উপমহাদেশীয় এক লাটিমে আমরা বসে আছি, সুতো হাতে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং রাষ্ট্রগত দর্শন
পূঁজি করে সস্তা দামে বিকোচ্ছে ওরা আমাদের এই ঝুলন্ত উঠোনের বাজারে
মাঝখানে নিওডিমিয়াম বোরন আয়রন, ভিজ্যুয়াল ডিসপেন্সারিতে ক্রোমাটিন কোষ
বেয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে আরো দুটো চরিত্র-
আনিনিভা পোরলভস্কায়া
মীরা নায়ার
নেমসেক দেখিনি, রিলাক্টেন্ট ফান্ডামেন্টালিস্ট আমি-
আমাকে বুঝিও না গতজন্মে হরিণ হয়ে দৌড়েছিলাম কি না তোমার এইসব ইউক্রেনীয় আয়োজনের দিকে
দূর থেকে কেবল
চোখের তাপে আশপাশের রাস্তা পরিষ্কার গ’লে যাচ্ছিল, এইবার-
তুমি পথ চলতে পারছ ক্রোমাটোগ্রাফিক রঙ নিয়ে,
কি সব হিজিবিজি আঁকছি তোমার উরুতে, নীল সাপ হয়ে কেবল প্রোটোকল ভাঙবার নেশায়
দূরতম কিছু লোভ এপাশ-ওপাশ করে এবার ঘুমুবে
সাবধান
আরো সতর্ক নাকে তুমি এইবার ঘ্রাণ শুঁকে নাও কাউন্ট অফ মন্টেক্রিস্টো,
আরো খানিকপথ পেরোলে তুমি জানবে বোধিবৃক্ষের ফল খেতে কেমন।
উফ এই হাত চেপে ধরো, খুব করে এইখানটায় পুঁতে দাও কয়েকশো কোটি আলো,
জিভ বেয়ে নামাও শর্বরী তোমার, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হউক দেহ এই, না লাগুক ভালো-
তবু এই হাত চেপে ধরো, এই ঠোঁট-আঙুল কামড়ে ছিন্নপত্রের মতন, বেয়নেটে নত করে রাখো শৈবালদাম
লজ্জায় আরো নির্লজ্জ বোধের মতন গ্রাস করো আমাকে,
আলজিভ খ’সে পড়–ক পৃথিবীসহ উন্মত্ত প্রণাম-
উফ এই হাত তবু, রক্তকোষ জমাট বাঁধুক, রতœনীড়, রোখ চেপে কবাট বন্ধ করে দাও, যেন-
নেবে না ভেতরে আর, দরোজায় কনুই ঠেসে
হেলায় পরে নাও বর্ণান্ধ আলখাল্লা
যেন বীভৎস গল্পের তুবড়ি ছুটবে আর ওরা গাইবে রঙ নেই রঙ নেই বলে
যেন এই পরমাণু সৃষ্টি করেছিল প্রাচীন জোঁক, নতুবা আল্লা
চুষে নেবে ধীরে অশ্বত্থ, অশ্বত্থামা
ভীম বীর বীরভূমে আমার কোনো শেকড় নেই, আমার কোনো জাত নেই, তবু ওরা ক্ষত্রিয়কুলে আমায় চেয়েছিল কেননা-
আমি এই জিভে, এই আঙুলে ফুসফুস বেধে খেলতে পারি কি সাবলীল
এক আগুন তবু নেভাতে গিয়ে তোমার যন্ত্রণা টের পেয়েছিলাম, তোমার শস্যে
মুখ দেবো তাই, ‘অতিদূর সমুদ্রের পর হাল ভেঙে যে নাবিক’
ফিরে আসবে, ফিরে আসেনি, কেননা
‘মুখোমুখি বসিবার’ শুধু তুমি ছিলে বলে, আমি ছুরি তুলে নিইনি, সত্যি বললে লোকে সহজে বিশ্বাস করতে চায় না তাই-
মাইলের পর মাইল বমি করতে করতে ফিরে এসেছি, যেহেতু সী-সিক হৃদপি-ে তুমি চুমু খাওনি
যেহেতু এই হাত চেপে ধরে বসে থাকোনি খানিকক্ষণ
যেহেতু খুব বেশি নেশা করলে আমি নিজেকে ভাবতে শুরু করি জ্বরাক্রান্তা এক রূপান্তরিত-লিঙ্গ
যেহেতু ফর্সা চেহারার ছেলেদের গায়ে এশিয়ান হাওয়া লাগে, সুগঠিত পেশিবহুল-
মেদ নয়, পেটের কাছে আমি দীর্ঘদিন শুয়ে থাকতে চাই যদ্দিন না শীতকাল আসে
আর একবার দু’বার তিনবার চুমু খেতে চাই, ঘোলা চোখে পৃথিবী দেখার আনন্দ কেমন হয়
আমি জানি না
আরো কতকিছু জানিনি এই বয়সে এসে, হরমোন প্রতিদিন বিকেলে শরীরচর্চা করতে করতে কোথায় হারিয়ে গেল আর-
হুট করে আমি টের পেলেম অন্য কোনো প্রাণী আমি, অন্য কোনো জর্নার মিউজিক, অন্য কোনো
রোদ্দুরের লোভে অন্য কোনো ¯্রােত যেমন
অন্য কোনো ক্লোভার লিফ আর বেগুনী রঙা অন্য কোনো রঙ
বড়বড় দু’টি দাঁত বের করে ক্রলিং করে এগোচ্ছি তোমার পিঠে চড়বো বলে- শিশু ভেবো না, এখন আমি
মাঠে লাঙল চালাতে জানি, বেশ যতœ করে বিছানা গুছাতে জানি, শিখে গেছি-
কীভাবে ধানের বীজ রুইতে হয়, কুমড়োর ফুলে
ডিম চুবিয়ে বড়া বানিয়ে আনলাম এই দেখো, তুমি খাও- ধীরে ধীরে
আর আমার দিকে তাকাও, এই আমার চোখে
গত বুধবার গরম তেলের ছিটে লেগে
ফুলে গেছে কেমন, ভেতরে তরল জলের মতন ওসব কি যেন- মনে হয় পুঁজ অথবা বিভীষিকা
কিংবা ব্যথা-যন্ত্রণা, কামনাও হতে পারে
যেহেতু আমি জানি না কিছুই, স্কুলে কেবল ইংরেজি অংকে হায়েস্ট পেতাম; তাই আজকাল
কবিতা লেখার বদলে কর্পোরেট মেশিনে খুঁজি শেয়ারের দর,
দ্রব্যমূল্যের দাম কেমন বেড়েছে এটাও জানি ভালো, পেঁয়াজের দাম
কেমন রঙের মতন দেখো!
রঙেরও আজকাল দাম অনেক, তাই চারুকলার সামনে হায়েনার মতন ঘুরেছি শুধু, ওরা ভর্তি হতে দেয়নি আমায়, যেহেতু
আমি কেবল তোমার ছবি আঁকতে পারি আর এই ক্ষুদ্র শরীরে দৃষ্টি বুলিয়েই কি চমৎকার বলে দিতে পারি
কোথায় কোন কোন আদিম হাওয়া লুকিয়ে আছে তোমার ভেতরে- তোমার বুকে
কবে কোন এক প্রতœতাত্ত্বিক চিহ্ন পাওয়া যাবে বলে শুনেছিলাম, উফ এই হাত দেখো-
কাঁপছে কেমন, যেহেতু আমি ছুটে এসেছিলাম মহেঞ্জোদারোর পানশালা থেকে
আমার গায়ের গন্ধ নিলে টের পাবে হাজার হাজার নারীর শ্লোক
শতাধিক পুরুষের কোদালে খোদাই করা এই আলতামিরা আমি
বিধ্বস্ত শোকের মতন মন্যুমেন্টগুলোয় তুরীয়ানন্দে প্র¯্রাব করে দিই রাগে, ওসব
বাষ্পচালিত শিল্পসমাজ দেখে আমি ফিরে আসি তোমার অরণ্যে-
তোমার অরণ্যে, কি বীভৎস এক অন্ধকার পেরিয়ে সম্মুখে কেবল ঝুলে রইল চন্দন
রাজহাঁস তবু পারিজাতের কেশর নিয়ে জেগে থাকে না সকালে, ভোরে-দুপুরে; আলোর
ভেদাভেদটুকু জানতে পারলে তুমি আর এমুখো হতে না জানি।