1.5/5 - (2 votes)

প্রতিটা ভোরই বাসনার হলুদভেজা
গোধূলি পেরোয়, অতঃপর—
যাপন করে রাত্রির অফুরন্ত
নিস্তব্ধতা আর—নিয়তির অন্ধকারে
দীর্ঘ হবার স্বপ্ন ভাঙ্গে…

দগ্ধমুখ আয়ু বয়ে চলে নদীদীর্ঘ রাত্রি
নিখাদছটা’র সঙ্গম তৃষায়;
নিশি তাতানো ঠোঁটে উৎকীর্ণ করে রাখি
জ্যোৎস্না ভাঙার দুঃখ…

দীর্ঘশ্বাস বোঝাই শকট ছুটেই চলেছে
গীতল কান্নাগুলো ঠোঁট ভাঙলে
বেজে ওঠে নিরীহ জীবনের মৃদঙ্গ …।

guest
2 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
আলতাব হোসেন
আলতাব হোসেন
5 months ago

কবি মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালীর নদীদীর্ঘ রাত্রি কবিতায় গভীর ভাবনা এবং সত্তার নিঃসঙ্গতা অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। কবিতাটিতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এক ধরনের গূঢ় বিষণ্ণতা এবং জীবনযাপনের নিরন্তর প্রবাহকে কবির দৃষ্টিতে তুলে ধরেছেন। চলমান সময়, বাসনার অনুরণন এবং দীর্ঘশ্বাসের চিত্রায়ণ এই কবিতার মূল ভিত্তি।

কবিতার শুরুতে কবি বলেছেন, প্রতিটা ভোরই বাসনার হলুদভেজা গোধূলি পেরোয়, যেখানে ‘বাসনা’ শব্দটি ব্যক্তিগত চাহিদা, আকাঙ্ক্ষা এবং অন্তর্নিহিত স্বপ্নের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ভোর থেকে বিকেল এবং তারপর রাত্রির নিস্তব্ধতায় প্রবেশ করার এই প্রক্রিয়া জীবনচক্রের রূপক। কবি মানবিক বাসনাগুলোকে প্রকৃতির সঙ্গে একত্রিত করে যেন জীবনের পূর্ণতা এবং তার অসম্পূর্ণতাকে প্রকাশ করেছেন। বিকেলের হলুদাভ আভা থেকে রাতের অন্ধকারে প্রবেশের মাধ্যমে সময়ের নীরব, অথচ অনুভূতিপ্রবণ চলমানতা ফুটে উঠেছে।

রাত্রির অফুরন্ত নিস্তব্ধতা আর নিয়তির অন্ধকারে দীর্ঘ হবার স্বপ্ন ভাঙ্গে…—এই লাইনে কবি গভীর এক নিঃসঙ্গতার চিত্রায়ণ করেছেন। নিয়তির অন্ধকার এবং দীর্ঘ রাতের নিস্তব্ধতা মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, যেখানে মানুষ একা এবং নিরাশ্রয় বোধ করে। দগ্ধমুখ আয়ু বয়ে চলে নদীদীর্ঘ রাত্রি লাইনটিতে কবি বেঁচে থাকার দীর্ঘশ্বাস এবং কষ্টের ছায়া এক গভীর বিষাদের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন। নদীদীর্ঘ রাত্রি শব্দবন্ধটি নিঃসঙ্গ রাতের দীর্ঘায়ু এবং তৃষ্ণার প্রতীক, যা মানুষকে অবিরত তার জীবনপথে চলতে বাধ্য করে।

নিশি তাতানো ঠোঁটে উৎকীর্ণ করে রাখি জ্যোৎস্না ভাঙার দুঃখ… এখানে জ্যোৎস্নার আলো জীবনের ক্ষণস্থায়ী আনন্দের রূপকে প্রকাশ করেছে। কবি সেই আনন্দকে তীব্র দুঃখ এবং হতাশার সঙ্গে যুক্ত করেছেন। নিশি তাতানো ঠোঁট এবং জ্যোৎস্না ভাঙার দুঃখ এ ধরনের চিত্রায়ণে কবি যেন কেবল নিস্তব্ধ রাতের কথা বলছেন না, বরং জীবনের সেই মুহূর্তগুলোর প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলছেন, যা প্রাপ্তি এবং অভাবের দ্বন্দ্বে ভারাক্রান্ত।

দীর্ঘশ্বাস বোঝাই শকট ছুটেই চলেছে এই লাইনটি জীবনযাপনের প্রবাহকে বহন করছে, যা দুঃখের ভারে প্রতিনিয়ত চলছে। কবি এখানে জীবনযাত্রাকে এক দীর্ঘশ্বাসে ভরা শকট হিসেবে তুলে ধরেছেন, যা জীবনের ক্লান্তিকর পথে অবিরত চলমান। শকটের সঙ্গে কান্নার সুর মিশে এক ধীরগতি কিন্তু অনিবার্য জীবনের প্রতিচ্ছবি তৈরি করেছে। এছাড়া, নিরীহ জীবনের মৃদঙ্গ দিয়ে কবি বেদনা ও দুঃখের মধ্যে থাকা সুর এবং ছন্দের কথা উল্লেখ করেছেন, যা দুঃখময় হলেও জীবনের অন্তর্নিহিত রূপকল্প হিসেবে কাজ করে।

নদীদীর্ঘ রাত্রি কবিতাটিতে মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী গভীর জীবনবোধ এবং অভিজ্ঞতার এক শাশ্বত চিত্রায়ণ করেছেন। কবিতাটি দুঃখ, অভাব এবং জীবনচক্রের প্রতি একরকম আত্মসমর্পণ প্রকাশ করে। এখানে কবি মানুষের জীবনযাত্রার বহুমাত্রিকতাকে একটি গভীর অথচ সূক্ষ্ম বয়ানে প্রকাশ করেছেন, যেখানে বাসনা, হতাশা এবং আশার বিচ্ছুরণ পাওয়া যায়।

নদীদীর্ঘ রাত্রি কবিতাটি আমাদের গভীর মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ ও জীবনযাপনের দিকগুলোকে নতুনভাবে চিনতে সহায়তা করে। মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালীর এই কবিতা পড়তে গিয়ে আমরা জীবনের গভীরবোধ এবং দুঃখময়তা অনুভব করি। কবি দুঃখের সঙ্গে কেবল একটি খালি আবেগ নয় বরং তা একটি শিল্প, একটি জীবনযাপনের অধ্যায় হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, যা আমাদের জীবন ও অস্তিত্বের অন্তর্গত ভাবনায় অনন্য গভীরতা যোগ করে।

আলতাব হোসেন
সম্পাদক: আমাদের সুজানগর

আলতাব হোসেন
আলতাব হোসেন
5 months ago

চমৎকার কবিতা

Last edited 5 months ago by আলতাব হোসেন