5/5 - (1 vote)

আম্মাকে আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারি না,
আমার মনে হয় কোথায় যেন এক সূক্ষ্ম পর্দা রয়ে গেছে মাঝে।
আমি যখন নতুন জামার গন্ধ মাখতাম ঈদের দিনে;
আম্মা তখন পুরোন জামা পড়ে দিব্বি সেমাই রাঁধতে বসে যেতো
এ-গাল ও-গাল ঈদের চাঁদের মত হাসি।
সেই হাসির সামনে ঈদের চাঁদটাও লজ্জা পেতো।
আমি ভাবতাম, আম্মা ভারি বোকা,
ঈদের দিনও বুঝি পুরান কাপড় পড়তে আছে?

আম্মাকে আমি বুঝতে পারিনি কোনদিন!
আমার থালা ভর্তি ভাত আর নতুন তরকারি দিয়ে
নিজে পুরানো তরকারি মাখিয়ে খেতে বসতো।
কিছু বললেই বলতো, ‘নষ্ট করে লাভ আছে? ‘
আমি অবাক হয়ে ভাবতাম, এত বোকা কেন আম্মা?
আম্মাকে ঠিক চিনতে পারিনি আজও!
আমার পরীক্ষা এলে সবচেয়ে বেশি চিন্তা করতো আম্মা
যেন পারলে আমার পড়া আম্মাই পড়ে দেন!
আমি পরীক্ষার হলে পরীক্ষা দিতাম, বাইরে পরীক্ষা দিতো আম্মা
আমি অনুভব করতাম তাঁর কন্ঠ থেকে আমার কল্যাণে
উচ্চারিত প্রতিটা জিকির, প্রতিটা দুরূদ!
আম্মা নিজের জন্য কোনদিন খোদার কাছে কিছু চেয়েছে?
আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে!

অসুখে ভুগে বিছানায় পড়ে থেকে রাতে প্রচন্ড ব্যাথায় ঘুম ভাঙলে
দেখতাম আমার মাথার পাশে কে একজন বসা; আম্মা!
আম্মা ঘুমায় কখন আমি বুঝে উঠতে পারি না।
আল্লাহ কি আম্মাকে ম্যাজিক করার ক্ষমতা দিয়ে পাঠিয়েছেন?
আম্মা কি ম্যাজিক জানে?
যাতে না ঘুমিয়েও রাতের পর রাত কাটিয়ে দেয়া যায়?
আমি আম্মাকে ঠিক বুঝতে পারলাম না আজও
কতবার টাকা চাইলে- বকা দিতো,
তারপর কম হলেও দিয়ে দিতো পকেটে,
আমি কম টাকা নিয়ে মুখ গোমড়া করে চলে যেতাম ঠিকই
কিন্তু দেখতাম না আম্মার সেদিনের পানটা হয়তো কেনা হয় নি
হয়তো সুপারি বা জর্দাটুকু শেষ হয়ে গেছে।
আম্মা নিজেরটুকু কখনওই চায় নি বড় করে,
আম্মা ভীষণ বোকা, বোকারাই বড় হয়!

আজও জ্বরের ঘোরে মধ্যরাতে ঘুম ভেঙে গেলে দেখি
আমার মাথার পাশে খোদার বেহেশত- আমার আম্মা!
আমি বিড়বিড় করে বলে উঠি,
রব্বির হামহুমা কামা রব্বা ইয়ানি সগীরাহ্।

guest
2 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Tabassum Toya
1 year ago

হৃদয় ছুঁয়ে গেছে…