত বিক্রেতাটি দু প্যাকেট সালমান মাছের রস আঙ্গুরের মতো টক দই আর দুটো ব্রাজিলিয়ান শ্যাম্পেন নিয়ে আসছে
দ্বিতীয় স্থাপত্য ।। কাউকে কখনোই দোষারোপ করতে নাই । তোমার খাঁ খাঁ উদ্ভ্রান্ত ব্যাগ পাইপার ছাদের কার্নিশের ভিতরে যে নীল রঙের পোশাকগুলো উড়ছে তাতে দুজন দুজন দশ টাকার স্ট্যাম্প আর ভেন্ট্রিক্যাল হৃৎপিণ্ডের পুরুষ মানুষ ঝুলে আছে। স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছ তারা খুব ন্যাতানো পোশাক পরতে ভালোবাসে , সানলাইট মার্কা পা গুলো উল্টোদিকে রেখে একটা সাঁড়াশির দাঁতালো নখে আটকে রেখেছে তাদের বংশগতি । আজকাল নিজের ছেলেকে মিয়োসিস পড়াই না ।
খুব ঠান্ডা লেগে ও আজকাল তোমার সর্দি হচ্ছে না কোনমতেই একটু আফিম খাও , নেশা খাও , লবঙ্গ খাও , ধুতরা ফলের বীজ খাও , সারা দেহে জমা করা তরল সর্দিটা অগ্নুৎপাতের মত নেমে আসবে , চলো একসাথে নষ্ট এম্বুলেন্সে ভেতর দুলতে থাকা একটা ওয়েস্টার্ন লাস ভেগাসের সিন ক্যাপচার করি ।
(কালো রঙের জঙ্ঘায় কাঁকড়া বিছা , জ্যাকসনের মুখ , হাল্ক , নগ্ন বুকে আঁকা ট্যাট্টুরা চিঁহি চিঁহি চিৎকার করে ওঠার আগে নীল আলোটা জ্বলে উঠছে কাঁচের প্লেটে লাফাচ্ছে দুটো কচ্ছপের পিঠ )
( একদল স্বল্প পোশাক পরিহিতা নারীরা কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে দাঁড়িয়ে আছে প্ল্যাটফর্মটার ব্রহ্মদিকে মুখ করে )
সাদা অন্তর্বাসের নারী ।। তীব্র ঘাম গন্ধ উড়ে আসছে । গলার ভেতরেই কেউ যেন তরল লোহা ঢালছে , মাথায় বজ্রপাতের শব্দ । এখানে কেউ কিছুক্ষণ আগে ধারালো অস্ত্র ফেলে গেছে কেন ? আমাদের পোশাক কেন চটচটে ? এই রাজপ্রাসাদের কোণ থেকে একগুচ্ছ অভদ্র অভ্র ব্যবসায়ীদের তীব্র হাসির আওয়াজ আসছে । শাট আপ শাট আপ শাট আপ তীব্র আলো কেন জ্বালিয়ে রাখো সর্বক্ষণ ? সকলের মুখে আলো লাগুক আমরা কেউ নিষিদ্ধ নগরী থেকে উঠে আসিনি , আমাদের পোশাকগুলো কেড়ে নেওয়া হয়েছে আমার বুকের কাছে ক্ষত লুকানোর জন্য দুটো আরবিয়ান খেজুরের গাছ এঁকে দাও
(একটা প্রেত চিৎকার করছে । অফস্ক্রিন । মেরুন রংয়ের আলোটা তির্যক হয়ে পড়ছে স্টেজের বামদিকে , বিশুদ্ধ হত্যাকারীটা অস্ত্র নিয়ে একা নাচছে )
কালো অন্তর্বাসের নারী ।। আমাদের সাথে ঘোরতর যুদ্ধ হয়েছিল অনেক আগে থেকেই, আমাদের কাছে শ্মশান ছাড়া আর কোন নিজস্ব প্রজনন কেন্দ্র ছিল না , আমার নিজের সন্তানটাকে ফেলে দেওয়া হয়েছে আর্সেনিক গর্তে , দাউ দাউ করে জ্বলে যাচ্ছিল আমার পিঠ আমার দুটো উরু , আর যুদ্ধের নাম করে যারা এখানে এসে বন্দুক চালাতো তারা রোজ রাতে আমাকে জোর করে গর্ভনিরোধক পিল খাওয়াতো । উঃ উঃ উঃ এখানে ভয়ংকর আকাশে খুব দেরি করে চাঁদের উদয় হওয়া দেখতে পেত সবাই
( নেপথ্যে একটা সাইরেন , বাঁশি , অ্যাম্বুলেন্স তৈরির কারখানা , রাজহাঁসের শব্দ , সাপের হিস হিস শব্দ শোনা যাচ্ছে )
প্রথম স্থাপত্য।। না সব রোগীদের নিজস্ব কোন ব্যাকরণবিধি নেই ।ৈও মাথায় গলায় হাতে পায়ে অসংখ্য ঝিনঝিনে সরীসৃপ সাপ উঠে যাওয়ার মতো শব্দ হচ্ছে , বমি সবসময়ই কোন রোগ নয় , সকলে একটা ভয়ংকর অসুখ লুকানোর জন্য রাত্রের নিঝুম উপগ্রহের মুখে কামড়ে দিতে চাইছে , প্রতিটি ঘরে ব্লেড রাখা আছে । কাঁকড়ার ডিম লুকানোর জন্য অসংখ্য ধাতব বাক্স রাখা আছে। এখানে সকলেই ফুর্তির নাম করে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে যায় , উষ্ণতম বরফ খায় ফিনফিনে দশমিক বিন্দুগুলো খুলে ফেলে গিঁট খুলে ফেলে ধনুক বের করে , গলায় সংক্রমিত ব্যাধি কেঁচোর মতো ছটফট করছে আমি স্পেন দেশ থেকে দুটো কাগজের লাল কাবাব ফুল এনেছি নিজেকে ভয়ঙ্কর লিঙ্গ রাখার সংকেত বার্তা শেখাবো আবহবিদদের , অন্ধকারে উপগ্রহ রান্না হয় ।
দ্বিতীয় স্থাপত্য ।। মানুষ যে ভয়ংকর তা কিন্তু নয় , ভয়ংকর হয়ে ওঠে নিজের পিতৃপুরুষদের দেখানোর সময় , সাপেদের ভুজঙ্গ মূর্তিগুলো অসহিষ্ণু সিমেন্ট কারখানায় ফুসফুস বিক্রি করছে। চিৎকার শুধু চিৎকারের আলাদা ফর্মেট, মানুষের কাটা মাথা গুলো বিক্রি হবে বোধহয় এক একটা বরফ গলা জলে পুষ্ট নদীর ধারে বসে , হাইগ্রোমিটারের পিতা মাতা ছায়া কাঠের রং ০.৫ অসুস্থ মাথা শক্ত করতে করতে নদীতে স্নান করবো আবার নিজে নিজেই কাছে উলঙ্গ হব কেমন একটা বিশ্রী পোড়া পোড়া গন্ধ আসছে কারখানার ভেতর থেকে
( একদল অর্ধ উলঙ্গ ক্রীতদাসের প্রবেশ , সকলের কোমরে মোটা একটা দড়ি বাঁধা , মুখগুলোতে কালো রিবন বাঁধা তারা সমস্বরে চিৎকার করছে কুকুরের মতো আওয়াজ করছে )
বয়স্ক ক্রীতদাস ।। হ্যাঁ খুব আনন্দ হচ্ছে আমাদের , আমাদের মাথায় যে উনুনটা আছে তাতে সকালে টগবগে মাংস রান্না করছিল একদল ভিনিগারে মেশানো উদ্বাস্তুর দল , আমাদের নিজেদের কফ গুলো এত শক্ত চিবিয়ে খাওয়ার পর আমাদের গলা দিয়ে নামছে না , কাঁচ ভাঙা খেতে খেতে আমরা কেমন নষ্ট হয়ে যাচ্ছি , পারদের ব্যবসা করছি , আমরাই আমরা বড় বড় রাস্তার ধারে মোরাম খাদানে উলঙ্গ হয়ে ঢুকে গিয়ে আর বের হতে পারছিলাম না কোনমতেই ,পা গুলো আমাদের কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত , না যারা চাবুক মারছে করছে তাদের কোন দোষ নেই আমরা আমরাই নিজেরা নিজেদের প্রয়োজনে গর্ভবতী হয়ে পড়ছি , আমাদের গর্ভবতী হওয়ার পেছনে ওই বন্ধ কারাগারটাই দায়ী । একটু জল হবে তোমাদের কাছে? দুটো নোংরা হাত ধুয়ে ফেলব
( ভয়ংকর নীল আলো ভেসে উঠল। লাল আলোর ভিতরে কটমটে আর্তনাদ একটা বাঘের গর্জন বীভৎস ড্রাম পেটানোর শব্দ তেড়ে আসছে ভাঙ্গা চেয়ার গুলো নিজেরাই লাফাতে শুরু করেছে )
( আলখাল্লা পরিহিত সাদা পোশাকের একটা দেবদূত , তার দাড়ি ,চোখ অস্পষ্ট হাতে একটা লাল কাপড়ে মোড়া একটা ধর্মগ্রন্থ ডান হাতে মোজেসের লাঠি , পায়ে খড়মের মতো একটি জুতা )
দেবদূত ।। পাপ করতে এসে আমরা ডেরিভেটিভ রঙের সব উষ্ণতায় ঘুরে দেখেছি পরমাত্মাদের এক একটা নিজস্ব ভয়ানক আকৃতি আছে স্তব্ধতায় ঢেকে ফেলে তাদের নিঃশব্দের গান । এখন এসো খনির গর্ত থেকে উঠে আসো এই ধর্মগ্রন্থের ভেতরে , মাথাটাকে বরফ ঢাকা একটা ইনকিউবেটরের ভেতরে রাখি কিছুক্ষণ , তীক্ষ্ণ শব্দ ভেসে আসবে ধ্রুবতারা থেকে , সব নিস্তব্ধ হয়ে গেলেই আমাদের ঘনীভূত পাপগুলো দু হাতেই ধুয়ে ফেলব অস্ত্রের মতো , চুপচাপ মন্দিরে যাই মসজিদে যাই গির্জায় যাই আমরা আলাদা আলাদা বিমুক্ত গন্ধ নিয়ে রজনীগন্ধার মালা গাঁথছি কেবল । হে পরমাত্মনে পিতা , দ্বিধাবিভক্ত হও আমার ভিতর তোমার সব কোষ নিয়ে আমি ছুঁয়ে ফেলি অজস্র গর্তের ব্যাসার্ধবিহীন মুখ , সাপেরা উঠে আসুক সাপেরা উঠে আসুক স্বর্গ থেকে নেমে আসুক নরকের জাহান্নাম পিতা একদিন আমরা সকলেই মাংস ব্যবসায়ী ছিলাম অথচ আমার পোশাকে কেমন আঁশটে গন্ধ । চলো ঘন হয়ে বসো ধ্যানে বসো, বজ্রাসনে বসো আমাদের ছায়াগুলো ক্রমশ নিভূত হয়ে আসছে , এখনই উপযুক্ত সময় আমাদের ছায়া বিক্রির । ভয়ানক সূর্য থেকে একটা বিস্ফোরণ ঘটবে
( অফ স্ক্রিন । ব্যাকগ্রাউন্ডে ওহম ওহম ওহম ধ্বনি , একটা কালপেঁচা উড়ে যাচ্ছে ঈশান কোণের দিকে , পেছনে থাকা চেয়ারে একটা কালো ময়াল সাপ উঠে আসছে , ময়াল সাপের সামনে সাদা একটা ইঁদুর দৌড়ে বেড়াচ্ছে , কিসমিস ও দুধ ভর্তি কাঁচের পাত্রটি উপছে পড়ছে )