4/5 - (2 votes)

আমি পড়াই জেব্রাদের স্কুলে। ছোট ছোট জেব্রারাই ছাত্র হিসেবে সবচেয়ে উপযুক্ত, একথা গত এপ্রিল থেকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছি। আমার মা বাবা ভাই বোন কেউ নাই, বস্তুত, আমি বড় হয়েছি একটা লাল রঙের মাদী শেয়ালের কাছে। পাহাড়ের হা-য়ের মধ্যে যেখানে আমাদের বাড়ি, তার সামনে বসে দেখা যায় জলত্যাগী একঝাঁক কৈমাছ কান দিয়ে হেঁটে কাব্যসমালোচককে ধাওয়া করছে। আমি একে চিনতাম, এই লোকটা কোনো কবিতা দেখলেই একটা না একটা তত্ত্বের গ্লাসের মধ্যে পুরে কবিতাটার মৃত্যুদৃশ্য দেখতো আর জোর করে দৈত্যের ঢঙে হাসতো।

বাড়ির বাইরে যখনই আসি, পাহাড়টাকে ঘিরে দেখি সেই একই দৃশ্য, কৈমাছ আর কাব্যসমালোচকের শেষহীন দৌড়। দিন দিন কৈমাছের সংখ্যা বাড়তে থাকলে আমার শেয়াল-মা বললেন, যুদ্ধের দেরি নেই, মনে হচ্ছে এবার যৌনযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। তুই এই লাল লাঠিটা হাতে নিয়ে কৈ-এর স্রোত পার হয়ে জেব্রাদের শহরে চলে যা। বেঁচে থাকলে দেখা হবে।

শেয়াল-মা আমাকে জেব্রাদের গায়ে যেসব ডোরাকাটা দাগ আছে, তার তাৎপর্য বলে দিয়েছিল। বারবার সাবধান করে দিয়েছিল, কীর্তিমান পশুদের যৌনদৃশ্য দেখে আমি যেন কখনোই না হাসি। হাসলেই শেষ। এর আগে যারাই হেসেছে, নাভি থেকে এক ফুৎকারে উড়ে গেছে তাদের সমস্ত হাসি, আর পরিণত হয়েছে অভিশপ্ত কাব্যসমালোচকে। তারপর যথারীতি ক্রুদ্ধ কৈমাছের দল তার পিছু নেয়।

জেব্রাদের স্কুলে চাকরিটা কীভাবে পেলাম, ভাই রে, সে আরেক কাহিনী। পরীক্ষাস্বরূপ, এক অতিবৃদ্ধ জেব্রা আমায় বললেন, `একটা সদাব্যস্ত কালো ক্ষুধার্ত পিঁপড়ের ওজন কত?’ মাথা চুলকে আমতা আমতা করে আমি বললাম, `সৌরজগতের সাপেক্ষে ধরলে, ঐ পিঁপড়ের ওজন পৃথিবীর কাছাকাছি।’

জেব্রাটার মুখ দেখে মনে হলো উত্তর সঠিক হয়েছে। আমাকে তিনি তার সামনের ডান পা-টা উঁচিয়ে শিশুজেব্রাদের দেখিয়ে দিলেন। দু’দিন পরে লেজ-হারানো এক জেব্রা বেতনের ব্যাপারে আশ্বস্ত করে গেল: যেসব শিশুজেব্রা পাতা খায় কিন্তু হজমের পর আর পাতার সংখ্যা বলতে পারে না, অংকে-কাঁচা ঐ জেব্রাগুলোই আমার বেতন।

আহ্, এদের ঘাড় মটকে, চামড়া ছাড়িয়ে, তারা প্রহরায় রাত্রিবেলা আমি আগুনে ঝলসে খেতে পারবো। আর কে না জানে, ছোট ছোট ছাত্রদের মগজ, কলিজা, মাংস এমনকি এদের ঝকঝকে স্বপ্নভরা চোখ আর পায়ের কচি খুর সবই খেতে খুব সুস্বাদু লাগে…

guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments