বাংলা কবিতা, ইদানীং মৃত্যু ভীষণ টানে কবিতা, কবি মনসূর কোয়েল - কবিতা অঞ্চল
3.8/5 - (5 votes)

ইদানীং মৃত্যু ভীষণ টানে

সাদা পাঞ্জাবী-পাজামা,মাথায় টুপি—
কিছু মানুষ জড়ো হয়েছে;
আমি তাদেরকে দেখতে পাচ্ছি।
তাদের অনুভূতি বুঝতে পারছি।
যদিও,প্রথমত আমি বুঝি নি!

আজ,আমার ‘মৃত্যুবার’।
সব দিকে আয়োজন-হুলস্থুল।
খাটিয়া থেকে নামানো হবে আমাকে।
অনেক ধরাধরি-সাবধানতা অবলম্বনসহিত—
আমার দৈহিক আকার আয়তন;
অনুযায়ী আমাকে অন্ধ-নীরব-বিচ্ছিন্ন—
ঘরে রাখা হবে।

আজ,’আমার মৃত্যুবার—
শুনেছিলাম কবিদের মৃত্যু হয় না।’
আমার কাফনের কাপড়,
আগে থেকে কেউ ক্রয় করে নি!
মোড়ানো হয়েছে আমার লাশ—
দাফনের জন্য।

এতিমখানায়ও খবর দেয়া হয়েছে।
আমার মৃত্যু-উপলক্ষে অনাহারী মানুষের—
পাতে অন্ন তুলে দেয়া হবে।
গর্বের কথা নয়;কারণ—
আমি বেঁচে থাকাকালীন,
অনেক এতিমকে গলা-ধাক্কা দিয়েছি!
আজ তারা খুশি হবে।

‘শুনেছিলাম কবিদের মৃত্যু নেই’!
কবিরা—না কি অমর হয়?
আজ,চারিদিকের অভিনীত-কান্না;
আমাকে আরও ভাবিয়ে তুলেছে।
যেসব আত্মীয়-স্বজন আমাকে—
তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতো—যারা ভাবতো;
আরে সে তো গোল্লায় গেছে,উচ্ছন্ন্যে গেছে
আজকে,তারাও আমার পরিবারকে
মিথ্যা-স্বান্তনার আশ্বাস দিতে গিয়েও—
দোষী মনে করে বসছে নিজেকে।

একটু পরেই রাত হবে।
ততক্ষনে,মসজিদ-মাজারে প্রচারিত হবে
আমার মৃত্যুর তলব।
আমার মৃত্যুর নামে—
শিরনি-খিছুরি-জিলেপী ইত্যাদি খাবার
মানুষকে বিলিয়ে দেয়া হবে।
মুনকিরনাকির আমার জীবনের খাতা—
গম্ভীরমুখে খুলছেন।
আমি ইচ্ছা করলেও,ভয় পেতে পারছি না,
পালাতে পারছি না।
আমার জীবনের সব হিসাব-নিকাশ আজই হবে!

অথচ,
এমন আয়োজনের মৃত্যু—
কখনও চাহিদা ছিলো না আমার!
‘চেয়েছিলাম প্রয়োজনের এক নীরব-মৃত্যু’;
কাক-শকুনের খাদ্য হয়ে—
মরণের আকাঙ্খা ছিলো!
আমার লাশের গন্ধে—
মাছি,পোকামাকড় মৃত্তিকা
ভেদ করে বাইরে আসুক—
আমার মৃত-দেহের বর্বর-দুর্গন্ধে।
এমন চাওয়া ছিলো আমার!

guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments