জলরঙ ছবির মতো আমার গ্রাম—গোলাবাড়ি
যেন একজন দক্ষ চিত্রশিল্পীর তুলিতে গড়া; স্নিগ্ধতায় ভরা।
এ গ্রামের মাটির সোঁদাগন্ধের ভেতরেই আমার অস্তিত্বের বুনিয়াদ,
জীবনে প্রথম দেখা প্রভাত।
যেখানে ক্যানভাসের রঙের রেখার মতো—
সিঁথান ধরে চলে গেছে সর্পিলাকার পথ,
শস্যের ভেতরে লুকিয়ে থাকে স্বপ্নের শপথ।
যেখানে ক্রমাগত দৃশ্যকল্পের মতো—
বিলের অতল জলপিঠে নেচে বেড়ায় নীলচে মাছরাঙা,
বওলা ফলে লুকিয়ে থাকে ঢাউস ঘুড়ির ডানা।
ঋতুর পর ঋতু চলে যায়, আসে, গ্রামের চারপাশে;
উঠোনের পর উঠোন ভরে থাকে নাক্ষত্রিক মানুষে।
মাঠের পর মাঠ সবুজ ফসলের বুকে ঘুমিয়ে পড়ে পূর্ণিমার চাঁদ,
রূপারকাঠি বদলিয়ে নেয় আমাদের সাধ, আহ্লাদ।
গ্রামঘেরা নস্টালজিয়ায় এখনও—
বাজে লাঠিখেলার ঘুঙুর, জ্বলে উৎসবে হ্যাজাক আলো,
আঙিনায় ঝোলে রঙিন ঝালর, আংশিক সাদাকালো।
ভীষণ বেতফলের মোহ, কালোমানিক ক্ষুদেজাম
হিজল ফুলের কোরাস, অনুরণিত কুটুমপাখির গান।
নৈমিত্তিক আবর্তে রোজ—
গোধূলিবেলায় পাখির গানে ঘরে ফেরে প্রাণ
কাঠকয়লার ধোঁয়ায় ওড়ে রাতের সালুনের ঘ্রাণ
নলকূপ বেয়ে ওঠে তিয়াসা জুড়ানো জল
ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকে থামে দিনের কোলাহল
আমার এ গ্রাম, আমার অস্তিত্বের শেকড়ের নাম;
যেমনটা থাকে মাটির ভেতরে গাছের, জলের ভেতরে মাছের।