১
চালতা গাছের ডালে আটকে গেছে রোদ । উঠব উঠব করেও বাতাসের সাথে হলুদ পাখিটা ডাকতেই থমকে গেল টানটান নিজস্ব অর্জন । কোনো বিলাপ নেই , অতঃপর চকিতে কয়েকটা পাতা ঝরে পড়তেই স্বপ্ন ভেঙ্গে যায় কাঠবেড়ালির । আমাদের মধ্যেই তার গ্রীবাদেশে , জড়িয়ে থাকা চঞ্চলতা নিয়ে নিজেরাই থেকেছি মত্ত , পাশেই গত রাতের বিন্দুবিন্দু শিশির জমিয়ে রাখতে চায় কচুপাতা । যদিও তার নিম্নে একক ডাঙার বিলাপ ; কোনো শষ্য নেই – দুঃসহ এক আন্তরিকতা নিয়ে বাড়িয়ে দিয়েছে হাত ।
২
তাদের মধ্যে নীল কাদাখোঁচা খোঁজ রাখেনি শুকনো ডাল ভাঙার রাত , সেই তিমিরের পর ফিকে ছায়ায় গড়াগড়ি খায় বৈশাখের পরাগমিলন ; কয়েকটা হিজল ফলের সর্বনাশ । আটকে থাকা মেঘ বৃষ্টির আশায় বিষাদ ঝরাতে থাকে আদিম প্রজাপতিটি । আমার মিলিয়ে দেওয়া কৌশিকীর সাথে লোকগীতি , কোনো নকসা বিহীন পথ নিয়ে সারাটা আবাড় মাড়ায় , তারা চিনে শুধু চালতা তলা আর কোকিলের গানটাই । সকলেই ভালো থাকে , শুধু চুরি করে লেবু পাড়তে গিয়ে আঙুলে কাঁটা বিঁধে , রক্ত চুঁইয়ে যায় ।
৩
শ্যামছায়া আলোর মাঝে কত সময় পেরিয়ে গেছে সে হিসেবের মধ্যে যাইনা কোনোদিন । কোত্থেকে জোঁক এসে তরতর করে উঠে আসে বুকের খাদে , সে কথাও দেখতে পায়না কেউ – কেঁচোর বুদবুদের মাঝে খননের কাদা মাখা সময় নিয়ে মূলরোম বিস্তার করে চলে বাঁচার অধিকার , তারই সুকোমল সুবাসে বিস্তারিত বৃক্ষগুলির পরম্পরা , খড়কুটো ঝরাপাতার আটপৌরে পরাণের সারমর্মটি মাখি । নিদারুণ প্রণয়ে হয়ে যাই শেওলা মাখা উলঙ্গ ; কাতর । ছায়া ছায়া ডোবার কচুরিপানা বাতাস ছুঁয়ে গেলে হয়ে যাই ভীষণ কাঁপন ।
৪
আলো ফোটার পরে ঝুঁকে পড়ে বাঁশপাতা । সারারাত জেগে থাকার পর উজান নিয়ে জিয়ল মাছ – একা পড়ে থাকা ডোবাটির ভিতর শরীর লুকায় , সেও দ্বীপ আবিষ্কারের পথ । এ পাড়ায় কোনো দিন আসেনি ভাস্কো দা গামা । কাদা মেখে কতজন হয়ে যায় মাছরাঙা , ছোঁ মেরে উড়ে গেছে সহজ ঝোপের গভীরে । সে অপেক্ষায় শুধু চোখের ধূসর । জড়ানো লতার সুখে কয়েকটা ফড়িং উড়ে গেলে গড়িয়ে যায় বিষ পোকার সঙ্গমকাল – মেঘ আসে – নিছক বৃষ্টি নিয়ে ঢেকে দেয় সমূহ রাতের নক্সাবেলার জয়। শেষের মৃত ঘাসের ইচ্ছেরা মাটির ক্ষত ছুঁয়ে সমর্পণ করে অনুচ্চার ; তৃষ্ণার্ত সুর ।
৫
লম্বাগাছের গা থেকে ভেসে আসে নির্জন বাতাসের গন্ধ , কোনো গোপনীয়তা নেই , নাভি থেকে অতৃপ্তি গড়িয়ে যায় কালো মাটির ফাটলে – ভুলে গেছি পারাপার । ছন্দময় অবিচ্ছন্ন ডালপালায় বৃষ্টি হলেই বেঁচে থাকার জলে সমস্ত সংক্রান্তি । যেমন জীবন থাকে – আদিগন্ত বিমল আকাশ। গাইবার নয় এই স্বরলিপি , সেকথা জানে এই মৌরীদ্বীপ – রোদ জলের শীর্ণতর অন্ধকার সবুজ নিয়ে এ সময় মৃত্যুসাধ আশ্রয় পায় নাড়ি ছেঁড়া কূহক প্রহরে –