এগোতে , পিছতে , উঠতে , বসতে তোমরা যাকে শুদ্ধ বলো
আমিই গঙ্গা।
গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে শুরু করে পার হই জেলার পর জেলা
শুনি একটাই কথা
” গঙ্গা তুমি শুদ্ধ “।
সমস্ত বাংলাবাসী বলে ,
সমস্ত ভারতবাসী বলে
এমনকি সমস্ত পৃথিবী বাসীও বলতে থাকে
” গঙ্গা তুমি শুদ্ধ “।
শুনতে থাকি ব্রাহ্মণ ,বণিক ও মাতালের ভাষায় ;
শুনতে থাকি ইহলোক, ,পরলোক ও পাতালের ভাষায় সেই একটাই কথা
” গঙ্গা তুমি শুদ্ধ , গঙ্গা তুমি শুদ্ধ “।
নিয়মিত সূর্য ওঠার মতো আমায় তোমরা বিষ খাইয়ে দিচ্ছো প্রতিদিন।
আমায় তোমরা প্রতিটা পদক্ষেপে করে চলেছো দূষিত।
ছোট্ট শিশুর শরীরে আঁচর লাগলে ” কিচ্ছু হয়নি কিছু হয়নি ”
বলে তাকে ভুল বুঝিয়ে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো
আমি যাতে না হই ক্রুদ্ধ
সেজন্যই কি তোমরা বলো ” গঙ্গা তুমি শুদ্ধ , গঙ্গা তুমি শুদ্ধ “।
একদিন….
একদিন আমার গতিবেগ হয়ে উঠবে উন্মাদ ।একদিন আমার প্রতিটা স্পর্শ হয়ে উঠবে বিষাক্ত ।
একদিন সব বাঁধ ভেঙ্গে দিয়ে
কালকেউটের বিষাক্ত শরীর নিয়ে
মহামারী সাজে ছড়িয়ে যাব সমগ্র মানব সমাজে ।
যেরকম দিকে দিকে আছে আমার হাজার হাজার শাখা ,
মানব সমাজের ওপর দিয়ে বয়ে যাবে আরেকটা বিষ মাখা ।
তখন যেন বাতাসে না ভাসে সন্তানহারা মায়ের বুকফাটা কান্না
কিংবা অসহায় শিশুর আর্তনাদ।
তখনও যেন শুনতে থাকি আমার জয়জয়কার । শুধু আমার শুদ্ধতার জয়জয়কার।
যেন শুনতে থাকি ;
” জয় জয় জয় জগ পাবনী জয়তী দেব সরি গঙ্গ, জয় শিব জটা নিবাসিনী অনুপম তুঙ্গ তরঙ্গ “।
তখন এক ফোটা শুদ্ধ জলের জন্য যেন কেউ যুদ্ধ না করে।
কেউ যেন গালিগালাজ না করে তখন আমায়।
তখনও যেন সবার মুখেই শুনতে থাকি ;
গঙ্গা তুমি শুদ্ধ …
গঙ্গা তুমি শুদ্ধ …
গঙ্গা তুমি সর্বদাই শুদ্ধ ।।।