Review This Poem

৩৬টি দিন কি দীর্ঘ প্রতীক্ষার!
বাংলাদেশের আকাশ বাতাস রবাহুত
রক্তাক্ত এক জুলাই
৩৬টি দিন কি দীর্ঘ প্রতীক্ষার
মূর্তিমান স্বৈরশাসক
বিভীষিকার দেয়ালিকা
রুদ্ধশ্বাসের এক একটি দিন
রক্ত পথে ভাসছে বাংলাদেশ
আন্দোলন হুংকার জনসমুদ্রের স্রোত
৩৬ টি দিন কি দীর্ঘ প্রতীক্ষার
ক্রমেই ভারী হচ্ছে লাশের স্তূপ
বাতাসে শহীদি রক্তের ঘ্রান
ঘাতকের শরীরের কন্ঠের পঁচা দূর্গন্ধ
মসনদে নিভৃত স্বৈর পিচাশ
জুলাইয়ের দীর্ঘতর ৩৬ দিন
গোটা বাংলাদেশ রক্তে রঙিন
একটি মাস অথচ ৩৬ দিন কি অদ্ভুত না
ঈদের ছুটির পর শুরু হয়
ফের কোটা সংস্কার আন্দোলন
শিক্ষার্থীরা হয় একে একে জড়ো

১ জুলাই
তাই অর্থবহ ও গুরতর
সরাসরি আন্দোলনে না যেয়ে ওরা করে সংবরন
ওদের ৪ দফা দাবি উত্থাপন
বিক্ষোভ সমাবেশ ৩ দিনের কর্মসূচিতে
চলে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ

২ থেকে ৬ ই জুলাই
প্রতিবাদ আন্দোলন মহাসড়ক অবরোধ
ছাত্রদের শাস্তিপূর্ন কর্মসূচি ইশতেহার তরজমা
প্রশস্ত করে আন্দোলন আর রাজপথ

৭ থেকে ১০ ই জুলাই
প্রতিবাদী হয়তবা শহীদী মুভে চলে
‘বাংলা ব্লকডের’ ইশারা

১১জুলাই
জুড়ে পুলিশের হামলা মামলা
শুরু হয়ে যায় সরকারের গা জলা
টানা হেঁচড়া ত্রাস গুম নির্যাতনের কবলে শিক্ষার্থীরা

১২ জুলাই
ছাত্রলীগের দিকবিদিক মহড়া সন্ত্রাসী হামলা
ঘেরাও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া
চলে সংঘর্ষের উন্মুক্ত জনস্রোত

১৩ জুলাই
রাজশাহীর জনপদ জুড়ে রেলপথে জুড়ে বিস্তৃত অবরোধ

১৪ জুলাই
পদযাত্রা
যেন বেড়েই চলল আন্দোলনের মাত্রা
ঢাকায় গনপদযাত্রা
রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি পেশ

১৫ জুলাই
শিক্ষার্থীদের মুখে মুখে শ্লোগান
স্বৈরাচার স্বৈরাচার চাইতে গেলাম অধিকার
হয়ে গেলাম রাজাকার
চলল প্রতিবাদী হতাশাগ্রস্থ ছাত্র জনতার কাতরতা

১৬ জুলাই
নগ্ন পুলিশের তীক্ষ্ণ রথ
গগন বিদারী চিৎকার রক্তাক্ত রাজপথ
লুটিয়ে পড়ল আবু সাঈদসহ ৬ টি তাজা প্রান
বুলেট বৃষ্টি দেখল গোটা বাংলাদেশ
ছাত্ররা সারাদেশে কমপ্লিট শাট ডাউন ঘোষণা করে
গোচরে এল সরকারের বিভৎসতা

১৭ জুলাই
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নেট বন্ধ করে
গনহত্যার নীল নকশা বুনে স্বৈরাচারে

১৮ জুলাই
মীর মুগ্ধের মুখে শোনা যায় পানি লাগবে পানি
টিয়ারশেল ঝাঁঝরা করে তার চোখগুলি
তার পোড়া কপালও ছিদ্র করে পুলিশের গুলি
কয়েক প্লাটুন র ্যব বিজিবি মোতায়েন করে স্বৈরাচার
কেড়ে নেয়া হয় ২৫ জন ছাত্রজনতার বেঁচে থাকার অধিকার
হেলিকপ্টার থেকে গুলি বর্ষণের মত নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে

১৯ জুলাই
ছাত্রদের সর্বাত্মক অবরোধ চলে পথে পথে
মেলে ২৩ জন ছাত্র জনতার গুলিবিদ্ধ লাশের সন্ধান
৪ বছরের অবুঝ শিশু মাতৃপ্রত আহাদ হারায় তার প্রান

২০ জুলাই
কারফিউ জারি মাধ্যমে দেশবাসীকে জানানো হয় ঘরে থাকার আহ্বান

২১ জুলাই
৯ দফা দাবি জানিয়ে কমপ্লিট শাট ডাউন ঘোষণা আসে
সমন্বয়ক নাহিদের অবর্ননীয় নির্যাতনের বর্ণনা
বাংলাদেশ আবারো রক্তে ভাসে

২২ জুলাই
হামলার দায় বিএনপি জামায়াতের ঘাড়ে
দেশে জঙ্গি হামলা হচ্ছে বলে চলে হাস্যকর প্রচার প্রচারণা
সমন্বয়করা দেয় ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটামের ঘোষনা

২৩ জুলাই
আন্দোলনের মুখে কোটা সংস্কারের সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন আসে
গোটা বাংলাদেশ আনন্দে ভাসে
মুক্তি পায় মেধাবীরা

২৪ জুলাই
খুনি হাসিনা সাংবাদিকদের নিয়ে বসেন গোল টেবিল বৈঠকে ২০১ জনের প্রাণহানির খবর প্রকাশের পক্ষে
বাস্তব চিত্র আরো ভয়াবহ বিভৎস

২৫ জুলাই
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনর পক্ষ থেকে প্রদান করা হয় ৮টি বার্তা
ছাত্রদের আন্দোলনকে হাইজ্যাকড করা হয়েছিল বলে পুলিশের উদ্ভট কথাবার্তা

২৬ জুলাই
৩ সমন্বয়কে তুলে নেয় হয়
চলে অকথ্য অমানুষিক নির্যাতন
চলে আন্দোলন

২৭ জুলাই
সমন্বয়কদের তুলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ডিবির স্বীকারোক্তি
গুম নির্যাতনে জর্জরিত বাংলাদেশ কবে তার মুক্তি
ছাত্র জনতার একে একে দাবি পেশ
মসনদে সরকার তখনো বেশ‌

২৮ জুলাই
অস্ত্র মুখে স্ক্রিপ্টেড বিবৃতি আদায়ের জানানো হয় তীব্র নিন্দা
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা যেন ভিন্ন গ্ৰহের বাসিন্দা
আন্দোলন হয় আরো জোরদার জোরালো

২৯ জুলাই
বিক্ষুব্ধ ৭৪ বিশিষ্ট নাগরিক জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে
প্রতিটি ঘটনার তদন্ত দাবি করেন
এমন রক্তাক্ত বাংলাদেশের হাল ধরেন

৩০ জুলাই
প্রত্যাখ্যাত হয় সরকার ঘোষিত শোক দিবসের প্রহসন
সমন্বয়করা ডিবি অফিসে শুরু করেন অনশন
লাল রং ধারণ করেন লাল প্রোফাইলের ছবি ব্যবহার
করে গোটা বাংলাদেশ

৩১ জুলাই
ঘোষনা আসে মার্চ ফর জাস্টিসের সূচি
এবং রিমেম্বারিং দা হিরোস কর্মসূচি

১ ই আগস্ট (৩২ জুলাই)
জুড়ে চলে আন্দোলনের ভয়ংকর দিন-রাতগুলোর স্মৃতিচারণা
দেয়াল গ্ৰাফিতি, দেওয়াল লিখন, ফেস্টুন তৈরির উন্মাদনা
মৌন মিছিল গান নাটকের ছলে মৌন প্রতিবাদ
ইত্যাদি চলে দিনব্যাপী

২ ই আগস্ট(৩৩ জুলাই )
সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের আসে ডাক
সরকার নির্বাক
পুনরায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে
হত্যাযজ্ঞ আরষ্ট করে সরকার

৩ আগস্ট(৩৪ জুলাই )
সরকার পতনের এক দফা ঘোষিত হয়
সবার মুখে এক শ্লোগান,’ এক দফা এক দাবি হাসিনা তুই এবার যাবি।’
শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের প্রস্তাব দিয়ে বলেন গণভবনের দরজা খোলা আছে।

৪ই আগষ্ট(৩৫ জুলাই )
কারফিউকে বাতিল এবং
লং মার্চ টু ঢাকা ঘোষণা
একদিন এগিয়ে আনা হয়
১৫জন ছাত্র জনতাকে গুলি করে হত্যা করা হয় এ দিন

৫ই আগস্ট (৩৬জুলাই)
সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে
শাহবাগে জড়ো হতে থাকে
লক্ষ লক্ষ ছাত্র জনতার পদচারণায় মুখরিত শাহবাগ
আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হয়
শিক্ষার্থীরা গণভবনের উদ্দেশ্যে পদযাত্রা শুরু করে
কেঁপে উঠে স্বৈরাচাররের মসনদ
খুনি হাসিনা বেলা ২টার দিকে
পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান
অর্জিত হয় দ্বিতীয় স্বাধীনতা
সমাপ্ত হয় ইতিহাসের রক্তিম দীর্ঘতর ৩৬ জুলাই

guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments