Review This Poem

মহানন্দা, আমি আর কবিতা লিখবো না!
ছন্দহীন-অমাধুর্য রসাশূন্য অশ্রাব্য ভাষায়;
অসার-অভাবার্থ-অমৌলিকত্ব-অবিন্যস্ত কবিতা –
আমি লিখবো না।
অবোধ অজ্ঞতায় কাব্য-দেব রবিঠাকুরের সুনিপুণ
সু-শ্রী সৃষ্টির গায়ে ক্ষত করতে;
ক্ষেপা দুর্বাসা’র ন্যায় ক্ষিপ্ত যুগান্তকারী কাব্য-মহাধ্যানী
নজরুলের ধ্যান ভগ্ন করে,
এমন অভিশপ্ত কবিতা আমি লিখবো না!

অথচ তুমি বারবার বলছো কবিতা লিখতে!
কিন্তু,কেন? কি কবিতা? কেমন কবিতা আমি লিখবো?
ঐ মূর্খ কোন্দলবাজ গ্রাম্য মাতব্বরকে নিয়ে ?
সুবিদাবাদী পরনিন্দাকারী সুশীলের গুনকীর্তন গাইতে?
আজকের অযোগ্য সমাজপতীকে কুর্ণিশ করতে?
উন্মত্ত কোন পাতি নেতার মিছিলের স্লোগান-শ্লোক?
আদর্শচ্যুত শিক্ষক,অসভ্য নেশাগ্রস্থ শিক্ষার্থীর পাঠ্যবইয়ের জন্য?
পিএইচডি-ধারী কোন গণ্ডমূর্খের গবেষণাকে কেন্দ্র করে?
অকুশল প্রকৌশলীর দক্ষতার প্রশংসা করে?
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবাজ ঐ সব ধর্মান্ধদের সাধুবাদ জ্ঞাপন করতে?
ভাষাজ্ঞান শূন্য অজ্ঞ সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক আর
অর্থলোভী গ্রন্থ প্রকাশককে ভজনগীত শুনাতে?
মানস-প্রিয়া মিথ্যাময়ী অবিশ্বস্ত প্রেমিকাদের কণ্ঠে
জড়াতে প্রতিটি প্রেম পঙক্তিমালা?
অবশ্য তুমি আমার বিশ্বস্ত প্রেমিকা!
তবুও,এসব কবিতা আমি লিখবো না।
মহানন্দা,বিশ্বাস করো!
এতে যদি তোমার সাথে আমার বিচ্ছেদ হয়,
তবুও আমি আর কোনদিন কবিতা লিখবোনা!

আজ ভারাক্রান্ত মনে আমি ঘোষণা করছি,
উপস্থিতি দেশের বরেণ্য টিভি চ্যানেল ও পত্র পত্রিকার –
গন্য-মান্য-জঘন্য গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বগণ ।
‘জঘন্য’ শব্দটি এজন্য বলেছি,- কেননা ক’জন
ভূয়া মিডিয়ার অশিক্ষিত সাংবাদিকও এখানে আছেন!

শুনুন,যারা এদেশের মস্তক রন্ধ্র-বিবর করে চুষে খাচ্ছে
ঐ সমস্ত অসাধু ব্যবসায়ী, অসুর পুঁজিবাদী,শিক্ষার দোকানদার,
চিকিৎসার দালাল,ঘুষখোর আমলাকে অঞ্জলি দিতে ;
এমন তৈল ম্রক্ষণ কবিতা আমি লিখবোনা।

যে কবিতায় কৃষক-শ্রমিক-মেহনতী মজুরের সর্বপুরী
সর্বসাধারণের কোন প্রকার দাবি কিংবা স্বত্ব-স্বামিত্ব উল্লেখ নাই;
শুধু মাত্র যশ-খ্যাতি আর স্বর্ণপদকে ভূষিত হওয়ার স্পৃহায়!
আমি কবিতা লিখবো না!
যদি আমার কবিতা ঐ সব বিচার-বঞ্চিত,
চিকিৎসা-বঞ্চিত, উন্নয়ন-বঞ্চিত, অধিকার-বঞ্চিত
মানুষের পাশে বিস্ফুরিত হয়ে প্রতিবাদের তিগ্মে ধ্বনিতে পৌঁছায় না!
এসব বস্তা ভরা সস্তা কবিতা, আমি লিখবো না।

‘স্টপ’! সাইলেন্ট মোডে’ থাকুন!
কেউ উচ্চস্বরে কথা বলবেননা! আজকে শুধু আমি বলবো,-
আপনারা গোবেচারার মতো শ্রবণ করবেন;
ভুলে যাবেননা আমি কবি!যেমন কোমল সুলেল স্নিগ্ধ
তেমনি আমার লিখিত অলিখিত উচ্চারিত
এক-একটি বাক্য মিসাইলের মতো ধ্বংসাত্মক শক্তিধর অস্ত্র;
প্রতিটি শব্দ বুলেটের স্ফুলিঙ্গ অগ্নি ছর্রা ধ্বনি,
তাই সাবধান! আমি চাইলেই নিমিষে উড়িয়ে দিতে পারি সব কিছু!  

আমি ঘোষনা করছি,সবার সম্মুখে এই ভরা মজলিসে
আমি ইস্তফা দিলাম! ইস্তফা দিলাম!
আজকের পর থেকে আর কোন কবিতা আমি লিখবনা,
এই আমার শেষ-বাক্য,শেষ শব্দ উচ্চারণ,
এখন থেকে আমি নীরব, বোবা-প্রেমিক আর বাকস্তব্ধ প্রাণী;
কিন্তু, আমার এ নীরবতাই একবিংশ শতাব্দীর
একটি শ্রেষ্ঠ মৌন-যুদ্ধের ঘোষণা।

guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments