উঠেছিলাম সেদিন রেলে
চেপেছিলাম আমারই সিটে
যাবো বলে আখাউড়া জং এ্যা!
বসেছিলাম জানালার পাশে
হা করে তাকিয়ে উদাস দুপুর দেখে
কখন ট্রেন ছাড়বে ভেবে।
তখনই শুনি কে যেনো বলে
‘এক্সকিউজ মি,ওটা আমার সিট’!
‘এক্সকিউজ মি’ শব্দটাই বাজে কানে
দৈববৎ শুনে ভাবি মনে রবীন্দ্রনাথের অপরিচিতা’র
‘জায়গা আছে’ আশ্চর্যমধুর কন্ঠ
আমারই কানে বাজে।
সম্বিৎ ফিরে তাকিয়ে দেখি
এক লজ্জাবতী ললীতা দাঁড়িয়ে পাশে।
আমি সুপুষের ন্যায় তার জানালার আসন ছেড়ে
বসি পাশের সিটে মুখোমুখি হয়ে!
হঁইসেল বাজিয়ে ট্রেন শুরু করে চলা
গন্তব্যের পথে।
ট্রেনের হুইসেল থামে
কিন্তু আমার মনের হুইসেল বাঁজে আপন সুরে
লজ্জাবতী লতিতার ‘এক্সকিউজ মি’ শুনে!
সময় গড়িয়ে ট্রেন থামে লাকসাম জং এ্যা,
আমি হুট করে নেমে পড়ে এক কাপ লাল চা খেয়ে ফিরে এসে দেখি লজ্জাবতী লতিতা
আমার রেখে যাওয়া জীবনানন্দের ‘বনলতা সেন’
এর পাতা উল্টাচ্ছে!
আমার প্রত্যাবর্তনে ললিতা জিজ্ঞেস করে বসে,
-“আপনি কবিতা ভালোবাসেন?”
(আমি মনে ভাবি এইতো পেয়েছি
ট্রেনের কামরায় বসে এক রমনীর সাথে বসে
বাক্য বিনিময়ের সুযোগ!)
আমি উত্তরে বলি ‘হ্যাঁ,পড়ি টুকটাক’
যতসত কবিতা আছে তাঁর!
কবিতা আলাপে আসর জমে লজ্জাবতীর সাথে,
ভাবি একবার বলি আপনি যাবেন কোথায়?
কিন্তু হয় না বলা আর সাহসের শূন্যতায়।
ট্রেন চলছে,বাতাস বইছে
অপরিচিতা অপলক চোখে বাইরে তাকিয়ে
খোলা আকাশ দেখে
আর তার খোলা চুল উড়ছে ভেসে
বাতাসের বেগে।
আমিও মুগ্ধ হয়ে তাকে দেখি,
খোলা চুলে আকাশপ্রেমে আনমনা অপরিচিতাকে!
আরো বেশি মুগ্ধ হই যখনি তার খোলা চুল
ঝাপটে এসে আমার মুখে লাগে।
হঠাৎ মুখ ফিরিয়ে বলে ‘সরি,আমি দেখি নি’
আমওি বলি ‘আচ্ছা,সমস্যা নেই’!(কিন্তু মনে মনে আওড়াই কেনো যে আরো কতক্ষণ এলোমেলো চুল এসে জাপটায় নাই আমার মুখে)
আবারো ট্রেন থামে কুমিল্লা ইস্টিশনে
হঠ্যাৎ সে উঠে বসে বলে ‘বিদায়’
আমি মূর্তিমান স্তম্ভের মত হয়ে যাই।
মনের ভিতরে আক্ষেপ জাগে;
হৃদয়ের চরে জেগে উঠা অনুভূতি প্রকাশের
ব্যর্থতার দায় সামলে নিয়ে তাঁকে বিদেয় দেই।
ট্রেন চলত শুরু করে।
ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে তার প্রত্যাগমণ দেখি
ভাবি এই সে একবার পিছে ফিরে তাকালো
একবার!