2.3/5 - (3 votes)

নিজেকে কবি বলতে আমি দ্বিধাবোধ করি
হাঁটতে হাঁটতে আমি চলে যাই তেপান্তর
দুটো সমুদ্র আর কয়েকখানা দেশ
মানচিত্র ভুলে যাই।

কাব্যিক প্রেমের আশায়
আমি দ্বারেদ্বারে ফুল রেখে আসি
দরোজা খুলে আকাশ দেখে না কেউ
ফুল মাড়িয়ে দূরে চলে যায়।

আমি আর পিছু করিনা
টবে জমা রাখি যা আছে বাকি।
ভুলের অশ্রুতে ভিজে যাওয়া মাটি
বড় উর্বর!
যাই মিশিয়ে দেবে মনের শুদ্ধতম গভীরে
তাই বিষিয়ে বিষাক্ত হয়ে যায়
আর রক্তে বেড়ে যায় অয়োময় স্তর।

নিজেকে কবি বলতে আমি দ্বিধাবোধ করি
এক লক্ষ প্রেমিকা প্রেমিকহীন
হাশরের ময়দানের মতো
তীব্র ও বিশাল শূন্যতায় দাঁড়িয়ে,
আমি হেঁটে যাবো
কপালে লিখা থাকবে
প্রেমিক!

ওরা সবাই একসাথে হাসবে
আমি দু’হাত বাড়িয়ে দেব।

এক লক্ষ বেদনা
এক লক্ষ সুখ
এক লক্ষ সত্য আর
এক লক্ষ বুক।

হাহাকার করতে থাকবে
সামনে এগুতে থাকবে
নূপুরের ঝংকারে
আরশ কেঁপে উঠবে
শিঙায় ফুঁ দিতে ভুলে যাবে
ইস্রাফিল!
দেবলোকে খবর পড়ে যাবে
অন্য ধর্মের ভুল।

বিরহের অটবী ভ্রম রাহা
বা পথই ধরে নাও
নগ্ন হয়ে থাকা শরীর
কবিতায় জড়িয়ে
উষ্ণতার খবর রটাও।

নিজেকে কবি বলতে আমি দ্বিধাবোধ করি
থমকে থমকে আসা মুহূর্তের অনুধাবন
আমাকে পাগল করে দেয়
আমি পাগলাগারদের দিকে ছুটে যাই
নিজেকে ভর্তি করাবো বলে।

এ্যাপ্রোন আর স্টেথোস্কোপ গলায়
নিজেকে ভন্ড সাপুড়ে মনে হয়,
আয়নায় রোগীকে দেখি।

সামর্থ্যহীন এক আত্মার মালিক
সর্বস্ব খুয়ে রক্ত আর মাংস
বেচে দেয়ার চিন্তায় বিভোর।
চোখ বেচে দিয়েছে অনেক আগেই
আর কিনতে পারেনি।
বন্ধক দেয়া হৃদয়টা ফেরত নিতে
গিয়ে হয়েছিলো স্তব্ধ,
অপলপ শব্দগুলো কী তীরের মতো
বিঁধছিলো তার মুখে
আর হৃদয়হীন বুকে।

এর চেয়ে বোধহয় বৃষ্টি ভালো
মিটিয়ে অষ্টরম্ভার জমানো আকুতি
একশ একটি স্বর্গের নীল অনীল জুড়ে
অলস মেঘের ঈপ্সায়
মদের বোতলে দুফোঁটা মিথ্যের আশ্বাস ঢেলে
বেশ্যার বাগানে
আমি প্রজাপতি উড়িয়ে দেই।

স্টেথোস্কোপ ছুড়ে ফেলে দেই
দড়ি নিলাম হাতে
না গলায় প্যাচালাম না
আত্মহত্যার মতো সুস্থতা এখন মরিচীকা।

বিতর্ক সভার লাস্ট চেয়ারটিতে বসে
হাততালি দেই সময় অসময়ে
বের করে দেয়া হলো আমায়।

কলকাতার ট্রাম নেই ঢাকায়
তবু আমি ট্রাম দেখলাম
এক প্যাক সিগারেটে
মায়ের দোয়া ঢুকিয়ে
দেদারসে টানলাম৷
সিগারেট পুঁড়লো না
পুঁড়ে গেল এক বুধবার।

তাড়াহুড়োয় কবিতা লিখতে গিয়ে
হোচট খেয়ে পড়লাম
তোমার শেষ জমিয়ে রাখা আবেগে।
বিশ্বাস নিংড়ে কালি মেখে
নিলাম হাতে ও ঠোঁটে।

এ হাতে কবিতা হলো না
এ ঠোঁটে চুমু খেলো না৷

নির্ঝরিনী কয়েকশো ফুট উঁচু হয়ে
অদ্রি ভেঙে দেয়
সাগরে মিলবে বলে।
আমি খরগোশ হয়ে দৌঁড়ে পালাই
রাক্ষুসে ক্ষুধা নিয়ে
যা পেলাম তাই খেয়ে নিলাম৷
এইমাত্র গড়া নিঃস্বার্থ নীড়ে
আমি হাটু গেড়ে মানুষ হয়ে যাই
মানুষের মতো শরীর তবে
পশুর খাঁচা চাই।

কী উদ্দাম অথচ শান্ত নিয়তি
নিজের কাছে হেরে গিয়ে
মলিন নলিন গাঁথি।

আমি জানি তুমি দুপুর দেখো
আমি দেখি বিকেল,
আমি জানি তুমি কবিতা লিখো
বেদনার প্রলেপে হিমেল।

নিজেকে কবি বলতে আমি আর দ্বিধাবোধ করিনা
দেশ,অত্যাচার,স্বাধীনতা,
বর্বরতা,প্রেম,ঢেউ,ফোনকল
অর্থাৎ অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা, মূর্খতা
অর্থাৎ ডুবে যাওয়া নিজের অস্তিত্বে।

তোমাকে কিংবা
বাস্তবতার চাপ নেয়া যায় না এমন ওজনে
দাড়িপাল্লায় মেপে দেখি
আমি অন্ধ!
আমি বিবেকহীন!
আমি মিথ্যুক সেজে
নিজেকে ক্ষমা করে দেই।
এ ক্ষমাগুণ বড় পাপ
এ পাপ,পূণ্য নয়
এ পাপ আষাঢ়ে গল্প নয়
এ পাপ আড্ডায় জমে ওঠে না
এ পাপের শাস্তি হয় না।
এ পাপের জন্ম হয় না
মৃত্যু হয় পাপীর মরণেরও
বহু বহু বছর পর।

guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments