বাংলা কবিতা, কুসুমলতা কবিতা, কবি হাসান জীবন - কবিতা অঞ্চল
Review This Poem

সেই মেয়েটি।
আমি তাকে খুব কাছ থেকে দেখেছি।
তার পায়ে কোন জুতা ছিলো না।
রমনার ঝোপে সে আসত প্রতি সন্ধ্যায়।
আমার পাশ দিয়ে নিঃশব্দে হেঁটে যেত।
কপালে লাল টিপ,
ঠোঁটে লাল লিপস্টিক,
আর সেই লাল শাড়িটা।
মেয়েটির খোঁপায় থাকত একটা রক্তিম জবা।
অন্ধকারে হেলে দুলে হাঁটত সে।
কখনো বা বেঞ্চে শুয়ে থাকত
‘কাস্টমার’ এর আশায়।

ওর সেই ডাগর ডাগর নিষ্পলক চোখে
আমি কোন সপ্ন দেখিনি কোনদিন।
ওর নিশ্চুপ মুখচ্ছবিতে দেখেছি অনেক প্রশ্ন।
জোৎস্নায়। ধবধবে সাদা জোৎস্নায়।
ওর কালো গাল বেয়ে পড়া অশ্রু
হয়ত আমি দেখতে পারি নি।
কিন্তু আমি দেখেছি। প্রায়ই।
কিছু নির্লজ্জ কার্তিকের কুকুরের কণ্ঠে ওকে শুনতে-
“এই মাগি, তোর ভাড়া কত?
বিশ হইলে আয়।
নাইলে থাহ্ক।
হালী বেইশ্যা।”

এই দুঃশ্চরিত্র সামাজিক অর্থনীতি,
ওর শরীরটা’কে মাপে বিশ টাকা মুল্যে।
আর যেই ফুলবাবু সমাজ,
দিনের আলোতে ওকে দেখলে নাক টিপে ধরে
গন্ধ লাগবে বলে।
অথচ, রাতের অন্ধকারে দেখেছি
তারাই ওর পাশে শোয়
তাদের কামনা মেটাতে।

আমি দেখেছি কত রাত কত বার
ওর কম দামী সম্ভ্রম, দর দাম হতে।
তবু, সেই নিঃষ্পাপ কুসুমলতা’কে আমি দেখেছি।
জীবনের মানে,
যার কাছে প্রতি রাতে রমনায় হাঁটা
মৃত্যু যার মুক্তি। আর সুখ?
যার কাছে বিশ টাকা।

কুসুমলতা’রও তো একটা স্বপ্ন ছিলো।
‘ছোট্ট একটা ঘরে,
অজস্র অভাব পাশে রেখে,
বিজলি বাতির নরম আলোয়
ধোঁয়া ওঠা গরম ভাতে, লবণের ছিটা।
সে। আর কেউ একজন তার। ‘ভা-তার’।
বেঁচে থাকার দুরন্ত চেষ্টায়।
সেই ছোট্ট একটা স্বপ্ন বুকে বেঁধে।’

অথচ আজও, প্রায় প্রতিটি রাত শেষে
প্রতিটি ‘সুবাহ্ সাদিকে’।
এই বৃদ্ধ বট গাছটার নীচেই,
আমার এই শান বাঁধানো বেদিমূলে এসেই,
সে যখন এলিয়ে দেয়,
তার বিধ্বস্ত নিথর এবং পাপিষ্ঠা শরীর।
রমনার ঝোপে জমে থাকা নিস্তব্ধ নীরবতার
বুক চিড়ে চিড়ে নিকট দূর থেকে ভেসে আসে তখন
সে পবিত্রতম আহ্বান-
“হাঁই-য়্যা আলাস্ সালাহ্।”

সেই মেয়ে ‘কুসুমলতা’।
সেই অজস্র কুসুম লতার মানুষ নাম ‘পতিতা’।
যাদের চোখে অশ্রু নেই।
মুখে কথা নেই।
মনে আবেগ নেই।
কেবল বুকের ভেতর একটা চাপা যন্ত্রণা
যার কোন মানে নেই।।

guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments