উদাস দুপুর ডানায় মেখে
প্রেমাহত পাখি—বর্ষাধারায়
হামাগুড়ি দিয়ে ওড়ে
ব্যথার পালকে মরমীগাঁথা স্বপ্ন লুকিয়ে
ঠোঁটে তুলে আনে ভাটির কলতান
বিকেলের উচাটনে
মায়াময় টান ফেরায়
নদী কান্তা সুরশ্রী
দুঃস্বপ্নের ঢেউ ভরা চোখ
নিসর্গ বোনে
পরাগ ফোটে ভেজা বাতাসে
আমাকে আচ্ছন্ন করে গোধূলির ক্যানভাস…
2024-11-15
কবি মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালীর ব্যথার পালকে মরমীগাঁথা স্বপ্ন কবিতাটি একটি গভীর বিমূর্ত কল্পনার জগতকে চিত্রায়িত করে। কবিতাটিতে বেদনাময় প্রেমের এক মনোমুগ্ধকর চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, যা প্রতীকী ভাষায় এবং প্রতিমার ব্যবহারে সুরভিত। কবি এই কবিতায় বেদনা, প্রেম, প্রকৃতি এবং স্বপ্নকে এক অদ্ভুত মায়াবী পরিবেশে একীভূত করেছেন।
উদাস দুপুর ডানায় মেখে / প্রেমাহত পাখি—বরষাধারায় / হামাগুড়ি দিয়ে ওড়ে —এই লাইনগুলো কবিতার শুরুতেই পাঠককে এক বিরহময় প্রেমের আবহে নিয়ে যায়। প্রেমাহত পাখি এখানে একটি প্রতীক, যা প্রেমের ব্যথাকে তুলে ধরে। বরষার ধারায় হামাগুড়ি দিয়ে ওড়া যেন প্রেমিকের মনের অভিব্যক্তি, যেখানে ভালোবাসার ব্যথা তাকে টেনে নিয়ে যায়।
ব্যথার পালকে মরমীগাঁথা স্বপ্ন লুকিয়ে / ঠোঁটে তুলে আনে ভাটির কলতান—ব্যথার পালকে গাঁথা স্বপ্নের এই চিত্রায়ণটি কবির অনুভূতিশীলতা ও স্বপ্নময় দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রকাশ করে। ব্যথাকে পালক হিসেবে উপস্থাপন করে কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে এই বেদনা ভারী নয় বরং এটি স্বপ্নের উন্মেষ ঘটায়। ভাটির কলতান এখানে প্রকৃতির সাথে এই অনুভূতিকে আরও দৃঢ়ভাবে যুক্ত করেছে।
বিকেলের উচাটনে /মায়াময় টান ফেরায়/নদী কান্তা সুরশ্রী—এখানে বিকেলের উচাটন এবং নদীর সুরশ্রী যেন কবির মনোভাবকে প্রতিফলিত করে। বিকেল এবং নদী; প্রকৃতির এই দুটি চিত্র প্রকৃতির সঙ্গীত এবং মানুষের আবেগের যোগসূত্রের দিকটি প্রকাশ করে। কবিতাটির মাধ্যমে কবি পাঠককে প্রকৃতির একটি চিরস্থায়ী আবেশে নিয়ে যান।
দুঃস্বপ্নের ঢেউ ভরা চোখ / নিসর্গ বোনে / পরাগ ফোটে ভেজা বাতাসে— দুঃস্বপ্নের ঢেউ এবং পরাগ ফোটার এই দ্বৈত চিত্রটি কবিতার আবেগঘন মুহূর্তকে স্পষ্ট করে। দুঃস্বপ্নের এই স্রোতে মানুষ যেমন ভাসে, তেমনি প্রকৃতির নিসর্গ এবং পরাগ ফুলের প্রতীকী সৌন্দর্য আশা ও সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে রয়ে গেছে।
আমাকে আচ্ছন্ন করে গোধূলির ক্যানভাস—শেষের এই লাইনটি গোধূলির মায়াবী রূপকে চিত্রিত করেছে। গোধূলির আলো এবং কবির কল্পনা যেন এক অপরূপ ক্যানভাসে মিলিত হয়েছে, যা পাঠককে আচ্ছন্ন করে। এই গোধূলির ক্যানভাস শুধু বাস্তবের নয় বরং এক কল্পনার জগৎকেও নির্দেশ করে, যেখানে কবির সমস্ত অভিপ্রায় ধরা পড়ে।
ব্যথার পালকে মরমীগাঁথা স্বপ্ন কবিতাটি গভীর বেদনা এবং কল্পনার মিশেলে গঠিত। কবি প্রতীকী চিত্র এবং অনুপ্রাসের মাধ্যমে এই কবিতাকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছেন। ব্যথা ও প্রেমের নিখুঁত সংমিশ্রণে কবি একটি আবেগপূর্ণ ভাষা এবং সৃজনশীল কল্পনা ব্যবহার করেছেন, যা পাঠকের মনে গভীর প্রভাব ফেলে।
মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালীর ‘ব্যথার পালকে মরমীগাঁথা স্বপ্ন’ কবিতাটি পাঠককে এক অনন্য আবেগজগতে নিয়ে যায়, যেখানে বেদনা ও স্বপ্নের মিলিত আখ্যান রয়েছে। কবিতাটি কেবল প্রেমের নয়, বরং বিরহের একটি নিগূঢ় প্রতিমূর্তি, যা আমাদেরকে প্রকৃতির রহস্যময় সৌন্দর্যের সাথে একাত্ম করে।
আলতাব হোসেন
সম্পাদক: আমাদের সুজানগর